আমাদের মোহনীয় ঢাকার তেরটি গলিপথ Heritage Street এর মর্যাদা পেয়েছে ,ঋষিকেশ দাস রোড সেই মর্যাদাপূর্ণ তালিকার অন্যতম।ঋষিকেশ দাস রোডকে ঘিরে আছে তিনটি সরু গলিপথ ,রেবতী মোহন দাস রোড,হেমেন্দ্র দাস রোড ও মোহিনী মোহন দাস রোড।মোহিনী মোহন দাস রোডে ঢাকার একটি অনিন্দ্য সুন্দর বাডী লোক চক্ষুর অন্তরালে অযত্ন ,অবহেলায় পড়ে আছে।এখন আমি আপনাদের সেই বাড়ীটি ভ্রমন করাব।ফিটফাট হয়ে চলুন ঘুরে আসি মংগলাবাস থেকে।
মংগলাবাস ইউরোপের রেনেসাঁ সময়কালের Neo-Classical রীতিতে নির্মিত ।স্তম্ভ ভিত্তিতে কলসের ব্যবহার ও করিনথীয় স্তম্ভ সেই সাক্ষ্যই গেয়।তাই নির্মাণকাল উনিশ শতকের শেষাবধি যে কোনো সময় ধরে নেয়া যায়।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়কালে ঢাকায় বেশ কয়েকজন হিন্দু ধর্মানুসারী ধনাঢ্য সুবর্ণ বণিক সাহা ব্যবসায়ী ছিলেন।তাদের মধ্যে একজন ছিলেন এই সুরম্য নিকেতনের স্বপ্ন দ্রষ্টা যতীন্দ্র মোহন সাহা।
সুবর্ণ বনিক ও সাহারা ছিলেন একসময় ঢাকার ব্যবসার প্রাণ ভোমরা।উনিশ শতকের গোড়ায় তাদের হাতেই ছিল শস্যদানা,চাল,ডাল,লবন,পাট,স্বর্ন ,বস্ত্র অর্থ লগ্নি ও টাকা পয়সা বিনিময় ব্যবসার চাবিকাঠি।যতীন্দ্র বাবু ছিলেন তাদেরই প্রতিনিধি । ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পর দুহাত ভরে তাদের দেবী লক্ষীর কৃপা পেলেন,তারপর মনের মাধুরী মিশিয়ে বানালেন মংগলাবাস ।
অতীত ঢাকার সৌন্দর্যের,শান-সৌকতের,কৃতিত্বের দলিল দস্তাবেজ খুবই অপ্রতুল ।মংগলাবাস তারই প্রতিনিধিত্ব করছে,স্থানীয়দের মতে এটি একটি “জমিদার বাড়ী”ব্যস এটুকুই আর বিশেষ কোনো তথ্য নেই।বর্তমানে কবি নজরুল সরকারী কলেজের শহীদ শামসুল আলম ছাত্রবাস হিসেবে ব্যবহৃত স্থাপনাটি চাক্ষুষ করে এর যে স্থাপত্যিক সৌন্দর্য অবলোকন করেছি ,শুনুন তাহলে তা বর্ননা করছি এখন।
৩,মোহিনী মোহন দাস রোডে অবস্থিত মংগলাবাসের মুল প্রবেশ পথ পূর্বাভিমুখী।প্রবেশ পথ চারটি Corinthian শিরাল স্তম্ভ নিয়ে নির্মিত ।প্রবেশ পথের ওপরে রেনেসাঁ রীতির পেডিমেনট নির্মান করে একটি রাজকীয় রুপ
প্ররিগ্রহ হয়েছে।Corinthian স্তম্ভের পেছনে সারি সারি ৩৪ টি কক্ষ।এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে সুগম যাতায়াত।
ইমারতটি ইটের তৈরী।গাঁথুনিতে চুন-সুরকি ব্যবহার করা হয়েছে।দেয়ালগুলো মজবুত ৩০”পুরু।ছাদ নির্মাণে অনুসৃত হয়েছে কড়ি বর্গা পদ্ধতি।চতুষ্কোণ অঙ্গনের কক্ষগুলো টানা বারানদার পেছনে সারিবদ্ধ ভাবে নির্মিত।
স্থাপনাটি অলংকরণে মোজাইক ও রঙ্গীন কাচেরঁ সারসী ব্যবহৃত হয়েছে।দরজা ও জানালা নির্মাণেও সৃজনশীলতা লক্ষ্য করা যায়। Cast Iron দিয়ে নির্মিত রেলিং ইমারতটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুন।এছাড়া বারানদার রেলিংয়ের উপরে কাঠের জাফরির ব্যবহার মনোমুগ্ধকর ও রোদ -বৃষ্টি নিরোধক।ইমারতটির Balustrade সিড়িতে যখন পা দেবেন তখন একটা রাজকীয় ভাব চলে আসবে আপনার মধ্যে।রাজকীয় এই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই বিশাল আকাশ।সেই মুক্ত আকাশে বিচরণ করছে আমাদের ঢাকার অজানা ইতিহাস।