১৫০৮ খ্রীস্টাব্দের ৬ই মার্চ( ৪ জিল্ কদ্ ৯১৩ হিজরি) মঙ্গলবার রাতে নাসিরুদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ুন মীর্জা জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর জন্ম হয় কাবুলের এক দূর্গে।
তিনি পিতা বাবরের দিক থেকে তৈমুরের পঞ্চম অধস্তন এবং মা মাহিমা বেগমের দিক থেকে চেঙ্গিস খানের পঞ্চদশ পুরুষ। মুঘল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট যিনি ১৫৩০ খ্রীস্টাব্দ থেকে ১৫৪০ খ্রীস্টাব্দ এবং ১৫৫৫ খ্রীস্টাব্দ থেকে ১৫৫৬ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত দুই দফায় আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ভারতের উত্তরাঞ্চলে রাজত্ব করেছেন।

কাবুলের চরবাগে হুমায়ূনের জন্ম উদযাপন করেছেন বাবর; Image source: Wikimedia

সম্রাট বাবর একবার হুমায়ুনকে আগ্রা দূর্গে অবস্থিত ইব্রাহিম লোদির রাজধানী এবং কোষাগার দখল পাঠান। তিনি সফল হন এবং সেখান থেকে পায়রার ডিমের আকৃতির বিখ্যাত কোহিনুর হিরা ( যেটা আলাউদ্দিন খিলজি ভারতে এনেছিলেন) যার ওজন ছিল’আট মিসকাল্’এনে সম্রাট বাবরকে উপহার দেন।

বিখ্যাত কোহিনুর হিরা

সম্রাট বাবর যখন তাঁর খাস কামরায় হুমায়ুনের সাথে আলোচনা করতেন তখন বাইরে যে সব প্রহরীরা পাহারা দিতো তারা ছিল খোজা এবং বধির। তারা জন্ম থেকে তারা এরকম ছিলনা, সুস্থ- সবল খোজা প্রহরীদের কানের মধ্যে গরম সীসা ঢেলে তাদের বধির করা হতো যেন তারা কোন আলোচনা না শুনতে পায়। একবার হুমায়ুন কঠিন অসুখে পড়েন, সবাই যখন আশা ছেড়ে দিল তখন সুফি সাধক মীর আবুল কাশিম সম্রাট বাবরকে বললেন প্রান প্রিয় কোন জিনিস দান করলে হুমায়ুনের জীবন বাঁচতে পারে।

নাসির-উদ-দীন মুহম্মদ; Image source: Wikimedia

তিনি নিজেকেই উৎসর্গ করলেন পুত্রের জন্য, অসুস্থ ছেলের বিছানার চারপাশে ঘুরে ঘুরে তিনি আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করে ছেলের সুস্থতা চাইলেন।এরপর হুমায়ুন সুস্থ হয়ে উঠেন কিন্তু সম্রাট বাবর ছেলের ব্যধি নিজ শরীরে ধারন করে ১৫৩০ সালের ২৬ শে ডিসম্বর মৃত্যু বরন করেন। তার তিন দিন পর হুমায়ুন সিংহাসনে বসেন।
১৫৩০ খ্রীস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে যখন তিনি মুঘল শাষক হিসাবে দিল্লীর সিংহাসনে বসেন তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র বাইশ বছর। শাষক হিসাবে তখন তিনি ছিলেন সম্পূর্ন অনভিজ্ঞ।

হুমায়ুন এবং তাঁর মুঘল সেনাবাহিনী ১৫৫৩ সালে কামরান মির্জাকে পরাজিত করে; Image source: Wikimedia

মুঘল চিত্রকলার শুরু হুমায়ুনকে দিয়ে, তিনি ছবি আঁকতে ভালবাসতেন।প্রচুর পড়াশোনা করতেন,কবিতা লিখতেন, সুকুমার বৃত্তির চর্চা করতে তিনি খুব ভালবাসতেন।
তিনি বাস করতেন সম্পূর্ণভাবে তাঁর নিজের জগতে। জওহর যিনি সম্রাট হুমায়ুনকে পানি খাওয়ানোর দায়িত্বে ছিলেন তিনি তাঁর একটি জীবনী রচনা করেন। তাঁর বোন গুলবদনের পরে জওহরের লেখা জীবনীকে প্রামান্য হিসাবে ধরা হয়।

একবার তিনি বারো- তেরো বছরের এক কিশোরীকে সত্তুর বছরের এক বৃদ্ধের সাথে সতীদাহ হওয়া থেকে রক্ষা করেন। তখন এটা খুব একটা সহজ কাজ ছিলনা কারন এখানে ধর্ম একটা ঢালের মতো বাধা সৃষ্টি করছিল। সেই প্রতিকুল অবস্থায় তিনি মেয়েটির সাথে পরামর্শ করে তাকে তাঁর হাত থেকে বিসমিল্লাহ বলে পানি পান করতে বলেন এবং মেয়েটি সেটাই করে, ফলে তার জাত গেছে এই অজুহাতে তিনি মেয়েটিকে সেখান থেকে উদ্ধার করেন।

হুমায়ুন শেরশাহ্ সুরির কাছে পরাজিত হয়ে তাঁর রাজ্য হারিয়েছিলেন কিন্তু সাফাভি রাজবংশের সহায়তায় পনেরো বছর পরে সেগুলি পুনরুদ্ধার করেন। সম্রাট বাবরের মতো তিনিও তাঁর সাম্রাজ্য হারিয়েছিলেন কিন্তু পারস্য সাম্রাজ্যের সহায়তায় তিনি তাঁর রাজ্য ফিরে পান। বৈরাম খাঁ যিনি তাঁর সেনাপতি ছিলেন তিনি সম্রাট হুমায়ুনকে চরম দুঃসময়ে আগলে রেখেছিলেন ।

দিল্লিতে হুমায়ুনের সমাধি; Image source: Wikimedia