ট্রেজারিতে সংরক্ষিত চাবিবিহীন একটি ট্রাঙ্ক থেকে সম্প্রতি এই ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো উদ্ধার করেছে। পত্র, সে যদি হয় কোনো রাজকন্যার ১২০ বছর আগে লেখা। কোনো সন্দেহ নেই, আজ তার একটি বাক্য পড়ে পাঁচ মিনিট চোখ বন্ধ করে ভাবতে হবে। দিঘাপতিয়ার রাজকন্যা ইন্দুপ্রভার গোপনে তুলে রাখা পত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। শুধু পত্র নয়, পাওয়া গেছে তার অপ্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের পান্ডুলিপি, দিনলিপি, রুপার ফ্রেমে বাঁধানো ছবি, প্রাচীন পদ্ধতিতে লেখার কাজে ব্যবহৃত রাজকন্যার দোয়াত-কলমসহ আরও অনেক কিছু। এ ছাড়া গ্রামের মানুষের বাড়িতে মিলেছে রাজবাড়ির সিন্দুক, রাজা-রানির ছবিসহ অনেক ঐতিহাসিক জিনিসপত্র। এর সঙ্গে এত দিন আড়ালে থাকা মহামূল্যবান পাথরখচিত রাজমুকুট, রাজ পরিধেয় সবকিছু উত্তরা গণভবন সংগ্রহশালায় দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।

১. ইন্দুপ্রভা চৌধুরী। ২. ট্রেজারিতে পাওয়া গেল মূল্যবান পাথরখচিত রাজার মুকুট। ৩. ইন্দুকে লেখা মহেন্দ্রর চিঠি। ছবি: প্রথম আলো

ট্রেজারিতে একটি ট্রাঙ্কের ওপরে লেখা রয়েছে রাজকুমারী ইন্দুপ্রভা। ট্রেজারিতেই পাওয়া যায় মহামূল্যবান পাথরখচিত রাজার মুকুট, জরির জামা, হাতির দাঁতের হাতল লাগানো ছুরি, দামি পাথর কেটে তৈরি রাজবাড়ির থালাবাসনসহ অনেক কিছু। এরই মধ্যে একটি ছবিও পাওয়া যায়। এটি রুপার ফ্রেমে বাঁধানো। ছবিটির পরিচয় খুঁজতে গিয়ে ফ্রেম খোলা হয়। এর পর দেখা যায়, ফ্রেমে আড়াল হয়েছিল রাজকুমারী ইন্দুপ্রভার নাম। রাজবংশের চতুর্থ পুরুষ প্রমথনাথের কন্যা ছিলেন ইন্দুপ্রভা। ট্রাঙ্ক থেকে বের করা হয় ইন্দুর হাতের লেখা ১০টি ডায়েরি। এর মধ্যে একটিতে শুধু কবিতা। অন্যগুলোতে তার আত্মজীবনী। ইন্দুর কাছে বিয়ের আগে ও পরে ২৮৫টি চিঠি লিখেছেন মহেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী। প্রতিটি চিঠির শেষে লেখা রয়েছে, ‘তোমারই মহেন্দ্র’। ইন্দুকে সম্বোধন করা হয়েছে ‘প্রিয়তম’ হিসেবে। চিঠির পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে মান-অভিমান। ইন্দুপ্রভা কলকাতায় থাকার সময় তাকে তিনটি ঠিকানায় চিঠি দিয়েছেন। 

প্রিন্সেস ইন্দু প্রবাদের শতবর্ষ পুরাতন স্মৃতিচিহ্ন।

আবার ইন্দু যখন রাজবাড়িতে থেকেছেন, তখনো কলকাতা থেকে মহেন্দ্র তাকে চিঠি লিখেছেন। দিঘাপতিয়া চিঠিপত্রে তার নাম কখনো রাজকুমারী ইন্দুপ্রভা, কখনো শ্রীমতী ইন্দুপ্রভা দেবী আবার কখনো শ্রীমতী ইন্দুপ্রভা চৌধুরানী লেখা পাওয়া গেছে। মহেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ইন্দুপ্রভার স্বামী। তবে তার সম্পর্কে বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। ছোট্ট ছোট্ট খামে ভরা চিঠিগুলো খুবই যত্নে ভাঁজ করে রাখা। প্রায় ১২০ বছর বা তার কাছাকাছি সময় ধরে চিঠিগুলো ওভাবেই খামের ভেতরে রয়েছে। চিঠিগুলো এখনো পড়া যাচ্ছে। একইভাবে ইন্দুর হাতের লেখা কবিতা ও তার আত্মজীবনীও পড়া যাচ্ছে। তখন যে দোয়াত-কলম ব্যবহৃত হতো সেগুলোও অবিকল রয়েছে ইন্দুর ট্রাঙ্কে। আনুমানিক ১৫০ বছর আগে দিঘাপতিয়ার রাজকন্যা ইন্দুপ্রভার লেখা এবং গোপনে তুলে রাখা ২৮৫টি পত্র এখন নাটোর জেলা প্রশাসনের সংগ্রহশালায়।

তথ্যসূত্র: কলকাতা টাইমস