প্যালেনকে চিয়াপাসের এক প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলে এক রানীর সমাধি আবিষ্কৃত হয়। প্রত্নতত্ত্ববিদেরা তাকে লাল রানীর সমাধি বলে আখ্যা দিয়েছেন। ১৯৯৪ সালে সুন্দর এক মন্দিরের পাশে এই সমাধিটি খুঁজে পাওয়া যায়। মন্দিরটি ছিল পালেঙ্কের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ শাসক পাকালের। প্রত্নতত্ত্ববিদেরা মনে করেন লাল রানি এবং পাকালের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক থাকার কারণে দুটি সমাধি এত কাছাকাছি তৈরি করা হয়েছিল l এই সমাধিতে শায়িত রমণীর নাম লাল রানী কেন হল তারও কিছু ব্যাখ্যার প্রয়োজন।
প্রত্নতত্ত্ববিদেরা সমাধিতে প্রবেশ করে একটি সারকোফেগাস পান l সারকোফেগাসে রাখা মৃতদেহটি লাল রঙের সিঁদুর বা সিনেবার দিয়ে আবৃত করা ছিল । তার কফিন এবং কফিনে রাখা শরীরে এমন ভাবে সিঁদুর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল যে ঢাকনা খোলার পর মনে হয়েছিল ওটা একটি সিঁদুর রাখারই পাত্র l কেন এই কবরের অভ্যন্তরে এই বিষাক্ত লাল রং ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা বলেন, লাল রঙকে তারা পবিত্র বলে মনে করতো l পুনরুত্থান এবং নতুন জীবনের প্রতিনিধিত্ব করে লাল রং l নতুন সূর্যের প্রতীক লাল রং l সমাধির বাসিন্দাদের আভিজাত্য ও মর্যাদার সূচক এই আগুন রং l তা ছাড়া হাড্ডি সংরক্ষণের জন্য হয়তো এটি ব্যবহার করা হয়েছিল। এই সিঁদুর পারদ সালফারের সমন্বয়ে গঠিত l এটি কিছুটা বিষাক্তও বটে।
পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গিয়েছে রানীর বয়স ছিল ৫০-৬০ বছরের মধ্যে। এই হৃষ্টপুষ্ট উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন রানীর দাঁতের পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেলো তিনি খুব উন্নত মানের খাবার দাবার গ্রহণ করতেন। তার সমাধি থেকে পাওয়া সমস্ত উপকরণসহ লালরানী কে মেক্সিকোর জনসাধারণের সামনে উপস্থাপিত করা হয় l কি নাই সেখানে l মুখোশ, ডায়াডেম নেকলেস, ব্রেসলেট, হেডড্রেস, মাথার মুকুট ও ছোট ছোট কিছু মূর্তি। লালরানী অবশ্যই কোন অভিজাত বংশের ছিলেন। তার সমাধিতে পাওয়া জেডের তৈরি হেডড্রেসটি তারই সাক্ষ্য প্রমাণ l ১১৩ টি জেইড, ১৪ টি সেল, ৩৭ টি চুনাপাথর দিয়ে তৈরি এটি। হেডড্রেসটির পাশে একটি ছোট্ট মূর্তি ছিল। কেউ কেউ মনে করেন এটি লাল রানীরই মূর্তি। ১৭০ টিরও বেশি জেড দিয়ে তৈরি বিশাল এক আচ্ছাদন দিয়ে রানীর বুক ও কাঁধ ঢেকে রাখা হয়েছিলো। জেড দিয়েই তৈরি কানের দুল ও গলার নেকলেস দিয়েই সাজিয়ে দেওয়া হয়েছিল মৃত্যুপথের এই যাত্রীকে ।
রানীকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা l