প্রাচীনকালে এবং মধ্যযুগে সমাজে মানুষ কেনাবেচার একটি প্রথা ছিল । দাসত্ব বা হচ্ছে, একটি মানুষকে জোর করে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করানো এবং তাকে নিজের সম্পত্তি হিসাবে দেখা। এটি সাধারনত মানুষ কেনা- বেচার মাধ্যমে করা হতো, এবং এই প্রচলিত প্রথাটিকেই দাস প্রথা বলা হয়ে থাকে। তখন দাসপ্রথা নিয়ে রীতিমতো বানিজ্য হতো। দাস অথবা দাসী বর্তমান বাজারের পণ্যের মতই বিক্রি হতো। এখন যেমন জিনিষপত্র বেচা কেনার বাজার আছে অতীতেও দাসদাসী কেনা- বেচার জন্য আলাদা বাজার ছিলো। এই দাস মানুষটির নিজস্ব কোন স্বাধীনতা, ইচ্ছা, অনিচ্ছা কিছুই থাকতে পারবেনা, মালিকের হুকুম মতো সবকিছু করতে হবে। এমনকি মালিক না চাইলে সে বিয়েও করতে পারবেনা।

সাধারণত তখনকার দাসদাসীরা বেশির ভাগই ছিলো আফ্রিকান। আফ্রিকান দাসের মধ্যে হাবসি ও কাফ্রী ছিল বেশি। দাসদের দিয়ে দুই ধরনের কাজ করানো হতো, কৃষি কাজ এবং ঘরের কাজ। তখন সমাজে গুটি কয়েক দাস রাখা একটি সামাজিক মর্যাদার ব্যাপার ছিল। শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর ঘরেও দাস থাকতো। উচ্চ বিত্তরা তাদের দাসদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কৃষি কাজ করাতেন। যেমন— হালচাষ, সেচ এর পানি টানা, মাটি উর্বর করানো, গবাদী পশুর দেখাশোনা করা। নিদারুণ পরাধীনতার মধ্যে থেকেও এই দাসরা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে অত্যন্ত উঁচু মানের তুলা উৎপাদন করত।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে দাস দিয়ে তুলা চাষ

তারা দাস প্রথাকে জিইয়ে রাখতে চেয়েছিল নিজেদের স্বার্থে। তাদের ধারণা ছিল, দাস শ্রমিকদের কাছ থেকে শ্রমশক্তির পুরোটাই নিংড়ে নেয়া সম্ভব। দাসীদের সাধারণত উপপত্নি করে রাখা হত এবং তাদের সন্তানদেরও দাস হিসাবে রাখা হতো বা বিক্রি করা হতো। দাসত্বের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা প্রথম সমাজ হলো গ্রিক সভ্যতার সমাজব্যবস্থা। গ্রিক সভ্যতার সূচনা যিশুর জন্মের আনুমানিক দুহাজার বছর আগে মাইনোয়ান যুগে। হোমারের দুই মহাকাব্য ইলিয়াড এবং ওডিসির রচনাকাল আনুমানিক ৭৫০-৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। এই দুই মহাকাব্যে দাসত্ব এবং দাসপ্রথার টুকরো কিছু ছবি পাওয়া যায়।

প্রাচীন মিশরে   রাজা বা রানীকে ঘিরে থাকতো তার দাস-দাসীরা Image Source: studiu-biblic

কৃষি এবং শিল্প খাতে শ্রমের চাহিদা মেটানো হতো দাসদের দিয়ে। গ্রিকদের শিল্প যখন সমুদ্র পার হয়ে রফতানি শুরু হয় তখন দাসদের প্রয়োজনীয়তাও বেড়ে যায়। দাস বেচাকেনার জন্য ব্যবসা শুরু হয়। এথেন্সের দাস ব্যবসায়ীরা এশিয়া মাইনর, সিরিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে দাস আমদানি করত। ফিনিসীয় দাস ব্যবসায়ীরা নিজেরাই এথেন্সের বাজারে দাস নিয়ে আসত। সিরিয়া, মিসর, আরব প্রভৃতি দেশের সঙ্গেও এথেন্স এবং অন্য গ্রিক রাষ্ট্রের দাস ব্যবসা শুরু হয়। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে এথেন্সের অর্থনীতি পুরোপুরিই দাসশ্রমনির্ভর হয়ে পড়ে।

গ্রিক রাষ্ট্রের দাস

প্রাচীন রোম সভ্যতাতেও ছিল দাসপ্রথার প্রচলন। রোমান সাম্রাজ্যের বিজিত প্রদেশগুলো থেকে রোমে দাস সরবরাহ করতে হতো। প্রাচীনকালের অধিকাংশ বড়মাপের দাস বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৪০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৭০ অব্দের মধ্যে। অর্থাৎ রোমান সাম্রাজ্যের একটি বিশেষ পর্বে। খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে ক্রমাগত বিদ্রোহের ঘটনা ঘটতে থাকে। যেমন : খ্রিস্টপূর্ব ১৩৬-১৩২ সময়কালে সিসিলির প্রথম যুদ্ধ, ১৩৩-১২৯ সময়কালে এশিয়াতে অ্যারিস্টোনিকাসের অভ্যুত্থান, ১০৪ থেকে ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সিসিলির দ্বিতীয় যুদ্ধ এবং খ্রিস্টপূর্ব ৭৩-৭১ সময়কালে বিখ্যাত স্পার্টাকাসের বিদ্রোহ। তবে স্পার্টাকাসের পরাজয়ের পর এ মাপের দাস বিদ্রোহ আর ঘটেনি। , ইতিহাসের অনন্য নায়ক।

রোমে দাস বিদ্রোহী (স্পার্টাকাসের বিদ্রোহ)

প্রাচীন রোমের এই দাস বিদ্রোহী সম্পর্কে ফরাসি চিন্তাবিদ ভলতেয়ার বলেছেন ‘তাঁর যুদ্ধ ইতিহাসের একমাত্র ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ।’  ইতিহাসে তার প্রিয় চরিত্র কে? কন্যার এই প্রশ্নের জবাবে মহামতি কার্ল মার্কস উত্তর দিয়েছিলেন ‘স্পার্টাকাস’। স্পার্টাকাস ছিলেন একজন গ্লাডিয়েটর। গ্লাডিয়েটরদের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে পালিয়ে বিদ্রোহ করেছিলেন স্পার্টাকাস। দাসপ্রথাবিরোধী বিদ্রোহের তাৎপর্যময় দৃষ্টান্ত হাইতির দাস বিদ্রোহ।

হাইতির দাস বিদ্রোহ (১৭৯১-১৮০৩) হাইতির দাস বিদ্রোহ শুরু হয় ১৭৯১ সালের ২২ আগস্ট। ১৮০৪ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম হয় স্বাধীন হাইতির। ইতিহাসবিদ সিএলআর জেমস হাইতির দাস বিদ্রোহ সম্পর্কে বলেছেন, ‘ইতিহাসের একমাত্র সফল দাস বিদ্রোহ। হাইতির বিপ্লবের প্রভাব পড়ে ব্রিটেনেও। ১৮০৮ সালে ব্রিটিশ সরকার তাদের আটলান্টিক জোড়া দাস ব্যবসা বন্ধ করে দেয় এবং দাস প্রথা নিরুৎসাহিত করে ১৮৪৩ সালে অ্যাক্ট ফাইভ আইনের মাধ্যমে দাসদাসী প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়। ফ্রান্সে দাস প্রথার বিলোপ হয় ১৮৪৮ সালে। আমেরিকান লেখক অ্যালেক্স হ্যালি ‘রুটসঃ দি সাগা অব অ্যান আমেরিকান ফ্যামিলি’ উপন্যাসে নিজের পূর্বপুরুষের জন্ম ইতিহাস বর্ণনার মধ্য দিয়ে দাস প্রথার নির্মমতা, দাসদের করুণ জীবনের কথা তুলে এনেছিলেন আমাদের সামনে।

হাইতির বিদ্রোহ

এই উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় তুমুল জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘রুটস’, বিটিভির বদৌলতে আমাদের দেশের মানুষদের এটি দেখার সুযোগ হয় এবং সেই সূত্রেই কোন্টাকিন্টের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়। আমেরিকার ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় এই টিভি সিরিয়াল কাঁদিয়েছে এদেশের মানুষকেও। আবার আমেরিকান লেখিকা হ্যারিয়েট বিচার স্টো ( Harriet Beecher Stowe) তার উপন্যাস ‘আংকল টম’স কেবিন’-এর টমের কেন্দ্রীয় চরিত্রের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত মর্মস্পর্শীভাবে দাস জীবনের করুণ কাহিনী তুলে ধরেছেন, এই বইয়ে তিনি তুলে ধরেছেন তৎকালীন আমেরিকার দাসপ্রথা। কালো মানুষদের ওপরে সাদা মানুষদের নির্মম, অমানবিক অত্যাচারের কাহিনী। কি অসহনীয় জীবন তারা পার করেছেন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে।

আমেরিকা গড়ে ওঠে কালো মানুষদের অক্লান্ত শ্রমে,তা রা তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা দাসত্বের জীবন কাটাতো। ১৮৬০ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হন আব্রাহাম লিংকন। তিনি আমেরিকার পশ্চিমাংশে দাসপ্রথা প্রসারের বিরোধিতা করেন। ১৮৬১ সালের ১২ এপ্রিল শুরু হয় আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ। ১৮৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট লিংকন ‘দাসপ্রথাবিরোধী ঘোষণা’ জারির মাধ্যমে আমেরিকার দক্ষিণাংশের কনফেডারেট রাজ্যগুলোর দাসদের দাসত্ব মোচন করেন। ১৮৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর মাধ্যমে দেশ থেকে দাসপ্রথা বিলোপ করা হয়।

আব্রাহাম লিংকনের ‘দাসপ্রথাবিরোধী ঘোষণা’

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) দাসদের মুক্ত করে দিলে যে সওয়াব পাওয়া যায়, সে কথা অনেকবারই বলেছেন। তাঁর বিদায় হজের ভাষণেও দাসদের মুক্ত করে দেয়ার আহ্বান ছিল। তাঁর অতি ঘনিষ্ঠ সাহাবা হজরত বেলাল (রা.) ছিলেন একজন হাবশি ক্রীতদাস। তিনি মধুর কণ্ঠে আজান দিতে পারতেন। সুদূর আবিসিনিয়া থেকে ইসলামের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি মক্কায় এসেছিলেন। কলোনিয়াল দাসপ্রথা শুরু হয় পর্তুগীজ জলদস্যুদের মাধ্যমে, আফ্রিকা থকে দস্যুরা কালোদের ধরে নিয়ে ইউরোপে বিক্রি করত। পরে ইংরেজ ও অন্যান্য ইউরোপীয়রাও এই ব্যবসায় জড়িত হয়। এমন হত যে, হাজার খানেক ক্রীতদাস নিয়ে নৌজাহাজ রওনা দিয়ে ৫০০-এর কম দাস আমেরিকা গিয়ে পৌছাত। জাহাজে ক্রীতদীসদের কাত হয়ে শুতে হত, চিত হয়ে শোয়ার জায়গা ছিল না। নিউ ওয়ার্ল্ড বা দাস ছিল মুনিবের সম্পত্তি, বিনা পারিশ্রমিকে সে দাসকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারতো। সে সময় অনেকেই ঋণের দায় থেকে বাঁচতে দাসত্বকে বরণ করে নিতে বাধ্য হত। দাসের সন্তানও দাস বলে গণ্য করা হতো। যুদ্ধে পরাজিত হয়েও অনেকসময় দাসত্ব বরণ করতে হত। অমানবিকভাবে সারা জীবন খেটে মরতে হত তাদের। এ চক্র থেকে বের হওয়ার কোন সুযোগ ছিল না, যদি না তাদের মুনিব তাদের মুক্তি দেয়।

রাশিয়ার ইতিহাসে পূর্ব স্লাভ অঞ্চলের একটি দাসের বাজার। সের্গেই ইভানভের অঙ্কিত চিত্র।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী শাসিত বাংলাসহ সারা বিশ্বেই দাস কেনা বেচার জন্য বাজার গড়ে উঠেছিল। এ বাজারে আফ্রিকার কালো মানুষদের চাহিদাই বেশি ছিল। তাদেরকে জোর করে ধরে আনা হতো, আর বিক্রি করা হত ইউরোপের বাজারে। তখন সমাজে নিজের দাসকে হত্যা করা আইনসঙ্গত ছিল। দাসত্ববিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যান্টি স্ল্যাভারি ইন্টারন্যাশনাল দাসত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে একে ‘জোরপূর্বক শ্রম দেওয়া’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে এখনো ২ কোটি ৭০ লক্ষ দাস রয়েছে। এই সংখ্যা ইতিহাসের যে-কোনো সময়কার দাসের সংখ্যার তুলনায় বেশি। এমন কী প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাসে আফ্রিকা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আনা আফ্রিকান দাসের মোট সংখ্যাও এর প্রায় অর্ধেক।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসাব অনুযায়ী এখনো বিশ্বের ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ জোরপূর্বক শ্রম, দাসত্ব, ও দাসত্ব সংশ্লিষ্ট প্রথার কাছে বন্দী। সময়ের স্রোতে দাসপ্রথা একসময় বিলোপও হয়ে যায়। কিন্তু সভ্যতার গায়ে ক্ষতচিহ্নের মতো রয়ে গেছে এই অমানবিক প্রথার দাগ। দাসপ্রথা বিলুপ্ত হওয়ার কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নেই, একেক দেশে একেক দিনে দাসপ্রথাকে বিলোপ করা হয়ে থাকে। প্রাচীন দক্ষিণ এশীয় পণ্ডিত কৌটিল্য দাসপ্রথা তুলে দিতে তার সম্রাটকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। সম্ভবত এটাই দাসপ্রথা বিলোপের প্রথম উদ্যোগ। আর সর্বশেষ দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয় ১৯৬৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী ২ ডিসেম্বরকে পালন করা হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর দ্য এবলিউশন অব স্লেভারি’ হিসাবে। এদিন মূলত স্মরণ করা হয় সভ্যতা বিকাশে দাসদের অবদানের কথা, স্মরণ করা হয় গ্লানিময় এক প্রথার কথা। এখন দাস প্রথাকে মানব ইতিহাসের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসাবে বলা হয়। আধুনিক সমাজে সেই দাস প্রথা রদ করা হয়। ইউনেস্কোর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছর ২৩ আগস্ট আন্তর্জাতিকভাবে দাস বাণিজ্য স্মরণ ও রদ দিবস হিসেবে পালিত হয়। তবে এখন আমাদের কাছে দাস প্রথাকে যত অদ্ভুতই মনে হোক না কেন, এক সময় এটিই ছিল স্বাভাবিক। আধুনিক সমাজে সত্যিই কী দাস প্রথার বিলোপ ঘটেছে? সমাজবিদরা বলছেন, দাসপ্রথার রূপান্তর ঘটেছে কিন্তু তা সমাজে আজও বিদ্যমান। এই দাসের বেশির ভাগই ঋণ শোধের জন্য দাসে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী মহাজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে সঠিক সময়ে তা শোধ দিতে না পারায় দাসে পরিণত হতো। এদের মধ্যে কিছু আছে যারা কয়েক প্রজন্মের জন্য দাস।

আধুনিক দাসত্ব-বিবৃতি

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বললেন, মানুষের সুবিধাবাদী চরিত্রের কারণে দাসপ্রথা সমাজ থেকে নির্মূল হয়নি। হবেই এটা জোর দিয়ে বলাও যাচ্ছে না। যদি সরকার মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে। তাহলে দাসপ্রথা কমে আসার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেকের ঘরে ঘরে দাস রয়েছে। আমরা যাদের কাজের লোক বলি। আমরা ঘুম থেকে ওঠার আগে তারা বিছানা থেকে ওঠে, শুতে যায় আমরা শুতে যাওয়ার পরে। তাদের কাজের জন্য কোন ঘণ্টা নাই, নাই নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো, ছুটি নেই। অনেক বাড়িতে তাদেরকে ভালোমত খাবারও দেয়া হয় না। অনেকে নিজেদের জন্য দামি চাল আর কাজের মানুষদের জন্য কমদামের চাল বরাদ্দ করেন। এসবকিছু প্রকারান্তরে দাসপ্রথার কথাই মনে করিয়ে দেয়। আমরা তথাকথিত শিক্ষিত শ্রেণী এ নিয়ে কোন প্রতিবাদ করি না। কারণ তাহলে আমরা সুবিধাবঞ্চিত হবো। তাই এই প্রথা বজায় থাকছে। তাই বলাই যায় দাস প্রথা সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়নি।দাসপ্রথা এখনও রয়েছে কিন্তু একটু অন্যভাবে।এখনকার কাজের লোকেরা ক্রীতদাস নয়, ইচ্ছা করলে কাজ ছেড়ে চলে যেতে পারে কিন্তু তাদের প্রতি আমাদের সভ্য সমাজের আচরন মনে করিয়ে দেয় সেই দাসপ্রথার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনা শেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু মনে করিয়ে দেয়, কালোদের প্রতি সাদাদের এখনও কি তীব্র ঘৃনা! পুলিশ যখন ফ্লয়েডকে হাতকড়া পরিয়ে হাঁটু দিয়ে কন্ঠনালী চেপে ধরে তখন সে বারবার বলতে থাকে ‘’আমি শ্বাষ নিতে পারছি না’’ কিন্তু পুলিশ তার নির্যাতন থামায়নি। দাসপ্রথা চলার সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ ছিল খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এখন দিন বদলে গেছে তাই জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর তার হত্যার প্রতিবাদে পুরা যুক্তরাষ্ট্র বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

জর্জ ফ্লয়েড

তথ্যসূত্র

The Daily Ittefaq

উইকিপিডিয়া