ভারতের আধুনিক চিত্রকলায় নবজাগরণের প্রথম পথিকৃৎ শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সন্তান। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ঐতিহ্যের সংমিশ্রনে তিনি বাংলার চিত্রকলায় নতুন ধারা তৈরি করেন। তাঁর আঁকা ‘রাধাকৃষ্ণ’ চিত্রমালা দিয়েই এই নবজাগরণের শুরু। ১৮৯৬ সালে ইংরেজ শিল্পী ই বি হ্যাভেল কলকাতা সরকারি আর্ট স্কুলে যোগ দেন। কিছুদিনের মধ্যেই হ্যাভেলের সাথে অবনীন্দ্রনাথের পরিচয় ঘটে এবং তাঁর অনুরোধেই অবনীন্দ্রনাথ ১৯০৫ সালে আর্ট স্কুলের উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন।
১৯০৫ সালের স্বদেশি আন্দোলনের কারণে তাঁর আঁকা ‘বঙ্গমাতা’ছবিটির নতুন নাম হয় ‘ভারতমাতা’। যেখানে তিনি জাপানি ওয়াশ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। বিখ্যাত জাপানি শিল্পী ওকাকুরা কলকাতায় আসলে অবনীন্দ্রনাথ জাপানি ওয়াশ পদ্ধতির সাথে পরিচিত হন। এরপর তিনি পাঁচ বছর ধরে ‘রুবাইত-ই-ওমর-খৈয়াম’ চিত্রমালা আঁকেন এবং ১৯৩০ সালে ‘আরব্য রজনী’গল্পের ৪৫টি ছবি এঁকেছিলেন। এই চিত্রমালায় তিনি ভারতীয় পুরাণের গল্পও মিশিয়ে দিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি ছোটদের জন্য ‘ক্ষুদি রামলীলা’ও ‘কুটুম কাটাম’ ভাস্কর্য তৈরি করেন, যেখানে ভাষা ও কোলাজধর্মী অলঙ্করণের মাধ্যমে এক নতুন দৃশ্যভাষার সৃষ্টি করেন, যা আজকের কনসেপচুয়াল আর্টের প্রথম পদক্ষেপ। ১৯৩৮ সালে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে ভাই গগনেন্দ্রনাথের মৃত্যু হলে অবনীন্দ্রনাথ খুবই ভারাক্রান্ত হন। সেই দুঃখেই আঁকলেন ‘কৃষ্ণ মঙ্গল’ ও ‘কবি কঙ্কন চণ্ডী’ চিত্রমালা। যেখানে তার ‘বাংলার ব্রত’-র মতো লোকজ জীবনের গল্প গাঁথা ফুটে উঠেছে। অবনীন্দ্রনাথ ভারতের আধুনিক চিত্রকলাকে এক অনন্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেন।