(প্রথম পর্ব )
প্রাচীনকাল থেকে বাংলা ভূখণ্ডের সাথে আরবীয় বণিকদের একটা যােগসূত্র ছিল, যা ঐতিহাসিকরা অকপটে স্বীকার করেন। মিসরকে বলা হতাে প্রাচীন সভ্যতার সূতিকাগার। অবস্থানগত দিক দিয়ে মিসর আফ্রিকা মহাদেশে হলেও এশিয়ার সন্নিকটবর্তী। মিসরের ডান দিকে এশিয়ার মাথার উপরের দিকে স্পেন-ভূমধ্যসাগর পার হলেই ইউরােপের ভূখণ্ড। এমতাবস্থায় পাের্ট সৈয়দ বন্দর দিয়ে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরােপে গমন যেমন দুষ্কর নয়, তেমনি লােহিত সাগর পাড়ি দিয়ে এডেন উপসাগর হয়ে বােম্বে, কলকাতা ও মাদ্রাজ হয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে আগমন খুব বেশি কষ্টসাধ্য ছিল এমনটা মনে করাও ঠিক হবে না। ইসলামের প্রাথমিক যুগে মক্কায় কোরেশদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কয়েকজন সাহাবি আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন। সুতরাং যারা লােহিত সাগরের কূল ধরে আরব সাগর পাড়ি দিয়ে আবিসিনিয়া পর্যন্ত যেতে পারেন তাদের জন্য আরব সাগরের ভিন্ন তীরবর্তী করাচি ও বােম্বে হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যােগসূত্র তৈরি করা কঠিন কিছু নয়। এটা কেবল বাস্তবতা নয় বরং ঐতিহাসিক সত্যি। এ পর্যন্ত জ্ঞাত ইতিহাসের সূত্র থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশের উপকূলে আরাই প্রথম বহিরাগত অর্থাৎ বাংলার ভূখণ্ড তথা বাংলার মানুষের সাথে সর্বপ্রথম যাদের সম্পর্ক তৈরি হয় তারা হচ্ছে সেমেটিক আরব। মানব জাতির আদি বসতি নিয়ে গবেষক, প্রত্নতাত্ত্বিকরা এ পর্যন্ত বিস্তর গবেষণা করেছেন এবং আজো সেই গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। অনেক ঐতিহাসিক এরূপ ধারণা পােষণ করেন যে, হজরত আদম আ: প্রথম মানব, যিনি বর্তমান শ্রীলঙ্কা বা সরণ দ্বীপে নিক্ষিপ্ত হন। আজকের ভূবিজ্ঞানীরা এ কথা স্বীকার করেন যে, পৃথিবী এক সময় ছিল একটি অখণ্ড ভূমিরূপ, ফলে পারস্পরিক দূরত্বও ছিল সীমিত। ওই সময়কালেও বাংলাদেশের এই ভূখণ্ডের অস্তিত্ব থাকা বিচিত্র নয়। আজো আমরা লক্ষ করি, বিভিন্ন জনপথ নদীতে, সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়া, নতুন ভূমিরূপে জেগে ওঠা, ভূমিকম্পের মতাে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন বিস্তৃত ভূখণ্ডকে নব নব আঙ্গিকে সজ্জিত করছে।
(দ্বিতীয় পর্ব )
হজরত নূহ আ: এর পুত্র সামের নাম অনুসারে আরবদের সেমিটিক বলা হয়। এরাই মূলত টাইগ্রিস, ইউফ্রেটিস নদী অববাহিকায় সুমেরীয়, অ্যাসীরীয় ও ব্যবিলনীয় সভ্যতার সূচনা করেছিল। সেমেটিকদের আদি পুরুষ হজরত আদম আ: যার কথা পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে যে জঙ্গলাকীর্ণ জনবসতি গড়ে উঠেছিল তারা মূলত আরবীয় সেমেটিক গােষ্ঠীর উত্তরপুরুষ। তাই বলা যায়, প্রাচীন যুগ থেকেই আরবদের সাথে বঙ্গভূমির একটা আত্মিক যােগাযােগ ছিল। রিয়াজুস সালাতীন গ্রন্থে ঐতিহাসিক গােলাম হােসেন সলীম বাংলা নামের উৎপত্তি প্রসঙ্গে বলেছেন, হজরত নূহ আ:-এর সময়কালে যে মহাপ্লাবন হয়, তাতে খােদাদ্রোহী শক্তি সমূলে বিনাশপ্রাপ্ত হয়। যারা ওই মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা পায় তারাই বিরান পৃথবীতে নতুন করে বসতি গড়ে তােলে। হজরত নূহ আ: এর এক পুত্রের নাম ছিল হাম। তিনি পৃথিবীর দক্ষিণ অংশে বসতি গড়ে তােলেন। হামের প্রথম পুত্রের নাম হিন্দ, দ্বিতীয় পুত্রের নাম সিন্দ, তৃতীয় হাবাস, চতুর্থ জানাঞ্জ, পঞ্চম বার্বার, ষষ্ঠ মিউবাহ। তাদের নামানুসারে অঞ্চলগুলাের নতুন নামকরণ হয়। হিন্দের পুত্র দখিলের আবার তিন পুত্র ছিল এবং দক্ষিণ (দক্ষিণাত্য) তাদের মধ্যে তিন ভাগে ভাগ হয়। হিন্দের পুত্র বং (বঙ্গ) বাংলায় বসতি স্থাপন করেন বলে জানা যায়। বং-এর সাথে আল’ যুক্ত হওয়ার কারণ বাংলা ভাষায় আল’ অর্থ বাঁধ। বন্যার পানি যাতে আবাদি জমিতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য ওই সময় জমির চার দিকে বাঁধ দেয়া হতাে। প্রাচীন বাংলার পুরুষরা পাহাড়ের পাদদেশে নিচু জমিতে ১০ হাত উঁচু ও ২০ হাত চওড়া স্তুপ তৈরি করে তাতে বাড়িঘর নির্মাণ করে চাষাবাদ করত। লােকেরা এগুলােকে বলত বাঙ্গালা। অন্য একটি বিষয়ও এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযােগ্য। আরবি আহল শব্দটি বংশ বা উত্তরাধিকার অর্থে ব্যবহৃত হয়। বংগ এর বংশ বা আহল’ বােঝাতেই বংগাল বা বাংলা শব্দের উৎপত্তি। সেমিটিক ভাষায় আল’ মানে আওলাদ, সন্তান-সন্ততি বা বংশধর। এই অর্থে (বঙ+আল) বঙ্গাল বা বংগাল। সুতরাং এ কথা বেশ দৃঢ়তার সাথেই বলা যায়, এ দেশের অধিবাসীদের শরীর ও রক্তে সেমিটিক ধারাই বেশি বহমান।
(তৃতীয় পর্ব )
প্রাচীনকালে আর্যদের আগমনের আগে এই অঞ্চলে দ্রাবিড় জনগােষ্ঠী ছিল। এই দ্রাবিড়রা যে হজরত নূহ আ:-এর বংশধর এমন ধারণাও মনে করা যেতে পারে। প্রায় ৫-৬ হাজার বছর আগে ইন্দো-চীন থেকে আসাম হয়ে অস্ট্রো-এশিয়াটিক বা আস্ট্রিক জাতি বাংলায় প্রবেশ করে নেগ্রিটোদের উৎখাত করে বলে ধারণা করা হয়। এরাই কোল, ভিল, মুন্ডা, সাঁওতাল প্রভৃতি জাতির পূর্বপুরুষ রূপে চিহ্নিত। বাংগালির শব্দ ও সংস্কৃতিতে তাদের প্রভাব রয়েছে। অস্ট্রো-এশিয়াটিক জাতির সময়কালে বা তাদের কিছু পরে, প্রায় ৫ হাজার বছর আগে দ্রাবিড় জাতি এ দেশে আগমন করে। উন্নত সভ্যতার ধারক হওয়ার কারণে অস্ট্রো-এশিয়াটিক জাতির চিন্তা চেতনার স্রোতধারাকে বদলে দিয়ে নতুন উন্নত সংস্কৃতি বিনির্মাণে সফলতা লাভ করে। এভাবে অস্ট্রো দ্রাবিড় গােষ্ঠীর সংমিশ্রণেই আর্যপূর্ব জনগােষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রাক-আর্য জনগােষ্ঠী বাংগালি জনগণের তিন-চতুর্থাংশের বেশি দখল করে আছে। বস্তুত বাংগালি একটি সংকর জাতি হলেও দ্রাবিড়ীয় উপাদানের বেশিরভাগ দখল করে আছে। (বাংলাদেশে ইসলাম : আবদুল মান্নান তালিব)। আজ থেকে ৫ হাজার বছর আগে এই দ্রাবিড় জাতি পশ্চিম এশিয়া থেকে বেলুচিস্তানের মধ্য দিয়ে হিমালয়ান উপমহাদেশে প্রবেশ করে। টাইগ্রিস, ইউফ্রেটিস নদীর অববাহিকায় জীবন অতিবাহিতকারী দ্রাবিড়রা স্বভাবতই ভারতের বৃহত্তম নদীগুলাের অববাহিকা ও সমুদ্র উপকূলকে নিজেদের আবাসভূমি হিসেবে বেছে নেয়। তাদেরই একটি দল গঙ্গা মােহনায় বসতি স্থাপন করে উন্নততর সভ্যতা গড়ে তােলে। খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৭ অব্দে বাংলার এই দ্রাবিড়দের শৌর্যবীর্য ও পরাক্রমের কাছে স্বয়ং বিশ্ব বিজয়ী আলেকজান্ডার নতি স্বীকার করেছেন। (প্রাগুক্ত)। ইয়েমেনের বাদশাহ আবরাহা কাবাঘর ধ্বংস করার জন্য মক্কা অভিমুখে যাত্রা করলে মহান আল্লাহতায়ালা তার অসীম কুদরতে আবাবিল পাখির ঠোটে বহন করা পাথর নিক্ষেপ করে ওই হস্তী বাহিনীকে ধ্বংস করে দেন। এ প্রসঙ্গটি এখানে এ জন্যই তােলা হলাে যে, প্রাচীন দ্রাবির রাজ্য হস্তীকে যুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহার করত। সুতরাং এমন ধারণায় উপনীত হওয়া যায় যে, প্রাচীন দ্রাবিড়রা আরবীয় সেমিটিক ধারারই উত্তরপুরুষ। তাদের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে সঠিকভাবে না জানা গেলেও তারা যে কোনাে না কোনােভাবে তাওহিদবাদে বিশ্বাসী ছিল এমনটা বােঝা যায়। নয়তাে শিরকবাদী পৌত্তলিক আর্যদের সাথে তাদের সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠত না।
(চতুর্থ পর্ব )
এ কথা আজ সর্বজনবিদিত, আর্যরা ভারতের প্রাচীনতম জনগােষ্ঠী নয়। আর্যদের মধ্যে যারা ভারতে চলে আসে তারা মূলত পৌত্তলিক। সম্ভবত তারা গ্রিক পুরাণে বর্ণিত ধর্মীয় চেতনায় উদ্ভূত জাতি। ফলে আজকের হিন্দুস্তান শব্দটির কোনাে ধর্মীয় তাৎপর্য খুঁজে পাওয়া যায় না। গবেষকরা বলেন, হিন্দুস্তান বা হিন্দ শব্দটির মূলে রয়েছে সিন্ধু নদ’। প্রাচীন পারসিকরা স-এর উচ্চারণ হ’ বলত। যেমন প অক্ষরটির উচ্চারণ আরবীয়দের কাছে ফ’। ফলে পারসি শব্দটি ফারসিতে রূপান্তরিত হয়। পারসিকরা সর্বশক্তিমানকে বলত ‘আহুর মাজদা ।আহুর বলতে বােঝানাে হয় দৈহিক শক্তিতে বলীয়ান। আর “মাজদা’ হলাে যিনি বুদ্ধি বলে বলীয়ান। ভারতীয়দের উচ্চারণে ‘আহুর হয়ে যায় অসুর। অর্থাৎ হ’ হয়ে যায় ‘স’। এভাবে সিন্ধুতীরবর্তী অধিবাসীরা উচ্চারণবিভ্রাটের দরুন হয়ে গেল হিন্দু। কিন্তু মজার ব্যাপার হলাে আজকের যুগে ভৌগােলিক অর্থে যারা হিন্দু রাজনৈতিক অর্থে তারা পাকিস্তানি। এমনিভাবে সিন্দুর উচ্চারণ যেমন পারসিকদের কাছে হয় হিন্দু তেমনি গ্রিকদের জিহ্বায় হয় ইন্দু এবং সেই ইন্দু থেকেই ইন্ডিয়া। ইতিহাস অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে আমরা জানতে পারি, এই হিন্দুস্তানে প্রস্তরযুগীয় সভ্যতার মানুষ থেকে শুরু করে দ্রাবিড়, আর্য এবং কালক্রমে আরাে অনেকজনগােষ্ঠী বসবাস করেছে। সুরজিৎ দাসগুপ্ত তার ভারতবর্ষ ও ইসলাম গ্রন্থে বলেন, ‘প্রকৃত পক্ষে ভারতীয় সভ্যতা সংস্কৃতি আস্ট্রিক,দ্রাবিড়ীয়, আর্য প্রভৃতি ভাষা গােষ্ঠীর সম্মিলিত উদ্যমের ফল। ইতিহাস আজ এ বিষয়ে অকুণ্ঠ সমর্থন প্রদান করছে যে, ভারতে আর্য আগমনের অনেক আগ থেকেই আরবীয়দের সাথে বাংগালি জনগণের নানাবিধ যােগাযােগ ছিল। বাংলা অঞ্চলের সাথে আরব বণিকদের যােগাযােগ মােহাম্মদ বিন কাসিমের ঐতিহাসিক সিন্ধু বিজয়ের অনেক আগ থেকেই স্থাপিত হয়েছিল। খুব সঙ্গতভাবেই ভারতে আর্য, শক-হুনদের স্থলপথে আগমনের বহু আগ থেকেই বাংলা অঞ্চলের সাথে আরবীয়দের নৌপথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বাংলাদেশে চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দর ছিল এ অঞ্চলের বহিঃযােগাযােগের সূত্র। আজকের বাস্তবতা এটাই যে, যেসব অঞ্চলই সমুদ্র বা নদী সন্নিহিত, সেসব অঞ্চল বা জনপদই আজ মুসলিম প্রধান। এশিয়ার দিকে লক্ষ করলে দেখা যায় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মালয়, ব্রুনাই, মালদ্বীপ, বাংলাদেশ সবখানেই আজ মুসলমানদের আজান ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এ থেকে এই সত্যটাই বেরিয়ে আসে- যেসব অঞ্চলের সাথে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে আরবদের নৌপথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল, সেসব অঞ্চলেই ইসলাম দ্রুত প্রসার লাভ করেছে।
(পঞ্চম এবং শেষ পর্ব)
মূলত বৈদিক আর্যদের আগমনের অনেক আগ থেকেই ভারতবর্ষে সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। কেবল হরপ্পা বা মহেঞ্জোদারাে নয়, ভারতবর্ষ জুড়েই প্রস্তরযুগীয় সভ্যতার অনেক নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। কিন্তু আর্যরা বিজয়ী হয়েই বিজিত জনগােষ্ঠীর পরিচয় ও সভ্যতাকে অস্বীকার করতে থাকে, এবং অনার্য জনগােষ্ঠীকে (সেমিটিকদের উত্তরপুরুষ) নানা অপমানজনক শব্দে অভিহিত করতে থাকে। আজ আমরা জানতে পারছি, প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই নিষাদ, দ্রাবির, কিরাত ইত্যাদি জাতির অস্তিত্ব ছিল। তাদের পরে এসেছে আর্যরা এবং তারও পরে অপরাপর নানা জাতি। এসব অনার্যের একটা নিজস্ব ধর্ম ও কৃষ্টি ছিল। তবে সে ধর্ম ও কৃষ্টি পৌত্তলিকদের পূজা-অর্চনা নয়। কালের বিবর্তনে মানুষ ধর্মের মূল শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছে। এ কারণেই আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে মানব জাতির হেদায়েতের জন্য জনপদগুলােতে নবী বা রাসূল পাঠিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের বর্ণনায় এই সত্য প্রতিফলিত। আজ দ্রাবিড়ীয় সভ্যতার ধর্ম, সংস্কৃতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া না গেলেও এ ধারণা অমূলক নয় যে, ওই সময় কিছুটা বিকৃত ও রূপান্তরিত হলেও একত্ববাদের ধারণা তথা তাওহিদের ধারণা ওই জনগােষ্ঠীর কিয়দংশের ওপর পরিব্যাপ্ত ছিল। এ কারণেই যখন পরিপূর্ণ তাওহিদের উদাত্ত আহ্বান হজরত মােহাম্মদ সা:-এর মাধ্যমে । এলাে তখন দলে দলে সবাইকে হারানাে ধর্মের মূল স্রোতে ফিরে আসতে দেখা যায়। সুরজিত দাসগুপ্ত তার ভারতবর্ষ ও ইসলাম গ্রন্থে তাই বলছেন, ঐতিরীয় ব্রাহ্মণে বৈদিক দেবতা অগ্নিকে বলা হয়েছে যে, ইতস্তত ধ্বংসস্তুপগুলােতে একদা যারা বাস করত তারা অগ্নির দ্বারা বিতাড়িত হয়ে তাদের নাগরিক বাসস্থানগুলা ত্যাগ করে চলে যায়, তারা ভারতবর্ষের গভীরতর অঞ্চলগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নেয় এবং সেখানে নিজেদের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসকে রক্ষা করতে থাকে। কিন্তু আর পুর’ তারা গড়ে তােলেনি সম্ভবত এই কারণে যে, তাতে ধ্বংসকারী বিদেশীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। আর সিন্ধু নদের উপত্যকা থেকে তাদের উৎখাত করতে সক্ষম হলেও বিশাল ভারতবর্ষ থেকে তাদের নির্মূল করতে বৈদিক আর্যরা সফল হয়নি। (ভারত বর্ষ ও ইসলাম : সুরজিত দাসগুপ্ত, পৃ. ৯১) এভাবে দেখা যায় যে, আর্যরা অনার্যদের সভ্যতা ধ্বংস করতে সক্ষম হলেও ধর্ম-আশ্রিত সংস্কৃতিকে সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট করতে পারেনি। এ সময় – আর্য-তাড়িত দ্রাবিড় জনগােষ্ঠী দক্ষিণের বঙ্গ জনপদে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং দলে দলে বসতি গড়ে তােলে। তাদের হাতেই বঙ্গ জনপদের আবাদ হয়। তবে তাদের আগেও সম্ভবত বঙ্গ’ জনপদে জনবসতি ছিল এবং তারা দ্রাবিড় জনগােষ্ঠীর পূর্বপুরুষ হওয়াও বিচিত্র নয়।