আমরা সবাই-ই কম-বেশি বিবর্তনবাদ সম্পর্কে অবগত, যে বিষয়ে চার্লস ডারউইন তত্ত্ব দিয়েছিলেন। তবে অনেকেই এই বিবর্তনবাদের তত্ত্বে বিশ্বাসী, আবার অনেকেই এই ধারণাকে যৌক্তিক মনে করেন না। চার্লস ডারউইনের তত্ত্ব অনুসারে, মানুষের বিবর্তনের ধারাটি শুরু হয়েছিলো ‘ড্রাইঅপিথেকাস’ নামক প্রজাতি থেকে, যারা দেখতে কিছুটা বানরের মতো ছিলো। এরপরের বিবর্তিত প্রজাতি হলো ‘রামাপিথেকাস’ এবং তার পরেরটি হলো ‘অস্ট্রালোপিথেকাস’। উল্লেখিত এই তিন প্রজাতির সাথে হয়তো আপনি বর্তমান মানুষের অবয়বে তেমন মিল খুঁজে না পেলেও চতুর্থ বিবর্তিত প্রজাতি ‘হোমো ইরেক্টাস’ এর সাথে অবশ্যই মিল খুঁজে পাবেন। হোমো ইরেক্টাস যেহেতু ‘হোমো’ গণের অন্তর্ভুক্ত, সুতরাং নিঃসন্দেহে এই আদি প্রজাতিতেই মানুষের বৈশিষ্ট্য সবচেয়ে বেশি বিদ্যমান। তবে হোমো ইরেক্টাস প্রজাতির যে অস্তিত্ব ছিলো, তাতে কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, মিশরের প্রথম মানুষ কিন্তু এই হোমো ইরেক্টাস প্রজাতিরই ছিলো।
হোমো ইরেক্টাসরা কথা বলতে জানতেন এবং খাদ্য সংগ্রহ করে বেঁচে থাকতেন। এমনকি তারা হাতিয়ারও তৈরী করতে পারতেন। এই হোমো ইরেক্টাসরা মিশরে এসেছিলেন প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৭ লক্ষ সালের দিকে। খ্রিস্টপূর্ব ৭ লক্ষ সাল থেকে প্রায় ৭০ হাজার সাল পর্যন্ত মিশরে এদেরই বসবাস ছিলো। তবে প্রশ্ন উঠতে পারে, এই বালুময় মরুভূমিতে কেনো হোমো ইরেক্টাসরা এসেছিলেন?
আসলে মিশরের ভূপ্রাকৃতিক পরিবেশ বর্তমানকালের মতো রুক্ষ ছিলো না। তখন নীল নদের তীর ছিলো সবুজ, কোনো মরুভূমি ছিলো না, ছিলো সবুজ-শ্যামল জলাভূমি আর জলজ উদ্ভিদে পূর্ণ এক জংলা এলাকা। তাই স্বাভাবিকভাবেই নীল নদের তীরে নিজেদের সমাজ গড়তে এসেছিলেন অনেকেই।
হোমো ইরেক্টাসদের পর খ্রিস্টপূর্ব ৭০ হাজার সালের দিকে মিশরে বসবাস শুরু করেছিলেন পরবর্তী বিবর্তিত প্রজাতি ‘হোমো নিয়ান্ডারথালেনসিস’, যাদেরকে ‘নিয়ান্ডারথাল’-ও বলা হয়। টলেমি যুগের মিশরীয়দের, অর্থাৎ আলেকজান্ডার পরবর্তী মিশরীয়দের ফসিল পরিক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তাদের মধ্যে নিয়ান্ডারথাল মানুষের জীনের অস্তিত্ব রয়েছে।
তবে প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, নিয়ান্ডারথালরা মোটেও অসভ্য বা নিষ্ঠুর প্রকৃতির ছিলেন না। তারা যথেষ্ট সভ্য ছিলেন। কেউ মারা গেলে তারা কবর দিতেন। তারা অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থাও গ্রহণ করতেন। অনেক আকর্ষণীয় প্রাণী, যেমন জিরাফ এবং গ্যাজেল হরিণের মতো প্রাণীরও তখন আনাগোনা ছিলো এই অঞ্চলে। সভ্য উপায়ে বিকশিত হবার ক্ষেত্রে একটি উৎকৃষ্ট বসবাসের স্থান হিসেবে তখন মিশর ছিলো খুবই উপযোগী।
হোমো ইরেক্টাস ও নিয়ান্ডারথাল উভয় প্রজাতির মানুষই পাথরের হাতিয়ার বা অস্ত্র তৈরী করেছিলেন। পাথর চেঁছে তারা ছোট কুঠারের মতো হাতিয়ার তৈরী করেছিলেন। তবে নিয়ান্ডারথালদের তৈরী হাতিয়ারটি হোমো ইরেক্টাসদের তুলনায় বেশ উন্নত ছিলো।
খ্রিস্টপূর্ব ৭০ হাজার সাল থেকে ৪৩ হাজার সাল পর্যন্ত মিশরে নিয়ান্ডারথাল মানুষের বসবাস ছিলো। তবে খ্রিস্টপূর্ব ৪৩ হাজার সালের দিকে হোমো স্যাপিয়েন্স প্রজাতির, অর্থাৎ বিবর্তিত আধুনিক প্রজাতির মানুষেরা এই অঞ্চলে এসে নিয়ান্ডারথালদের বিতাড়িত করেছিলেন।