মুঘল শিবির-নীতিতে দুধরণের শিবির পাতার রীতি ছিল ক) ছোট ছোট কাজে বেরোনো যেমন শিকার করা, উৎসব অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া, শুধুই প্রাসাদের বাইরে নদীর তীরে বা পরিকল্পিত বাগানে রাতের পর রাত আনন্দে কাটানো ইত্যাদির শিবির আর খ) বিশালাকায় শিবির যেমন দূর প্রদেশে প্রশাসনিক বা রাজকীয় ভ্রমণ বা যুদ্ধযাত্রা। আমরা এখন যে শিবির ব্যবস্থার আলোচনা করব, সেটা মূলত দ্বিতীয় শ্রেণীর।

১৭০০ শতকের জয়পুরের শিবির

মুঘল শাহীর এক একটা বড় শিবিরে ৫ লক্ষ মানুষ অবদি থাকত। এ ধরণের শিবির থেকে সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক/সামরিক কাজ চালানো হত। সম্রাটেরা তাদের রাজত্বকালের ৪০% সময়ই শিবিরগুলোয় কাটাতেন। ফলে শিবির ব্যবস্থাপনা, তার নান্দনিকতা, তার স্বাচ্ছন্দ্য, তার সামাজিকতা ইত্যাদি নিয়ে মুঘল ক্ষমতা এবং স্বাভাবিকভাবে প্রশাসন বিশেষভাবে মাথা ঘামিয়েছে।

আইন-ই-আকবরির মুঘল শিবিরের পরিকল্পনা

মুঘল শিবিরকে সম্বোধন করা হত মহামহিমের শিবির অথবা বিজয়ীদের শিবির নামে। স্টিফেন ব্লেক শাহজাহানাবাদ ১৬৩০-১৭৩০ বইতে বলছেন, মুঘল শিবিরগুলো ছিল ফতেহপুর সিক্রির চলন্তিকা সংস্করণ, অর্থাৎ ফতেহপুর সিক্রি নগর পরিকল্পনার জবাব বা প্রতিবিম্ব। আকবরের পরিকল্পনায় তৈরি ফতেহপুর সিক্রি আজ অতীতের ধ্বংস স্তুপ, কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখনন ছাড়াও আবুল ফজলের পরিকল্পনায় মুঘল শিবিরের যে নকশা আমরা আজ পাচ্ছি, সেখান থেকে আমরা কিছুটা হলেও ফতেহপুর সিক্রির নগর পরিকল্পনা আন্দাজ করতে পারি।

মধ্য এশিয়ার চামড়া দিয়ে ঘেরা মুঘল তাঁবু এবং শিবির ওর্দু। তাঁবুর নাম ট্রেলিস বা উর্ত (trellis or yurts tents)

মুঘল শাহী বড় শিবির টহলে বেরোলে রাত কাটানোর জন্যে যে শিবির তৈরি করা হত, তার বর্ণনা দেওয়া গেল ‘পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে ১৪০০ মিটারব্যাপী কাপড়ের বিশাল পাঁচিল তৈরি করা হত। তার মধ্যে থাকত হাজারে হাজারে তাঁবু। তাঁবুগুলোর প্রধানতমটি ছিল শাহী ঘেরাটোপের মধ্যের মূল সম্রাট এবং তাঁর ব্যক্তিগত দরবার কাঠামোর তাঁবু। সেই অঞ্চলটি শিবিরের পূর্ব দিকের মধ্যিখানে থাকত। একমাত্র তাঁর তাঁবুই ছিল দোতলা আর টকটকে লাল রঙের — নাম গুলালবর। সম্রাটের দোতলা তাঁবুর পাশেই থাকত শাহী জেনানা তাঁবু। এর বাইরে থাকত খাস আর আম দরবার চালানোর জন্যে একটি অস্বাভাবিক বড় শামিয়ানা। আর ছিল অভিজাতদের জন্যে বাসস্থান বহর। শাহী সম্পর্ক এবং সাম্রাজ্য পরিচালনার কাজে শাহী পরিবারের সঙ্গে নানানস্তরে সম্পর্কযুক্ত অভিজাতর জন্যে মুঘল থাকবন্দী অনুযায়ী তাঁবুর নির্দিষ্ট অবস্থান নির্ণীত হত।

গুলালবর

সামগ্রিকভাবে কেন্দ্রিয় কাঠামোকে কাঠামোকে শাহী ঘেরাটোপ বলা হত। এই ঘেরাটোপের বাইরে অন্যান্য অভিজাত এবং সেনাবাহিনীর আমলাদের বাসস্থান ছিল। আর ছিল বিশাল প্রশাসনিক কাঠামো চলার উপযুক্ত ঘেরাটোপ রসুই, আস্তাবল, অস্ত্রাগার, পেশাদারদের জন্যে নানান কারখানার তাঁবু ইত্যাদি। সুদে অর্থ খাটাবার জন্যে স্রফেদের তাঁবু আর ব্যবসায়িদের দোকানপাটের জন্যে তাঁবু ছাড়া বাকি এলাকায় সৈন্য ঘেরা থাকত। শিবির এত বড় ছিল যে এখানে অস্থায়ী টাঁকাশাল চালাতে হত। বড় বড় মুঘল শিবির থেকে মুদ্রা জারি করা হয়েছে। আকবরের সময় কম মূল্যমানের তামার মুদ্রা, দাম, শিবিরের কাছাকাছি নামি শহরের নাম খোদাই করে জারি করা হয়েছে। শাহী তাঁবুগুলোর গুরুত্ব এবং কেন্দ্রিকতা বোঝাতে শিবির থেকে জারি করা বেশি মূল্যমানের সোনা-রূপোর মুদ্রায় শিবিরের স্থানোল্লেখ করে লেখা থাকত ‘Struck At The Camping Grounds Of Good Fortune’ এবং ১৫৯১-১৫৯২ সালোল্লেখ করে বলা হত ‘Seat of the Caliphate’।

মুঘল তাঁবু আর শিবিরের ড্রয়িং

শিবিরের বর্ণনা

মুঘল শিবিরের তাঁবু খাটানোর ছক

১, ২) মূল প্রবেশপথে দুটি তাঁবু

৩) নাকাড়া বাদক এবং সঙ্গীতকারদের মঞ্চ

৪, ৭)  আম এবং খাস দরকার

৫) সম্রাটের জন্যে দোতলা তাঁবু

৬) শাহী হারেম

৮) অভিজারদের তাঁবু

৯) প্রশাসনিক এলাকা এবং অন্যান্য কাঠামো — আস্তাবল, গোলাবারুদের গুদাম, দক্ষ এবং বিশেষ কাজের উদ্দেশ্যে তৈরি কারিগর কারখানা, রান্নাঘর

১০) মসজিদ

১১) শহর বাজার এলাকা

১২) মশালের স্তম্ভ

১৩) টাঁকশাল

১৪) অন্যান্য অভিজাত এবং সেনাবাহিনীর তাঁবু

১৫) ঝরোখা জানালা

আকাশ প্রদীপ/আকাশ-দিয়া

শিবির আর তাঁবু

যে সিপাহির পরনে শুধু একটা সুতির কাপড় আর হাতে দুটি লাঠি, তারও তাঁবু বরাদ্দ ছিল। নিচু চাঁদোয়া রাউতি থেকে বিশাল শাহী তাঁবু — শিবিরে অগুণতি তাঁবু খাঁটানো হত। আইনইআকবরিতে ১২টি আলাদা আলাদা তাঁবুর নাম উল্লিখিত হয়েছে। গুলাবর খাঁটানো হত ঘেরাটোপের মধ্যে। সরপর্দা — পর্দা, তাঁবু নয়। কিছু তাঁবুর নাম সামিয়ানা। এর পুরোনো ব্যবহার আজও একইরকম; মুসাফির বার্নিয়ে খরগার নাম উল্লেখ করেছেন, এগুলো একটি বা দুটি দরজাওয়ালা ভাঁজকরা তাঁবু। তিনি এগুলিকে ক্যাবিনেট আখ্যা দিচ্ছেন। মনে হয় এগুলো বড় তাঁবুর ভিতরে খাঁটানো ছোট তাঁবু। সম্রাট আর বিখ্যাত অভিজাতদের জন্যে একের বেশি তাঁবু থাকত, একটি যখন তারা ব্যবহার করছেন, অন্যটি পরের শিবির পড়বে, এমন এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হত। যে তাঁবুগুলোর সেট পরের শিবিরে ব্যবহারের জন্যে পাঠানো হচ্ছে, সেগুলোর নাম পেশকাশ।

দোতলা তাঁবু

সম্রাটের তাঁবু পাতার পদ্ধতি বিশদে বলা হয়েছে আইনইআকবরিতে। শিবিরের মধ্যিখানে থাকবে ক্যানভাস কাপড়ের শাহী তাঁবু; শিবিরটির মোট দৈর্ঘ ১৫৩০ গজ এবং এর একপঞ্চমাংশ প্রস্থতে। মুখটি থাকবে পরে যে দিকে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে সেই দিকে; ঢোকার মুখে নাকাড়াখানা, পরেরটি আমদরবার তাঁবু, তৃতীয়টি ব্যক্তিগত বা খাসদরবার, চতুর্থটি সম্রাটের শোয়ার জন্যে ব্যবহৃত তাঁবু। সম্রাটের তাঁবুর পিছনে থাকত আকবরের মায়ের তাঁবু এবং অন্যান্য মহিলাদের তাঁবু, তাকে ঘিরে চারটে রক্ষী তাঁবু। সম্রাটের তাঁবুর দুপাশে থাকত কারখানা আর প্রয়োজনীয় নানান সরঞ্জাম আর গোলাবারুদের তাঁবু। তার পাশে থাকত নানান পশুর আস্তাবল। থাকত গাড়ি, বিভিন্ন নথি, সাধারণ অস্ত্রশস্ত্রের তাঁবু আর চিতা শিকারের নানান সরঞ্জাম। জাহাঙ্গিরের শিবিরের বিশদ বর্ণনা পাওয়া যাবে ব্রিটিশ বাণিজ্য প্রতিনিধি টমাস রো’র জার্নাল থেকে নেওয়া কেম্ব্রিজের ‘ওয়ার’ ভূমিকায়। রাজকীয় দূতের মনে শিবিরের ব্যপ্তিটি বড় ছাপ ফেলেছিল।

ছুবিন রাওতি

শিবির পাতার পদ্ধতির বিশদ বর্ণনা বার্নিয়ের লেখায় পাওয়া যায়। প্রথমে শ্রমিকেরা এলাকার উঁচু-নিচু এলাকা সুসর করত। এবারের কাজ মীর মঞ্জিলের। তিনি প্রথমে সম্রাটের তাঁবুর জায়গা চিহ্নিত করতেন। এটি ৩০০ বর্গ পেস জুড়ে থাকত। তাঁবুর অঙ্গন ঘিরে থাকত ঘেরাটোপ যার নাম কানাত, সাত থেকে আট ফুট উঁচু, প্রতি দশ পেস অন্তর ভেতরে বাইরে দুপাশেই মাটিতে খুঁটি পুঁতে, কোণা করে পর্দার মাথা থেকে কাছি টেনে মাটিতে পোঁতা খুঁটিতে বাঁধা হত। একে ঘিরে পরিকল্পিত হত গোটা শিবির। ঢোকার পথটা ছিল শিবিরের ঠিক মধ্যিখানে; যোগচিহ্নের মত রাস্তার দুপাশে শিবির ছড়ানো। প্রত্যেক দিকে দুটি দুর্দান্ত সজ্জিত তাঁবুতে জিন পরানো এবং চোখ ধাঁধানো সজ্জায় সজ্জিত ঘোড়া রাখার ব্যবস্থা থাকত [এটা অবশ্যই আস্তাবল নয়]। এই তাঁবুটার নাম জিলাউ। ঢোকার পথের সামনে ফাঁকা জায়গা থাকত সেখানে বাজানোর জন্যে তৈরি থাকত নাকাড়াখানা, ডঙ্কা, তুর্য এবং ঝাঁঝ। এর সঙ্গে ছিল চৌকিখানা, সে দিনের জন্যে পাহারা দেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের তাঁবু।

সরপর্দা

শিবিরকে যোগচিহ্নে ভাগ করা রাস্তা ঘিরে থাকত শাহী বাজার। শাহজাদা এবং অন্যান্য অভিজাত, সম্রাটের তাঁবুর থেকে কয়েক মাইল দূরে তাঁবু ফেলতেন। প্রত্যেক অভিজাতর তাঁবু ঘিরে থাকত তার নিজের বাহিনী। রাস্তার পাশে বাজার বসত। তবে প্রধান অভিজাতর তাঁবুর দরজাটা সম্রাটের আমদরবারের দিকে মুখ করে তৈরি হত। বার্নিয়ে বলছেন শিবিরে প্রচুর ফাঁকা জায়গা ছাড়া থাকত। সম্রাট আলমগিরের শিবিরটির পরিধি ছিল ছয় মাইল। লম্বা লম্বা খুঁটিতে চামরি গাইয়ের লেজ ঝুলিয়ে রেখে বাজারটি চিহ্নিত করা হত। এই চুল দিয়ে পরচুলা তৈরি হত।

নামগিরা

শিবির ফেলার বর্ণনাটি হিস্টোরি অব মুঘল ডাইনাস্টি ইন ইন্ডিয়ায় François Catrou বলছেন The camp where this numerous army rested was laid out daily in the same manner, so far as the nature of the ground permitted. A great enclosure was roped off of square shape, and this was surrounded by a deep ditch. The heavy artillery was ranged from distance to distance and defended the approaches. The emperor’s palace was placed in the centre of the camp. This also was square in shape and the light artillery was disposed all round it. The tents of the generals, of a much less height than those of the emperor, were pitched in the different quarters of the camp. The sutlers and traders of all sorts had streets assigned to them. To sum up it may be said that Aurangzeb dragged in his train a travelling city as large and as peopled as his capital।

ওয়ানি খাস

কিছু কিছু তাঁবু, বিশেষ করে শাহী তাঁবু আর প্রশাসনিক তাঁবু ছিল বিশালাকৃতির। শাহজাহানের তাঁবুর নাম ছিল দিলবদিল (মহত্তম হৃদয়)। ১৭১১য় লাহোরে বাহাদুর শাহ’র তাঁবুটা খাটাতে পাঁচশ কারিগর একমাস সময় নিয়েছিল এবং বেশ কয়েকজন মারাও যান (মীরাট-উল-ইস্তিয়াহ)। ৪ শাবান ১১২৮, ১৬ সেপ্টেম্বর ১৭১১ কামওয়ার খানএর তাঁবু তৈরির খরচ পড়েছিল ৫০,০০০ টাকা। সায়েরউলমুতক্ষরিনের লেখক বলছেন মুঘল সম্রাটের তাঁবু সওয়া মাইল পরিধিওয়ালা এলাকাজুড়ে থাকত। বহু তাঁবুতে ২-৩ হাজার মানুষ স্বচ্ছন্দে বসতে পারত। বড় তাঁবুগুলো ৬ ফুটের কানাত দিয়ে ঘেরা। দুটি তাঁবুতে সারাক্ষণ পাহারাদার বসানো থাকত নিরাপত্তাবিধান করার জন্যে। এছাড়াও নানান ধরণের কারিগরের বসতি থাকত। কেম্ব্রিজের ‘ওয়ার’ ভূমিকায় নাজির জংএর শিবির ফেলার বর্ণনা আছে।

দেওয়ানিখাস

তাঁবুর রঙ, আঙ্গিক

সম্রাট, পুত্র, নাতিদের তাঁবু লাল রঙের কাপড়ের তৈরি হত। নাম খারওয়া। মোটা ক্যানভাস কাপড়ের তৈরি আল গাছের রঙএ শুকনো লাল রঙ করা। সম্রাটের পাশেপাশের তাঁবুর নাম ছিল গুলালবর। মুলক-ই-মুতলিক বা জামাদত-উল-মুলক-এর মত উচ্চপদাধিকারীদের লম্বা লম্বা ডোরাকাটা তাঁবু বরাদ্দ ছিল। একটা ডোরা লাল একটা ডোরা সাদা একে পাটাপাটি বলা হত — পাটি অর্থে ডোরা, মীরাট-উল-ইস্তিয়াহ। মুঘল সাম্রাজ্যের শেষের দিকের লেখকেরা এমন কিছু কথা বলেছেন যাতে মনে হতে পারে শাহী তাঁবুর বাইরে ডোরা থাকলেও থাকতে পারত। তারা বলছেন ডোরা দিয়ে অলঙ্কৃত করা হত। মীর আতিশের তাঁবুটি ঠিক শাহী দরজার পাশে পড়ত।

গুলালবর — বার্নিয়ে বলছেন সম্রাটের তাঁবুটা গুলালবর কাপড় দিয়ে তৈরি হত। হিন্দিতে গুলালের অর্থ লাল বর হল আটকানো anything in the nature of a wall which prevents entrance or passage through it। ফলে বিশ্বজুড়ে লাল তাঁবুকেই গুলালবর বলা হয়েছে। আকবরের আগে গুজরাটি রাজারা যে কাছি দিয়ে নিজেদের আশেপাশের অঞ্চল বাঁধতেন, তার নাম তানাব-ই-কুরুক (আক্ষরিক, বাধা দেওয়ার দড়ি)। আকবরের রাজত্বকালে কারখানায় গুলালবর তাঁবু পরিকল্পিত হল। বাঁশ আর বাঁশের কঞ্চিগুলো লাল রঙ করে চামড়ার দড়ি দিয়ে জালির মত বাঁধা হত। উচ্চতা ছিল ৩ গজ প্রায় ৮ ফুট এগুলি দুটো দরজার দুপাশে আর জেনানা তাঁবুর চারদিকে ঘেরা হত। এটাকে নিয়ে চাদরের মত করে শাহী তাঁবুও ঘেরা হত। নাম হল দৌলতখানা। বাইরের পরিখায় লাল পতাকা লাগিয়ে বাঁশের ডগায় আটকে উঁচুতে পতাকার মত তুলের ধরা হত। এটা ছিল সম্রাটের সার্বভৌমত্বের প্রকাশ (মীরাট-উল-ইস্তিয়াহ)।

জালি — জালির সঙ্গে শাহী অর্থাৎ সম্রাটের তাঁবুর সম্বন্ধ অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। জালি শব্দটা জাল থেকে এসেছে। ওপরের আলোচনা থেকে পরিষ্কার গুলালবরের আরেক নাম জালি। কিন্তু যে সব ইওরপিয় মুসাফির গুলাবর দেখেছেন, তারা কিন্তু বলেছেন সম্রাটের তাঁবু সাত ফুট উঁচু চাদর, কানাত থেকে ৫০ গজ দূরে ঘেরা থাকত। খুশহল চাঁদ বার্লিন পাণ্ডুতে গুলালবরের জায়গায় সালাবত-বর, মহিমান্বিত ঘেরা স্থান বলেছেন। শাহজাদাদের তাঁবুগুলি পুরোনো দিনের মতই কাছি, তানাবইকুরুব দিয়ে সুরক্ষিত থাকত (মীরাট-উল-ই-ইস্তিয়াহ)।

রাহকলা-বর — এটা ফিল্ডপিস বা বর, ঘেরা। শিবির ঘিরে প্রতিক্রমণ বিফল করতে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে যে নিরাপত্তা বেড়া দেওয়া হত, তাই রাহকলা-বর।