এই পৃথিবীতে কখনও কখনও এমন অনেক কাকতালীয় ঘটনা ঘটে যে –জন্য উচ্চ পর্যায়ের গোয়েন্দা সংস্থাকেও বিচলিত হয়ে উঠতে দেখা যায়। এমনই একটি ঘটনা ঘটে মহাশক্তিধর ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থা এম-১-৫-এ।

        ‘ডেইলী টেলিগ্রাফ’ পত্রিকার ঐতিহ্য বহুদিনের। পত্রিকাটি বিভিন্ন কারণে সর্বত্র সমাদৃত । পত্রিকার প্রচারিত সংবাদ থেকে প্রতিটি কলাম-বিশেষ করে শব্দ পূরণ ধাধার(ক্রসওয়ার্ড পাজ্‌জল) কলামটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। একবার-এই ধাঁধাগুলোর নির্ভুল সমাধান নিরাপত্তা কর্মচারীদের ও রীতিমত ভাবিত করে তুললো। ১৯৪৪ সালে মিত্রবাহিনীর গোপন পরিকল্পিত আক্রমণের দায়িত্বে নিয়োজিত নিরাপত্তা অফিসারগণ বেশ ধাঁধায় পড়ে গেলেন।

       বৃটেনের বিরোধী গুপ্তচর সংস্থার (কাউন্টার এস্‌পিওনেজ সার্ভিস) এম-১-৫     (MI-5) এর সভ্যরা লক্ষ্য করলেন যে এই শব্দ ধাঁধার কতগুলো সংকেত তাদের সামুদ্রিক আক্রমণে ব্যবহ্নত সঙ্কেতগুলোর সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে। তাদের দেওয়া এই সঙ্কেতগুলো কিভাবে বাইরে চলে যাচ্ছে-তারা ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছিলেননা।

        এই সংস্থা ওয়ান অব্‌দা ইউ,এস. এ-র বদলে ‘উটাহ্‌’(Utah) কথাটি ব্যবহার করতেন। ‘ওহামা’ (Omaha) – অথাৎ যে তীর ভূমিতে আমেরিকার সেনাবাহিনী নোঙর করবে-এ ধরণের কথা ও শব্দাবলী পত্রিকার শব্দ ধাঁধায় সঙ্কেত সুত্র হিসাবে এসে সংস্থার কর্মচারীদের মাথা রীতিমত গরম করে তুললো। ‘মালবেরী’ শব্দটি দিয়ে তারা বোঝাতেন ভাসমান বন্দরগুলোকে। রসদ সামগ্রী বহন করে এসে জাহাজগুলো বন্দরের যে স্থানে নোঙর করবে সেই স্থানগুলোকে তারা মালবেরী হিসাবে নামকরণ করেছিলেন। সবচেয়ে বেশী সন্দেহের উদ্রেক করে ‘বিগউইগ’ (Big Wig)সংকেত শব্দটি। এর উত্তর ছিল অভার-লোড (Over-load) –যাতে সমগ্র অপারেশনটিকেই বোঝায়। এই সংকেত শব্দগুলো কিভাবে শব্দ ধাঁধায় আসে ,মাথা ঘামিয়ে তারা এর কোন সমাধান খুঁজে পেলেন না।

These crossword clues nearly gave away the Day invasion.

     MI-5 হতবুদ্ধি হয়ে পড়লো ।সংস্থার সভ্যরা ভাবতে লাগলেন এই টেলিগ্রাফ পত্রিকার শব্দগুলো কি জার্মানিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসার জন্য সুকৌশলে জাল বিস্তার করেছে ? আসল কারণ খুঁজে বের করার জন্য সংস্থার রথী-মহারথীরাও রীতিমত তৎপর হয়ে উঠলেন। তারা দুজন উচ্চপদস্থ কর্মচারীকে সারে অঞ্চলের লিদারহেডে অনুসন্ধানের কাজে পাঠিয়ে দিলেন। লিওনার্ড.ড. ছিলেন একজন শিক্ষক । তিনি এই শব্দ ধাঁধাগুলো তৈরি করতেন। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হল।

    গুপ্তচর সংস্থার কর্মচারীরা সেখানে গিয়ে ড. এর কাছে জানতে চাইলেন, কেন তিনি সঙ্কেত সূত্রের জবাব হিসাবে নিদিষ্ট এই পাঁচটি শব্দই বেছে নিয়েছেন?

     মিঃ ড. ছিলেন একটু দাম্ভিক এবং বদ মেজাজিও । তার উপর তার বয়সও হয়েছিল। এতে তার অহমিকায় আঘাত লাগলো । তিনিও চটে গিয়ে পাল্টা প্রশ্ন রাখলেন, ‘কেন তিনি এই শব্দগুলি নেবেন না? কোন যুক্তিতে তিনি এগুলো ব্যবহার করতে পারবেন না? কেউ ত এ ব্যাপারে তার কাছে কৈফিয়ত তলব করবার অধিকারী নন। তিনি কোন শব্দ বাছাই করবেন- কোন্‌টা করবেন না, এর বিরুদ্ধে কোন বিধিনিষেধ থাকতে পারে কি? তার ইচ্ছানুযায়ী যে কোন শব্দ তিনি আইনত বাছাই করতে পারেন। এতে কারুর কোনরকম বাঁধা দেবার বা নাক গলাবার অধিকার ত নেই।

   ড. এর সততায় সংস্থার কর্মচারীগণ আশ্বস্থ হলেন। তারা বুঝতে পারেন আগামী আক্রমণের ব্যাপারে ড. এর কোন ধারণা বা জ্ঞানই নেই। তারা নিশ্চিন্ত হয়ে ফিরে এলেন।

     ড. এর  ক্রস ওয়ার্ড পাজ্জল বা শব্দ ধাঁধার সমাধানগুলো জীবনের অবাক করা কাকতালীয় ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয় এ কথা বুঝতে MI-5 হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।

একটি গোয়েন্দা নাটকেরও এভাবেই সেবারে যবনিকা পতন হলো।