• হোম
  • আমাদের সম্পর্কে
    • উদ্দেশ্য
    • পৃষ্ঠপোষক
  • গ্যালারি
    • আমাদের বাংলাদেশ
    • লোকসাহিত্য
    • স্বাদের ইতিহাস
    • স্মরনীয় যারা পুরুষ
    • নারী শক্তি
    • সাম্প্রতিক বিশ্ব
    • ছবি থেকে গল্প
  • বিশ্ব ইতিহাস
    • প্রাচীন যুগ
    • মধ্যযুগ
    • বর্তমান যুগ
  • কিউরিসিটি কর্ণার
    • বিজ্ঞান
    • ইতিহাস
    • সাহিত্য
    • পৌরাণিক কাহিনী
    • লৌকিক অলৌকিক
  • ম্যাগাজিন
    • জীবন ও জীবনবোধ
  • যোগাযোগ করুন
ENGLISH
  • হোম
  • আমাদের সম্পর্কে
    • উদ্দেশ্য
    • পৃষ্ঠপোষক
  • গ্যালারি
    • আমাদের বাংলাদেশ
    • লোকসাহিত্য
    • স্বাদের ইতিহাস
    • স্মরনীয় যারা পুরুষ
    • নারী শক্তি
    • সাম্প্রতিক বিশ্ব
    • ছবি থেকে গল্প
  • বিশ্ব ইতিহাস
    • প্রাচীন যুগ
    • মধ্যযুগ
    • বর্তমান যুগ
  • কিউরিসিটি কর্ণার
    • বিজ্ঞান
    • ইতিহাস
    • সাহিত্য
    • পৌরাণিক কাহিনী
    • লৌকিক অলৌকিক
  • ম্যাগাজিন
    • জীবন ও জীবনবোধ
  • যোগাযোগ করুন

প্রাচীন সগডিয়ানার অজানা কাহিনী – পর্ব ১

Posted by Tanjila Haque Aparajita | Oct 29, 2023 | প্রাচীন যুগ, বিশ্ব ইতিহাস | 0 |

জনবহুল ব্যস্ত নগরীর মধ্যেই এক বাড়ি থেকে ভেসে আসে নারীকন্ঠের তীক্ষ্ণ আর্তনাদ। আশেপাশের কৌতূহলী শিশুরা ভেতরে যেতে চাইলে বয়স্ক নারীরা তাদের বাধা দিয়ে অপেক্ষা করতে বললো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরও একবার কান্নার শব্দ পায় ওরা। নবজাতক শিশুর। এবার ওরা ভেতরে ঢোকার অনুমতি পায়। ফুটফুটে এক শিশুপুত্রের মুখে মধু দেওয়া হচ্ছে আর ছোট্ট হাতের তালুতে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে আঠা। গ্রীষ্মের রৌদ্রজ্জ্বল সকালের কাঁচা হলদে রোদ এসে আঁতুড়ঘরের গুরুতর পরিস্থিতিকে হালকা করে দিচ্ছে। আর পাশের আমু দরিয়া নদীর তীর থেকে ভেসে আসছে মিষ্টি বাতাস। ঘরের মধ্যেই অদ্ভুত সব বাজনা বাজিয়ে গান গেয়ে নবজীবনের আগমন উদযাপন করা হচ্ছে।

হবে না-ই বা কেন? খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতকের কোনো এক সময়ে মধ্য এশিয়ার তাজিকিস্তানের একটি উর্বর এলাকার দৃশ্য এটি। এসব ছিলো এই সভ্যতার খুব সাধারণ রেওয়াজ। বলছি প্রাচীন পারস্যের বিখ্যাত সভ্যতা- সেই সগডিয়ান সভ্যতার কথা। আর সগডিয়ান সভ্যতায় যখন কোনো পুত্রশিশুর জন্ম হয় তখন তার মুখে মধু দেওয়া হয়, যেন বড় হয়ে তার মধুর মতো মিষ্টভাষা দিয়ে ব্যবসা করায়ত্ত করতে পারে এবং হাতের আঠা প্রতীকী অর্থে দেওয়া হয়, যেন তার মধুর ব্যবহারের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মুদ্রা তার হাতে এসে লেগে থাকে। (সূত্র: নিউ বুক অফ ট্যাং, অফিসিয়াল ক্রনিকল অফ ট্যাং, ১০৬০) সগডিয়ান পুত্রসন্তানদের বয়স ২০ বছর হতে না হতেই তারা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। মূলত তাদের লক্ষ্য ছিলো পৃথিবীর সর্বত্র বাণিজ্যের একচেটিয়া সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা।

প্রাচীন সগডিয়ানার অজানা কাহিনী

সগডিয়ান শহর এবং তাদের আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে বসতিগুলির মানচিত্র © sogdians.si.edu

এক অপার আশ্চর্যজনক জাতি ছিলো এই সগডিয়ানরা, ব্যবসায়ী জাতি। মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সাম্রাজ্য গড়েছিলো তারা, ব্যবসাকেন্দ্রিক সাম্রাজ্য। ভৌগোলিকভাবে সগডিয়ানা বর্তমান তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তান, আমু দরিয়া এবং সির দরিয়া নদীর মধ্যে অবস্থিত ছিল। বিভিন্ন সময়ে সমরকন্দ, পাঞ্জিকেন্ট, শাহরিসাবজ এবং বোখারার মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো সগডিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল।  তবে তাদের জীবনধারা অন্য সভ্যতাগুলোর চেয়ে বেশ অস্পষ্ট ছিলো। বাস্তবে ১৯০৭ সালে অরেল স্টেইন নামে একজন প্রত্নতাত্ত্বিক চীনের একটি গুহায় সগডিয়ান ভাষায় লেখা আটটি ভালোভাবে সংরক্ষিত চিঠির একটি বস্তা আবিষ্কার করেছিলেন, যা সেই সময়ের জীবন সম্পর্কে ভালোই ধারণা দিয়েছিল।

চীনদেশীয় নাগরিকরা সগডিয়ানদেরকে বাণিজ্যে অত্যন্ত পটু এবং ঝানু বলেই সম্বোধন করতো। কথাটি সগডিয়ানদের বাণিজ্যিক দক্ষতার এক প্রকার পরোক্ষ প্রশংসা ছিল এবং সেই দিনগুলোতে চীনা সমাজে সগডিয়ানদের প্রতি প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিচ্ছবি ছিল। মূলত সমরকন্দ, বুখারা, তাসকেন্দ অঞ্চল থেকে আগত সগডিয়ানরা মধ্য এশিয়ার চীন থেকে তুর্কি পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে রমরমা ব্যবসা করেছিলো। চীনের দুনহুয়াং ও চ্যাংগান প্রদেশে অনেক সগডিয়ানের বসবাস দেখা যেত। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতক থেকে খ্রিষ্টীয় দশম শতক পর্যন্ত প্রায় এক হাজার বছর সগডিয়ানদের সরাসরি অস্তিত্ব ছিলো। তবে তাদের স্বর্ণযুগ ধরা হয় খ্রিষ্টীয় চতুর্থ থেকে অষ্টম শতক পর্যন্ত। সগডিয়ানরা খুবই দুঃসাহসী ছিলো। ব্যবসার জন্য তারা অবলীলায় নানা অচেনা শহরে চলে যেত। বিভিন্ন জাতের মানুষের সাথে সহজেই বন্ধুত্ব করে সাংস্কৃতিক বিনিময় করে ভীষণ শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি করেছিল।

সগডিয়ানদের সৈন্যবাহিনীসহ বিরাট কোনো রাজ্য ছিলো না। কিন্তু তাদের ব্যবসায়িক সংগঠনটি নিজেদের মধ্যে এতটাই দৃঢ় এবং সুসংগঠিত ছিলো যে তারা শুধু ব্যবসা দিয়েই অত্যন্ত শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হয়েছিলো। তাই তাদের সামরিক সাম্রাজ্য না বলে ব্যবসাকেন্দ্রিক সাম্রাজ্য বলা যেতেই পারে। তাদের একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বের অভাব ছিল তবে অনেকগুলি নগর রাজ্যে গঠিত ছিল যারা প্রায়ই একে অপরের সাথে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে যেত। তাদের এই ব্যবসা পরিচালিত হতো মূলত সমরকন্দকে কেন্দ্র করে যেখানে দুই-তিন দিক থেকে সিল্ক রোডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরের রাস্তা এসে মিলিত হয়েছিল। শহরগুলি তাদের নিজস্ব কয়েনেরও প্রচলন করেছিল যা সগডিয়ানার মধ্যে প্রচলন হয়েছিল। তারা বাণিজ্যের প্রধান মুদ্রা হিসেবে সাসানিয়ান মুদ্রা ব্যবহার করতো এবং সিল্কের কাপড়কেও আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য ব্যবহার করতো। তাদের রাজ্যে বহু যাযাবর জাতির আনাগোনা ছিলো। সগডিয়ানরা তাদের প্রশাসক এবং উপদেষ্টা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলো। এভাবে তারা বিভিন্ন রাষ্ট্র তৈরির ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখত।

প্রাচীন সগডিয়ানার অজানা কাহিনী

এই সগডিয়ান দেয়াল চিত্রটিতে সুন্দর পোশাকে ব্যক্তিদের খাবার উপভোগ দৃশ, সোগদিয়ানার অভিজাতদের মধ্যে একটি জনপ্রিয় বিনোদন  © sogdians.si.edu

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এতটাই শক্তিশালী ছিলো তারা যে, সিল্ক রোডের বিভিন্ন জায়গায় সগডিয়ানদের লিখিত ও কথ্য ভাষা ব্যবহৃত হত। সিল্ক রোড মূলত ১৫০০ বছর ধরে চলা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিভিন্ন রুট/ রাস্তার সমষ্টিকে বলা হয়। এর শুরু হয় চীনের হান বংশ ১৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে যখন বাণিজ্যের সূত্রপাত ঘটায় এবং শেষ হয় যখন অটোমান সাম্রাজ্য খ্রিষ্টীয় ১৪৫৩ সালে পশ্চিমের সাথে বাণিজ্যের পথ বন্ধ করে দেয়। ইউরোপ এবং পূর্ব এশিয়ার মধ্যে পণ্য আদান প্রদানের একমাত্র উপায় ছিল এই বিশ্বখ্যাত সিল্ক রোড। এর বিস্তার ছিলো আনুমানিক ৪০০০ মাইল। এমনকি এই রাস্তা পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম জায়গাগুলো যেমন, গোবি মরুভূমি ও পামির মালভূমির মধ্য দিয়েও গিয়েছে। দেখাশোনার লোক না থাকায় চোর-ডাকাতের ভয়াবহ উপদ্রব ছিলো সিল্ক রোডে। এ কারণেই বণিকরা ক্যারাভান অর্থাৎ কাফেলা আকারে চলতো। এ রাস্তা দিয়ে চীন থেকে ইউরোপে উৎকৃষ্টমানের সিল্ক যেত। এছাড়াও এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল থেকে মূল্যবান জেইড পাথর, সিরামিক, চা ও মশলা যেত ইউরোপে। বিনিময়ে ঘোড়া, কাচের জিনিস, তৈরিকৃত দ্রব্য এবং বস্ত্র আসত এশিয়ায়। শুধু দ্রব্যই নয়, সিল্ক রোড দিয়ে বিচিত্র ধ্যান-ধারণা, ধর্ম এমনকি ঐতিহাসিক মহামারি রোগগুলোরও আদান প্রদান হতো।

চতুর্থ শতকের শেষ ও পঞ্চম শতকের শুরুর দিকে বাণিজ্যে সগডিয়ানরা একদম ফুলেফেঁপে উঠেছিলো। কারণ মনে করা হয়, পঞ্চম শতকের শুরুর দিকে সিল্ক কীভাবে বানাতে হয় সেই কৌশল তারা নিজেরাই শিখে গিয়েছিলো এবং এই কারণে রেশমি পোশাকগুলো পশ্চিমে রপ্তানি করে তারা অত্যন্ত শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলতে পেরেছিলো। তারা বিলাসবহুল বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে ব্যবসা করতো কারণ সেই সময়ে স্থলপথের বাণিজ্য অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এবং সগডিয়ানরা তাদের অনুকূল ভৌগলিক অবস্থানের পুরোটা সুযোগ গ্রহণ করেছিলো। সপ্তম শতকের প্রথম দিকে সিল্ক রোড দিয়ে সমরকন্দ বাণিজ্যের একটি প্রগতিশীল অঞ্চলে পরিণত হয়। সিল্কের বুনন এবং সোনা ও রুপার তৈরি পাত্র এবং শিল্পকর্মের সূত্রপাত হয়। সমরকন্দে উত্তরাঞ্চলীয় লাভজনক পশম ব্যবসার প্রসার ঘটে। শুধুমাত্র পূর্ব নয়, পশ্চিমের- বিশেষত রাশিয়ার অপরিশোধিত চামড়ার রমরমা ব্যবসা দেখা যায়। চীনা কর রেজিস্ট্রারগুলো ৬১০-২০ সালে বাণিজ্যে সগডিয়ানদের আধিপত্যের লিখিত প্রমাণ দেয় এবং সগডিয়ানরা যে সিল্কের বিনিময়ে সোনা, রুপা, পিতল, ওষধি গাছ, জাফরান, অ্যাম্বার বা হলুদ রত্নপাথর, সুগন্ধি, কস্তুরী এবং ক্রীতদাসেরও বিনিময় করত- তা বর্ণনা করেছে। এর মধ্যে সগডিয়ানরা চীনের সিল্ক, উজবেকিস্তানের ঘোড়া, ভারতের মূল্যবান রত্নপাথর, তিব্বতের কস্তুরী, উত্তরের স্টেপ অঞ্চল থেকে পশম এনে বাণিজ্য করতো। দক্ষ শিল্পীরা এসব দিয়ে আশ্চর্য সুন্দর শিল্পকর্ম তৈরি করতো। শুধু দ্রব্যসামগ্রী নয়, সগডিয়ানরা সংগীত, নৃত্য আর সমসাময়িক ফ্যাশনেরও বিনিময় করেছিলো। দেয়ালচিত্র, মাটি, ধাতু (বিশেষত স্বর্ণ ও রৌপ্য) ও কাঠের শিল্পকর্মে তারা সমকালীন সামাজিক জীবন যেমন, ভোজ, শিকার, বিনোদনের ছবি ফুটিয়ে তুলেছে। তারা গল্প বলার দিকেও নজর দিয়েছে। লোকগাথা থেকে সাহিত্যের নানা উপাদান তারা নিজেদের ও প্রতিবেশী দেশের সংস্কৃতি থেকে নিয়েছে। তাদের শিল্পে ইউরেশিয়ান শিল্পের প্রভাব রয়েছে যার বিষয়বস্তু ব্যক্তিজীবন থেকে স্বর্গ পর্যন্ত বিস্তৃত।

প্রাচীন সগডিয়ানার অজানা কাহিনী

পঞ্জিকেন্টের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে সগডিয়ান দেয়ালচিত্র পাওয়া গেছে © sogdians.si.edu

অনেক সগডিয়ান বণিক তাদের ঘরে বিভিন্ন ম্যুরাল আঁকিয়ে বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছিলো। নিজ দেশের পাশাপাশি অন্য দেশের সংস্কৃতি, হিন্দু দেব-দেবীর চিত্র, যুদ্ধের দৃশ্য, ঈশপের গল্প, ইরানি বীর রুস্তমের গল্পের সাথে ভারতের পঞ্চতন্ত্র, মহাভারতের কাহিনীও রয়েছে। ছবিগুলো আজও অত্যন্ত বর্ণিল ও আকর্ষণীয়। তাজিকিস্তানের পাঞ্জিকেন্টে খননের সময় এই ম্যুরাল বা দেয়ালচিত্রগুলো বের হয়ে আসে। এর মধ্যে একটাতে সগডিয়ান বায়ু দেবতা ওয়েশপারকারকে হিন্দু দেবতা শিব হিসেবেই উপস্থাপন করা হয়েছে। সগডিয়ানরা বৌদ্ধধর্ম, খ্রিষ্টধর্ম, মানিকে ধর্ম, দ্বৈত সত্তার ইরানি ধর্মের প্রচলন ঘটায় তৃতীয় শতকে। বৌদ্ধধর্ম, জোরোয়াস্ট্রিয়ান এবং ইহুদীধর্ম, স্থানীয় দেবদেবীর সাথে মিশ্রিত হয়ে যেত। বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতি মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত।

তবুও সগডিয়ানার ইতিহাস এখনো অনেকটাই অস্পষ্ট। প্রথমে এটি আকেমেনিয়ান সাম্রাজ্যের প্রাদেশিক রাজ্য ছিল যা খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে আলেকজান্ডার দা গ্রেট জয় করেছিলেন। পরবর্তীতে এটা কুষাণ, সাসানিয়ান, কিদারিত, হেপথালিত, পশ্চিম তুর্কি ও ট্যাং রাজবংশের শাসনে প্রভাবিত ছিল। বহু শতাব্দী ধরে সিল্ক রুটের বাণিজ্যে আধিপত্য করেছে এরা। আরবরা অষ্টম শতকে এর দখল নেওয়ার আগে পর্যন্ত সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে আন্তর্জাতিক বণিক হিসেবে সিল্ক রুটে চীন ও পশ্চিমের সাথে দূর্দান্ত প্রতাপের সাথে বাণিজ্য করেছে তারা। অষ্টম শতকের দিকে সগডিয়ানরা তাদের সংস্কৃতির সাথে ব্যাপকভাবে হারিয়ে যেতে থাকে। এদের বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যের কারণে উইঘুর ও তুর্কিরা সগডিয়ান ভাষাকে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। দশম শতকে মোকাদ্দাসির ভাষায়, সগডিয়ান ভাষা গুরুত্ব হারিয়ে ফারসি ভাষার প্রচলন হতে থাকে।

রাজনৈতিক-ধর্মীয়-সামাজিক অগ্রগতির ফারসি বলা আরবদের অপ্রতিরোধ্য উত্থান ঐতিহাসিক ভাষাগত সংস্কৃতির সগডিয়ানদের পতন ত্বরান্বিত করে। তাছাড়া সগডিয়ানদের খুবই উন্নত অর্থনৈতিক জীবন থাকলেও কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী ও প্রাদেশিক শক্তির অভাব ছিলো। এই কেন্দ্রীয় শাসকের অভাব ছিলো সপ্তম ও অষ্টম শতকের আরব আক্রমণের সামনে টিকে থাকতে না পারার অন্যতম কারণ। সপ্তম শতক শুরু হওয়ার আগেই আরবরা সমরকন্দ আক্রমণ করে । অষ্টম শতকের শুরুতে ট্রানহোক্সিআনা দখল হয়। ৭০৬-৭১২ সালে জেনারেল ওতায়েবা বিন মুসলিম (যিনি কিনা খোরাসানের গভর্নর জেনারেল ছিলেন), সগডিয়ানা দখল করে নেন এবং বাকি স্থানীয় সগডিয়ান শাসকরা আরবদের ক্রীতদাসে পরিণত হয়। সগডিয়ানদের সবকিছু ধ্বংস করে ফেলা হয়। ৭৫০ সালে খলিফা বংশ উম্মায়াদ থেকে আব্বাসিডে পরিণত হয়। যা পরবর্তীতে সগডিয়ানদের ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়াকে ত্বরান্বিত করে।

প্রাচীন সগডিয়ানার অজানা কাহিনী

হিন্দু দেবতা শিবের এই দেয়ালচিত্র, পাঞ্জিকেন্ট পাওয়া গেছে © sogdians.si.edu

সগডিয়ান, ব্যাক্ট্রিয়ান ও অন্যান্য ইরানি জাতির মানুষেরা তাজিক নামে ফারসি ভাষার জাতি গঠন করে। অর্থাৎ, সগডিয়ানরা কখনোই পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি বরং সময়ের সাথে সাথে নতুন জাতিতে পরিণত হয়েছে। পশ্চিম চীনে এমন সম্প্রদায় রয়েছে যারা নিজেদেরকে ঐতিহাসিক সগডিয়ানদের উত্তরসূরি বলে মনে করে।

এছাড়াও তাজিকিস্তানের ইয়াগনোব ভ্যালিতে বসবাসরত বর্তমান ইয়াগনোবিরাই সগডিয়ানদের নিকটতম বংশধর বলে মনে করা হয়। তারা ইয়াগনোবি বা নিও-সগডিয়ান ভাষায় কথা বলে যা মূল সগডিয়ান ভাষার রূপান্তরিত রূপ। তাজিক প্রবাদ বলে, তাদের জোরোয়াস্ট্রিয়ান ধর্ম থেকে আরবের উত্থানের পর তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে। তবে এখন তারা সুন্নি মুসলিম সম্প্রদায় ও এভাবেই পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

সমুদ্রপথ ছাড়াও শুধুমাত্র স্থল বাণিজ্যে নির্ভর করে যে প্রায় এক হাজার বছরব্যাপী সভ্যতা ও সাম্রাজ্যের সৃষ্টি করা যায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ এই সগডিয়ানরা। আমরা সবাই ব্রিটিশসহ সমুদ্রপথে আগত অন্য ঔপনিবেশিকদের কাহিনী জানি, তবে ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ মধ্য এশিয়ার প্রতাপশালী এই ব্যবসাভিত্তিক সভ্যতা সগডিয়ানার কথা কতজনই-বা জানি?

Share:

Rate:

Previousমধ্য এশিয়ার ইতিহাসের গৌরব: সমরখন্দ নগরী
Nextসগডিয়ান মিউনের কাহিনী – পর্ব ২

About The Author

Tanjila Haque Aparajita

Tanjila Haque Aparajita

I have a deep fascination towards the word "ancient". Researching history of the Monarchs to ordinary people of former times is my favorite pastime. Besides, I love drawing and painting, gardening, reading story books and visiting historical sites. From my childhood, I feel an unexplainable attraction while reading any article on history. Even in our country, there are lots of invaluable historical elements uninvented. Along with researching Bangladesh's history and world history, I want to work on our social problems, environment pollution and mental health. Spread positivity.

Related Posts

বখতিয়ার খলজির ধ্বস্ত মহাবিহার – নালন্দা না ওদন্তপুরী?

বখতিয়ার খলজির ধ্বস্ত মহাবিহার – নালন্দা না ওদন্তপুরী?

January 21, 2021

বারো ভুঁইয়া নেতা মুসা খান ও তার মসজিদ

বারো ভুঁইয়া নেতা মুসা খান ও তার মসজিদ

July 21, 2020

স্যার সিরিল র‍্যাডক্লিফের ভারত ভাগ

স্যার সিরিল র‍্যাডক্লিফের ভারত ভাগ

September 9, 2020

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর প্লেটেনিক প্রেম

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর প্লেটেনিক প্রেম

July 25, 2020

সহজে খুঁজুন

Akbar (1) Anarkali (1) Archaeological (6) Atgah Khan (1) Aurangzeb (1) Babur (1) Battle of Plassey (3) Great Ashoka (1) Gulrukh Banu (2) Humayun (1) Indo-Greek (1) Inquisition (1) Isa Khan (1) Mir Madan (2) Mirza Aziz Khoka (1) Movie (1) Mughal (2) Mughal history (1) Mughal painting (1) Mughals (1) Omichund (2) Plassey (3) Sirajuddaula (1) Temple (1)

Previous Posts

সাম্প্রতিক পোস্ট

  • সুরের জাদুকরের উত্থান ও করুণ পরিণতি: কমল দাস গুপ্তের জীবনসংগ্রাম
    সুরের জাদুকরের উত্থান ও করুণ পরিণতি: কমল দাস গুপ্তের জীবনসংগ্রাম
    Feb 27, 2025 | গ্যালারি, স্মরনীয় যারা
  • লস্কর: ব্রিটিশ নৌবাণিজ্যে উপমহাদেশীয় শ্রমিকদের নিদারুণ ইতিহাস
    লস্কর: ব্রিটিশ নৌবাণিজ্যে উপমহাদেশীয় শ্রমিকদের নিদারুণ ইতিহাস
    Feb 23, 2025 | ইতিহাস, কিউরিসিটি কর্ণার
  • নরওয়ের বিশ্ব বীজ সংরক্ষণাগার
    নরওয়ের বিশ্ব বীজ সংরক্ষণাগার
    Feb 5, 2025 | কিউরিসিটি কর্ণার, বিজ্ঞান
  • ডুনহুয়াং গুহার গুপ্ত পাঠাগার ও সিল্ক রোডের অমর কাহিনি
    ডুনহুয়াং গুহার গুপ্ত পাঠাগার ও সিল্ক রোডের অমর কাহিনি
    Jan 22, 2025 | ইতিহাস, কিউরিসিটি কর্ণার

Designed by WebzMart | Powered by Staycurioussis