রথের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে ইতালিতে!!!
জি ভুল শোনেননি, আসলেই রথের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে ইতালির সে বিখ্যাত পম্পেই নগরীরতে। পম্পেই নগরীর নাম কমবেশি আমরা সকলেই শুনেছি। কেউ পম্পেই কে চিনি বিখ্যাত সিনেমা পম্পেই এর জন্য। কেউ হয়তোবা পড়েছি এডোয়ার্ড বুল লিটনের লেখা “The last days of Pompeii” উপন্যাসটির মাধ্যমে। এছাড়াও সত্যি বলতে কি! ইতিহাস নিয়ে কমবেশি যাদের নাড়চাড় রয়েছে, পম্পেই নগরীর নাম অবশ্য ই তাদের কাছে সুপরিচিত। তবুও চলুন আপনাদেরকে মনে করিয়ে দিই পম্পেই নগরীর কিছু কথা।
পম্পেই নগরী ছিল ২০০০ বছর পুরনো একটি অভিজাত নগরী। খ্রিস্টপূর্ব ৮০ শতাব্দী এই শহরটিতে রোমান সাম্রাজ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ভিসুভিয়াস পর্বত এর পাদদেশে নেপলস শহরের পাশেই নগরটি ছিল শিল্প বাণিজ্য করার অত্যন্ত উপযোগী। সেজন্যেই অতি অল্প সময়ের মধ্যে এখানে রোমান সাম্রাজ্যের শিল্প বন্দর গড়ে ওঠে। কয়েক বছরের মধ্যে এটিকে প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের জানালা উপাধি দেওয়া হয়। আধুনিক বিশ্বে এমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই তার সেই সময়ে সেই নগরীতে ছিল না। অনেক রোমান সাম্রাজ্যের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কর্মচারীরা এখানে বদলি হয়ে আসার চেষ্টা করত, ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়ী কাজে এখানে বসবাস করত এবং অনেক অভিজাত এবং ধনী শ্রেণীর অবসর সময় কাটানোর জন্য প্রিয় স্থান ছিল এটি। সুতরাং সমৃদ্ধি এবং সৌন্দর্যের সম্মেলনে পম্পেই নগরীতে উৎসবের আমেজ যেন চলতেই থাকতো।
৭৪ খ্রিস্টাব্দে ২৪ শে আগস্ট দুপুর একটার দিকে পুরো শহর যখন খাবার খেতে এবং আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত ঠিক সে সময়ে ভিসুভিয়াস পর্বত এ আগ্নেয়গিরিতে বিকট আওয়াজ হয়ে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। এর পার্শপ্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রচন্ড ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে পম্পেই নগরী এবং ভিসুভিয়াস পর্বত এর অন্য প্রান্তে থাকা হারকুলিয়াম শহরসহ পুরো এলাকা। সময়ের সাথে সাথে পর্যায়ক্রমে উত্তপ্ত হতে থাকে আগ্নেয়গিরির মুখ, বেরিয়ে আসতে থাকে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া। ৪৫০ মাইল বেগে ধেয়ে আসা চূর্ণ-বিচূর্ণ পাথর শিলা মেঘের মতো মারাত্মক আকারের প্রায় ৩৩ কিলোমিটার উচ্চতায় ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। প্রতি সেকেন্ডে ১.৫ মিলিয়ন টন উত্তপ্ত লাভা ছিদ্রযুক্ত গ্যাস নির্গত হতে থাকে।
সব মিলিয়ে এক নিমিষে সবকিছু গ্রাস করে ফেলে।অনেক গবেষকরা বলেন বিস্ফোরণের সময় সেখানে এত বেশি শক্তি ও তেজস্ক্রিয় তা নির্গত হয়েছিল যে তার পরিমাণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমা নাগাসাকি থেকেও শক্তিশালী ছিল। ১৬ থেকে ২০ হাজার মানুষজন বসবাস করতো ঐ এলাকায়। ১৩ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার আগ্নেয়গিরির নিচে পুরো এলাকার ৮০ কিলোমিটার ছায়ার নিচে চাপা পড়ে যায়।ঠিক একদিন এক রাতের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় পুরো এলাকা।১৭৪৮ সালে ফরাসি বিখ্যাত বুরব রাজবংশের সম্রাট চার্লস নেতৃত্বে পম্পেই নগরীর খননকার্য শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে পমপি নগরীতে প্রাপ্তবয়ষ্ক সর্বসাধারণ প্রবেশের অনুমতি পায়। প্রায় 2 হাজার বছর ধরে ভিসুভিয়াসের তলায় চাপা পড়ে থাকা পম্পেই নগরী আজ ঐতিহাসিক ও প্রত্নতত্ত্ববিদদের কাছে এক সোনার খনি। পম্পেই নগরীর ধ্বংসাবশেষ থেকে সে যুগের ব্যবহৃত আসবাবপত্র, গহনা, স্বর্ণমুদ্রা, বাড়ির কাজে এবং ব্যবসায়ীক কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র দেখে আমরা সে সময়ে রোমান সাম্রাজ্যের সামাজিক , অর্থনৈতিক ,রাজনৈতিক ,ধর্মীয় নীতিগত অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারি।
পম্পেই নগরী ধ্বংসের ইতিহাস ইতালিতে অত্যন্ত সুবিদিত হওয়ায়, প্রাচীন ও মূল্যবান সামগ্রিক লোভে এলাকায় অনেক দুষ্কৃতীদের আনাগোনা হয় নিয়মিত। ২০১৭ সালে তেমনই একটি দুষ্কৃতী চক্রের হদিশ পায় ইতালির পুলিশ প্রশাসন তারা এলাকার কাছাকাছি একাধিক সুরঙ্গ তৈরি করে ফেলেছিল।ঐ সুরঙ্গ দিয়ে মাটির নিচ থেকে ধরে আনা হতো বিভিন্ন প্রত্নসামগ্রী । যাই হোক, ওই চোরাচালানকারীদের কি হাতে আসে হাতে আসে আমাদের মূল বিষয় পম্পেই নগরীর রথ। যা অবশ্য পরে উদ্ধার করা হয়েছে এবং চোরাচালানকারীদের একটি বিশেষ অংশ আপাতত হাজতে রয়েছে। এটি বেশিদিন আগের নয়! ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ঘটনা।
মাটির নিচে প্রায় অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছিল রথ টি। পম্পেই তে খননকার্যের অত প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলেছেন রথটি লোহার কাঠামো, ব্রঞ্জের সাজসজ্জা এবং সুদৃশ্য কারুকার্য করা কাঠের ব্যবহারের প্রমাণ স্পষ্ট। এর অর্থ ছিল প্রাচীন পম্পেই এর উত্তরে শহরের প্রাচীর এর কাছাকাছি একটি আস্তাবলের সামনে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা আরো বলেন ,”এটি একটি ব্যতিক্রমী নজিরবিহীন আবিষ্কার। “এর আগে ইতালিতে অন গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হয়নি। এছাড়া তার অনুমান করছেন, যখন ২০০০ বছর পূর্বে অগ্নুৎপাত হচ্ছিল তখন গলিত লাভার চাপে রথের পাশে প্রাচীরটি ভেঙে রসের উপরেই পরে। এতে রথের বেশ কিছু ক্ষতি হলো সম্পূর্ণ লাভার মধ্যে ভস্ম হওয়া থেকে বেঁচে যায়।
এর আগে এলাকা থেকে চাষের ফসল নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত গাড়ি পাওয়া গেছিল। কিন্তু এই প্রথম একটি রাত আবিষ্কৃত ইতালিতে। রথের গঠন কাঠামো সাজসজ্জা এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য দেখে গবেষকরা মনে করছেন, মূলত উৎসব ,শোভাযাত্রা, পদযাত্রা মত অনুষ্ঠানে এই রথ ব্যবহার করা হতো। পাশাপাশি নববধূকে নিজের জন্য এটি ব্যবহার করা হতো বলে মনে হয়।
যদি ভিসুভিয়াস আজ পম্পেই কে কেড়ে না নিত, তবে হয়তো অজানার সীমা আজ কিছু টা কমতো আমাদের জন্য। কিন্তু যুগে যুগে সকল উন্নত সভ্যতার চূড়ান্ত রূপ ধ্বংস দেখেছি আমরা, এই সত্যিটা ভুললেও চলবে না।