পৃথিবীটা এমন কিছু অদ্ভূত ও বিস্ময়কর ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে, যা শুধুমাত্র উপলব্ধি করা সম্ভব, যার পদচারণা প্রাচীন ইতিহাসেও পাওয়া যায়। আর এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করবার জন্য ভারতবর্ষ সবচেয়ে উপযোগী জায়গা। তাই তো গ্রীক দিগ্বীজয়ী আলেকজান্ডারও এমন অভিজ্ঞতা ভারতবর্ষে আসার আগে কখনোই অর্জন করেন নি। হ্যাঁ, আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের কথাই বলছি। পৃথিবী জয়ের আকাঙ্ক্ষা বুকে নিয়ে যিনি বের হয়েছিলেন, তিনি থমকে যেতে ও একই সাথে মুগ্ধ হতে বাধ্য হয়েছিলেন ভারতবর্ষে প্রবেশের পরই।
চোখ খুলে কেমন যেনো ধোঁয়াশে আবরণ দেখতে পেলেন আলেকজান্ডার। শরীরটা হঠাৎ করেই পাখির পালকের মতো হালকা হয়ে গেছে তার। এই তো মাত্রই তিনি শয্যাশায়ী অবস্থায় মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। কিন্তু এখন আর নিজেকে অসুস্থ মনে হচ্ছে না। হঠাৎ মনে হলো, কেউ নাম ধরে ডাকছে তাকে। এদিক ওদিক তাকিয়ে অবশেষে দেখতে পেলেন পরিচিত এক অবয়ব, হাসিমুখে এগিয়ে আসছেন তার দিকে। রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে তাকে দেখছেন আলেকজান্ডার আর ভাবছেন যে, এ-ও কি সম্ভব! হাসিমুখের সেই অবয়বটি কাছে এসে বললেন, “বলেছিলাম না, দেখা হবে ব্যবিলনে”।
খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ অব্দ। স্বপ্নের পাহাড় গড়ে মেসিডোনিয়া থেকে রওয়ানা হয়েছিলেন আলেকজান্ডার। এরই মাঝে একের পর এক রাজ্য জয় করে গড়ে তুলেছেন নিজের বিশাল সাম্রাজ্য। পারস্য জয় শেষ। সিরিয়া, মিশর, ব্যাক্ট্রিয়া, ব্যাগ্রামসহ বহু কলোনি গঠন করেছেন। এ পর্যন্ত আসার পথটা খুব মসৃণ না হলেও বাধার সম্মুখীন তিনি খুব সামান্যই হয়েছেন। এবার যখন তিনি ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে গান্ধার রাজ্যে পা রাখলেন, এক মিশ্র কিন্তু মনোমুগ্ধকর অনুভূতি ঘিরে ধরলো তাকে, যেনো এক স্বপ্নপুরীতে চলে এসেছেন তিনি। গান্ধার রাজ্যে এসে জানতে পারলেন সেখানকার জ্ঞানচর্চার গভীরতার কথা। আরও বেশি কৌতুহলী হয়ে উঠলেন তিনি।
গান্ধার রাজ্যের পূর্বদিকের অংশে গড়ে উঠেছে জ্ঞানের নগরী তক্ষশীলা। তক্ষশীলা তখন একই সাথে ছিলো ভারতবর্ষের এক অন্যতম সমৃদ্ধির নামও। যেমন ছিলো তার বাণিজ্যসফলতা, তেমন ছিলো তার জ্ঞানান্বেষণ। জায়গাটা আলেকজান্ডারকে কিছুটা আকর্ষণ করেই টেনে নিলো। কিশোর বয়স থেকেই জ্ঞান অর্জনের প্রতি ছিলো তার প্রবল টান। জানা যায়, তার শয্যার পাশে সবসময় হোমারের ‘ইলিয়াড’ থাকতো। যুদ্ধের অবসরে প্রচুর বই পড়তেন তিনি। ট্রজান বীর একিলিসের কাহিনী তাকে এতোটাই অনুপ্রেরণা দিতো যে যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেকে একিলিস কল্পনা করতেন আলেকজান্ডার এবং এক প্রকার উপাসনা করতেন তিনি একিলিসকে। ১৬ বছর বয়স থেকে তিনি দার্শনিক অ্যারিস্টটলের কাছে অনেক ধরনের জায়গা, মানুষ ও ঘটনা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করে আসছেন। এই ভারতবর্ষের অদ্ভূত ও অনন্য জ্ঞানের গল্পও কম শুনেন নি তিনি নিজের শিক্ষাগুরুর কাছে। তাই তো নিজের চোখে তা প্রত্যক্ষ করার ইচ্ছাই টেনে নিয়ে এসেছে তাকে তক্ষশীলায়। তবে শুরুতেই তার গভীরতা তিনি টের পান নি। এ কারণে নিজের স্বপ্নপূরণের পথে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন।
তক্ষশীলার পূর্ব প্রান্তে ঝিলামের রাজা ছিলেন পৌরব অধিপতি পুরু। মহারাজ পুরু ছিলেন অদম্য সাহসী ও আত্মসম্মানবোধের আধার। আলেকজান্ডারের আসার খবর শুনে আগে থেকেই যুদ্ধের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন তিনি। এদিকে অন্যান্য রাজারা স্বেচ্ছায় বিদেশী আগন্তুকের কাছে নতি স্বীকার করায় খুবই কষ্ট পেয়েছেন মহারাজ পুরু। অন্যরা দমে গেলেও তিনি জীবন থাকতে হার মানবেন না।
জনসাধারণও বিদেশী শক্তির কাছে অবনত হতে চায় নি। আর এই জনসাধারণের মাঝে সবচেয়ে বেশি প্রতিবাদমুখর ছিলেন একদল সাধক-সন্ন্যাসী। তাদের মধ্যে কয়েকজন গ্রীকশিবিরে আক্রমণও করে বসেন। এই ঘটনা আলেকজান্ডারের কানে গেলে তিনি তাদেরকে বন্দী করে তার সামনে নিয়ে আসার আদেশ দেন। আদেশমত দশজন সন্ন্যাসীকে ধরে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সন্ন্যাসীদের দেখে আলেকজান্ডার হতবাক হয়ে যান, কারণ হাসিমাখা মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ব্যক্তিদের প্রত্যেকেই ছিলেন নগ্ন, অর্থাৎ তাদের কারো গায়ে কোনো কাপড় ছিলো না। এমনই কয়েকজন নগ্ন সন্ন্যাসীর সঙ্গে কিছুদিন আগেই তার দেখা হয়েছে। আলেকজান্ডার ও তার সেনাবাহিনীকে দেখে সেই সন্ন্যাসীরা তালে তালে মাটিতে পা ফেলতে শুরু করেছিলেন। আলেকজান্ডার তাদেরকে এমন বিচিত্র আচরণের কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা জবাবে বললেন যে, একজন মানুষ ঠিক ততোটুকু জমিই অধিকার করতে পারে, যতোটুকুতে সে দাঁড়িয়ে থাকে, এর বাইরে কোনো কিছুই তার নয়, সুতরাং আলেকজান্ডারের পৃথিবী জয়ের চেষ্টা শুধুমাত্র সমস্যারই সৃষ্টি করছে ও বিনা কারণে মানুষের প্রাণহানির কারণ হচ্ছে, কেননা শীঘ্রই আলেকজান্ডারের মৃত্যু হবে ও তখন তার অধিকারে শুধু ততোটুকু মাটিই থাকবে যতোটুকু তাকে কবর দেয়ার জন্য যথেষ্ট। আজকের এই দশ জন সন্ন্যাসীকে দেখে আলেকজান্ডারের আগে দেখা হওয়া সেই সন্ন্যাসীদের কথা ও ভবিষ্যদ্বাণী মনে পড়ে গেলো। নিজের অজান্তেই কেনো যেনো বুকটা কেঁপে উঠলো তার। আলেকজান্ডার হঠাৎ-ই উত্তেজিত হয়ে পড়লেন এবং সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সন্ন্যাসীদের অপরাধের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করলেন। কিন্তু এ কি! মৃত্যুদন্ডাদেশ তাদের মুখের হাসি একটুও কেড়ে নিতে পারে নি, বরং তা আরও বিস্তৃত হয়েছে। বিস্মিত আলেকজান্ডার এবার ঘোষণা করলেন যে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি যিনি, তিনি সবার শেষে শাস্তি ভোগ করবেন, অর্থাৎ তাকে বাকি সবার মৃত্যু দেখতে হবে, আর এই বুদ্ধির পরীক্ষা তিনি কিছু প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে করবেন। আলেকজান্ডার তার প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ করার পর উপলব্ধি করলেন যে, তাদের কেউই একে অপরের চেয়ে কম বুদ্ধিমান নন। তাই অভিভূত ও জ্ঞানের পূজারী আলেকজান্ডার তাদেরকে মৃত্যুদন্ড থেকে রেহাই দিলেন।
সন্ন্যাসীদের এমন বিচক্ষণতা নিজের চোখে দেখার পর কৌতুহল ও জ্ঞানপিপাসা আরও বেশি করে ঘিরে ধরলো আলেকজান্ডারকে। তক্ষশীলার রাজা আম্ভীর কাছে তিনি তার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করলেন। তিনি বললেন যে, ভারতবর্ষের জ্ঞানের মূর্ত প্রতীক যারা, তাদের সাথে তিনি দেখা করতে চান। রাজা আম্ভী জবাবে বললেন, গভীরতম জ্ঞানের অধিকারী মৃত্যুঞ্জয়ী সাধকের দেখা পাওয়া এতো সহজ নয়, কেননা তার কোনো ভয়-ভীতি বা পিছুটান নেই, তিনি জগৎ-সংসারের মোহ-মায়ার ঊর্ধ্বে বসবাসকারী। কিন্তু নাছোড়বান্দা আলেকজান্ডার তো কখনোই নিজের কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেন নি। সুতরাং ওনিসিক্রেটাস নামের একজন গ্রীক দার্শনিককে তিনি আদেশ দিলেন যেনো সেই পরম জ্ঞানী ব্যক্তিকে সসম্মানে তার কাছে নিয়ে আসেন, তাকে তিনি পুরস্কৃত করতে চান, কিন্তু তিনি যদি আসতে অসম্মত হন, তবে যেনো তার মাথা কেটে নিয়ে আসেন। ওনিসিক্রেটাস যখন রাজা আম্ভীর একজন লোকের সাথে তক্ষশীলার একেবারে প্রান্তে পাহাড়ের পাদদেশে একটি বনের ভেতর ঢুকে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছুলেন, তখন সেখানে অবস্থানকারী লোকটিকে দেখে তার বিস্ময়ের সীমা রইলো না। বিরাটকায় একজন নগ্ন সন্ন্যাসী গাছের পাতার ওপর শুয়ে আছেন, চেহারাটা তার শিশুসুলভ, নাম দ্বন্দ্বমিস। ওনিসিক্রেটাস তার মাঝে এমন বিশেষ কিছু দেখতে পেলেন না যার মাধ্যমে তাকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ও জ্ঞানী ব্যক্তি বলা যায়। সময় নষ্ট না করে তিনি আলেকজান্ডারের পাঠানো বার্তা তাকে শোনালেন, সেই সাথে এ-ও জানালেন যে, আলেকজান্ডার মহান জিউসের ছেলে ও অত্যন্ত শক্তিশালী দিগ্বীজয়ী বীর; যেনো এই কথা শুনে আলেকজান্ডারের সাথে দেখা করতে যাওয়াটাকে এই ঋষি নিজের সৌভাগ্য মনে করেন। ওনিসিক্রেটাসের কথা শুনে দ্বন্দ্বমিস কৌতুকে ফেটে পড়লেন। তিনি বললেন যে, আলেকজান্ডার যদি জিউসের ছেলে হন, তবে তিনিও জিউসের ছেলে এবং আলেকজান্ডার কখনোই দেবতাসম নন, কারণ তিনি মরণশীল, আক্রমণাত্মক ও হত্যাযজ্ঞের নায়ক। তিনি এ-ও বললেন যে, আলেকজান্ডার কি করে তাকে পুরস্কৃত করবেন, যখন তার কোনো কিছুর অভাব নেই, প্রকৃতি ছাড়া অন্য কোনো বস্তুগত সম্পদের তো তার প্রয়োজনই নেই। সুতরাং তিনি আলেকজান্ডারের আদেশ পালন করতে বাধ্য নন এবং আলেকজান্ডার চাইলে তার মাথা কেটে নিয়ে যেতে পারেন, কেননা তার দেহ একটি আবরণমাত্র; চিরন্তন ও অবিনশ্বর তো তার অন্তরাত্মা। ওনিসিক্রেটাস ফিরে গিয়ে আলেকজান্ডারকে যখন দ্বন্দ্বমিসের কথাগুলো বললেন, আলেকজান্ডার কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন, হয়তো ভাবলেন, বুঝতে চাইলেন জ্ঞানী দ্বন্দ্বমিসের বাক্যগুলোর গভীরতা। এরপর আলেকজান্ডার নিজেই গিয়েছিলেন তার কাছে এবং শুধু নিজের শ্রদ্ধা নিবেদন করেই ফিরে এসেছিলেন, কারণ এমন জ্ঞান ও পান্ডিত্যের সান্নিধ্য তো যে কোনো উপায়ে পেতেই হবে তাকে।
এই ঘটনার পরই আলেকজান্ডার ও পুরুর মধ্যে সংঘটিত হয় বিখ্যাত ‘হিদাসপিসের যুদ্ধ’। যুদ্ধে মহারাজ পুরু শেষ পর্যন্ত পরাজিত হলেও তার বীরত্ব ও অদম্য মনোভাবে আলেকজান্ডার এতোটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, পরাজিত পুরুর প্রতি কেমন আচরণ করা হবে তার সিদ্ধান্ত তিনি তাকেই নিতে বলেছিলেন। জবাবে পুরু বলেছিলেন যে, তার প্রতি তেমনই আচরণ করা হোক, যেমনটা একজন রাজা আরেকজন রাজার প্রতি করে থাকেন। তার এই গাঢ় ও নির্ভীক উত্তর শুনে বিমোহিত আলেকজান্ডার তাকে সসম্মানে ঝিলামের মহারাজ হিসেবেই বহাল থাকার সুযোগ দিয়েছিলেন।
এরপর আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনী আর সামনে এগোতে চায় নি, ফলে মাতৃভূমির দিকে ফেরার উদ্যোগ নিয়েছিলেন আলেকজান্ডার। তবে দ্বন্দ্বমিস রাজি না হলেও দ্বন্দ্বমিসের মতোই আরেকজন জ্ঞানী তপস্বীর দেখা তিনি পেয়েছিলেন। তার নাম ছিলো কালানস। কালানসকেও আলেকজান্ডারের নির্দেশে ওনিসিক্রেটাসই আনতে গিয়েছিলেন। তখন কালানস ওনিসিক্রেটাসকে নির্দ্বিধায় বলেছিলেন, সত্যিকার জ্ঞান ও ধর্মের স্বাদ পেতে হলে ওনিসিক্রেটাস যেনো নগ্ন হয়ে তার পাশে এসে পাথরের উপর বসে ধ্যানমগ্ন হয়। স্তম্ভিত ওনিসিক্রেটাসের প্রতিক্রিয়া দেখে কালানসসহ তার সাথে অবস্থানরত পনেরো জন সন্ন্যাসী খুবই কৌতুক অনুভব করেছিলেন। তবে সাধু কালানস কিন্তু খুশিমনেই রাজি হয়েছিলেন আলেকজান্ডারের দরবারে নিয়মিত যেতে ও তার সাথে ভারতবর্ষ ত্যাগ করতে।
দ্বন্দ্বমিস ও কালানসের মতো এই সন্ন্যাসীরা খুবই বিচিত্র চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তারা ব্রাহ্মণ হলেও জাত-পাত নিয়ে কখনো তাদের কোনো মাথা ব্যথা ছিলো না। যখন যেখানে খুশি চলে যেতেন তারা, যার ঘরে ইচ্ছা তার ঘরে গিয়ে খেয়ে নিতেন আর গল্প জুড়ে দিতেন, কড়া রোদের মাঝে বসে কিংবা এক পায়ে দাঁড়িয়ে ধ্যানমগ্ন হতেন। তারা রোগ-ব্যাধির কারণ বলতে পারতেন। অসুখ-বিসুখকে তারা ঈশ্বরপ্রদত্ত পাপের শাস্তি মনে করতেন, আর তাই নিজেরা অসুস্থ হলে নিজেদের গায়ে আগুন দিয়ে পাপমুক্ত হতে চাইতেন।
আলেকজান্ডারের সাথে ভারতবর্ষ ত্যাগ করার সময় পথে হঠাৎ করেই কালানস ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং প্রথা অনুযায়ী তিনি নিজেকে আগুনে পোড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তার এই সিদ্ধান্তের কথা তিনি আলেকজান্ডারকে জানালেন এবং তাকে নিজের জন্য চিতা প্রস্তুত করতে বললেন। আরও একবার আলেকজান্ডার রাজ্যের বিস্ময় অনুভব করলেন। তিনি বুঝতে পারলেন না, কি করে একজন মানুষ এতো অবলীলায় নিজের প্রাণ দিতে চায়। তবে তিনি এটা ঠিকই উপলব্ধি করলেন যে, কালানসের মতো এই সাধকরা কোনো সাধারণ মানুষ নন; তারা স্বাভাবিক বোঝাপড়া, চাহিদা, আকাঙ্ক্ষার অনেক ঊর্ধ্বে; তাদেরকে কোনো মাপকাঠিতেই দাঁড় করানো সম্ভব না।
কালানসের কথামতো তার জন্য চিতা প্রস্তুত করা হলো। বিচিত্র সাধু কালানস হাসিমুখে চিতায় গিয়ে উঠলেন ও মৃত্যুর আগ-মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি হাসিমুখেই চিতায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় অগ্নিশিখাকে বরণ করে নিয়েছিলেন। মৃত্যুর আগে আলেকজান্ডারের উদ্দেশ্যে তিনি শুধু একটি কথাই উচ্চারণ করেছিলেন, “সম্রাট, শীঘ্রই ব্যবিলনে দেখা হবে”। আলেকজান্ডার কিছুটা অবাক হলেও এই কথার অর্থ তখন তিনি বুঝতে পারেন নি, কেননা এখান থেকে ব্যবিলনে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনাই তার ছিলো না। কিন্তু এক বছর পর সত্যিই মাতৃভূমিতে ফিরে যাবার আগেই ব্যবিলনে অবস্থানরত অবস্থায় অদ্ভূতভাবে তার মৃত্যু হয়। তবে কি ভারতবর্ষের এক কোণার এক জঙ্গলে বসবাসকারী লজ্জাবিহীন নগ্ন সাধুরা ভবিষ্যৎ দেখতে পেতেন? এই রহস্য আজও অজানাই রয়ে গেছে।