খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৪ সাল। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন এক পরমা সুন্দরী নিষ্পাপপ্রাণ নারী এবং বাহুবন্ধনীতে তার এক দিন বয়সের শিশু। বহুদিন এতো আরামের ঘুম হয় না তার। আজ যে তার পরম সুখের দিন। তার ঘুমন্ত চেহারায় ফুটে ওঠা কোমল ও স্নিগ্ধ হাসিই যেনো জানান দিয়ে দিচ্ছে তার প্রাণের প্রশান্তি। স্বপ্ন দেখছেন তিনি, ভীষণ পবিত্র এক স্বপ্ন। সদ্য জন্ম নেয়া ছেলেকে দুই হাতে জড়িয়ে স্বামীর কাঁধে মাথা রেখেছেন তিনি। আজ যেনো পূর্ণ হলো তার সমস্ত সত্তা। স্বামীর চোখে চোখ রেখে বলে দিলেন হাজারো অব্যক্ত কথা।
স্বামীও পরম ভালোবাসায় আগলে রাখলেন স্ত্রী ও ছেলেকে। এতো সুখ তিনি যেনো এর আগে কখনোই অনুভব করেন নি। হঠাৎ কি যেনো হলো তার স্বামীর, তাকে আলতো হাতে সরিয়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি, এগিয়ে গেলেন এক অদ্ভূত দ্যুতির দিকে। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলেন তিনি স্বামীকে। একবারও পেছন ফিরে স্ত্রীর দিকে তাকালেন না তিনি। আস্তে আস্তে সেই অদ্ভূত আলোর মধ্যে মিলিয়ে গেলো তার স্বামীর দেহাবয়ব, যেনো গ্রাস করে নিলো তাকে সেই দ্যুতি। কিছু ভাবতে পারছেন না কান্না করতে থাকা শিশু সন্তান কোলে নিয়ে বসে থাকা নারীটি। তার সুখের সমস্ত অনুভূতি পাল্টে গেলো এক অন্যরকম অনুভূতিতে, এ কেমন অনুভূতি তিনি নিজেও জানেন না।
রাগ, দুঃখ, বিষাদ, আনন্দ –কোনোকিছুর সাথেই মিল নেই তার এই অনুভবের। হঠাৎ অদ্ভূত এই স্বপ্নটি দেখে ঘুম ভেঙে গেলো তার। ভোরের সূর্য প্রবেশ করেছে তার ঘরের জানালা ভেদ করে। চোখ মেলে দেখলেন তার শিশুপুত্র একইভাবে তার বাহুবন্ধনীতে ঘুমাচ্ছে। কি এক আশঙ্কায় ছুটে গেলেন তিনি স্বামীর খোঁজে। কিন্তু হায়! তার স্বপ্ন যে সত্যি হয়েছে। বিয়ের দীর্ঘ বারো বছর পর সদ্য মা হওয়া স্ত্রী ও এক দিন বয়সের শিশু সন্তানকে গভীর ঘুমে রেখেই চলে গিয়েছেন স্বামী পরমাত্মার সন্ধানে। মুহূর্তেই পাল্টে গেলেন এক রাত আগের পরম সুখী সেই নারী। তার মুখ দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই তার অনুভূতি।
ক্ষুব্ধতা, বিষাদ বা বিস্ময় কোনোকিছুই প্রকাশ পেলো না তার চেহারায়। নির্বাক সেই নারী সঙ্গে সঙ্গে খুলে ফেললেন নিজের দেহের জাঁকজমকপূর্ণ সাজসজ্জা, রাজকীয় শয্যা ছেড়ে গ্রহণ করলেন ভূমিশয্যা, পরলেন একরঙা গেরুয়া কাপড় এবং ত্যাগ করলেন এক বেলা বাদে বাকি সব বেলার আহার। এক সময়ের অপরূপ সুন্দরী রাজকুমারী যশোধরা নিজেকে পরিণত করলেন সন্ন্যাসিনী যশোধরাতে, সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় দূরে থেকেও সহযোগী হলেন স্বামী সিদ্ধার্থের, যিনি বোধি লাভের উদ্দেশ্যে স্ত্রী-সন্তানের মায়া কাটিয়ে পাড়ি দিয়েছেন অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে।
আমরা সবাই কম-বেশি মহান গৌতম বুদ্ধের জীবন সম্পর্কে জানি। কিন্তু বুদ্ধের সেই মহাপ্রাণ স্ত্রীর কথা আমরা কতোটা জানি, যিনি বিনা প্রশ্নে নিজের সমস্ত নারীসত্তাকে উপেক্ষা করে সম্মান জানিয়েছেন বুদ্ধের সিদ্ধান্তকে? তার মনে কি সামান্যতম অভিমানও কখনো জন্ম নেয় নি? নাকি নিজের অভিমানকেই তিনি পরিণত করেছিলেন নিজের শক্তিতে, একজন স্বাধীন ও স্বনির্ভর নারী হয়ে বেঁচে থাকার শক্তিতে?
গৌতম বুদ্ধ, যাকে বুদ্ধত্ব লাভের আগ পর্যন্ত ‘সিদ্ধার্থ’ নামেই ডাকা হতো, তিনি ছিলেন শাক্য বংশের রাজা শুদ্ধোদনের ছেলে। শুদ্ধোদনের বোন অমিতার বিয়ে হয়েছিল কোলীয় বংশের রাজা সুপ্পবুদ্ধের সাথে। এই সুপ্পবুদ্ধ আর অমিতার মেয়েই হলেন যশোধরা। খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ সালের এক বিশেষ দিন। শুদ্ধোদন এবং সুপ্পবুদ্ধ উভয়েরই ঘর আলোকিত করে জন্ম নিলেন দুজন মহাত্মা। সেদিন শাক্য ও কোলীয় দুই রাজ্যেই আনন্দ ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ। শুদ্ধোদনের ঘরে যে দেবতা, আর সুপ্পবুদ্ধের ঘরে যে স্বয়ং দেবীরই জন্ম হয়েছে। একই দিনে জন্মগ্রহণ করা সেই দুজন মহাত্মার আত্মিক বন্ধন কি সেদিনই তৈরী হয়ে গিয়েছিলো, নাকি জন্ম জন্মান্তরের ব্যাখ্যাতীত বন্ধনই তাদেরকে একই দিনে মানব রূপ লাভের আশীর্বাদ দিয়েছিল? উত্তর যদিও অজানা, কিন্তু বন্ধন যে কিছু একটা ছিলো, তা কিন্তু অস্বীকারযোগ্য নয়।
যশোধরা এবং সিদ্ধার্থ একই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সত্যি, তবে সম্পর্কে তো যশোধরা সিদ্ধার্থের ফুপাতো বোনও ছিলেন। দুজনই আবার ছিলেন রাজ-বংশীয়। তাই আত্মীয়তার সূত্র থেকেই একই সঙ্গে হেসে-খেলে বেড়ে উঠছিলেন সিদ্ধার্থ ও যশোধরা। একে অপরের বন্ধু হয়ে তাদের আত্মার সম্পর্ক যেনো আরও বেশি মজবুত হতে লাগলো। হবেই বা না কেনো? বন্ধুতো সে-ই হয়, যার সাথে থাকে মনের মিল, যে সবচেয়ে ভালো বোঝে। যশোধরা আর সিদ্ধার্থ দুজনের চরিত্রে ছিল অসম্ভব রকমের মিল। তারা দুজনেই ছিলেন সহনশীল, নিরহংকার ও মানবিকবোধের আধার। অন্য রাজপুত্র বা রাজকন্যাদের মতো মোটেও ছিলেন না তারা কেউই। অসম্ভব রূপবতী হওয়া সত্ত্বেও যশোধরার চারিত্রিক দৃঢ়তা ছিলো অবাক করবার মতো। সুতরাং যার সাথে মনের এতো মিল, তার সাথে সমগ্র জীবন কাটানোর চেয়ে ভালো উপায় আর কি হতে পারে? খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৭ সালে ষোলো বছর বয়সে বিয়ে করেন যশোধরা ও সিদ্ধার্থ। কিন্তু আত্মিক বন্ধন যতো শক্তই হোক না কেনো, বৈরাগ্য তো দুজনের অন্তরেই লুকিয়েছিল। হয়তো এ কারণেই বিয়ের প্রায় বারো বছর পর ঊনত্রিশ বছর বয়সে মা-বাবা হন যশোধরা ও সিদ্ধার্থ। তাদের ছেলের নাম রাখা হয় রাহুল। তবে রাহুলের জন্মের সেই রাত ক্ষণিকের জন্য যশোধরার জীবনে মাতৃত্বের পরম সুখ এনে দিলেও এক রাতের মধ্যেই নিঃশেষ হয়ে যায় সেই আনন্দানুভূতি, অন্তরে চেপে রাখা বৈরাগ্য যেনো রাতারাতি সেই অনুভূতির জায়গা দখল করে নিয়েছিল।
রাহুলের জন্মের রাতেই সিদ্ধার্থের বোধোদয় হয়। বোধি লাভের উদ্দেশ্যে ত্যাগ করেন তিনি রাজপ্রাসাদের জাঁকজমক, ভালোবাসার স্ত্রী ও সদ্য জন্ম নেয়া ছেলেকে এবং এরই সাথে কেড়ে নেন যশোধরার সমস্ত স্বপ্ন। রাজ্যের সবার মনে একই প্রশ্ন, কেন আজই সিদ্ধার্থকে চলে যেতে হল? কিন্তু যশোধরা নির্বাক! কারণ তিনি জানেন, সিদ্ধার্থ আজ যেতে না পারলে কখনোই যেতে পারতেন না, হয়তো বাধা হয়ে দাঁড়াতো সন্তান-স্নেহের মোহ। তাই তো সিদ্ধার্থ মোহ-মায়ার সেই বন্ধন চিরতরে ভাঙার জন্যই ডুব দিয়েছেন পরমাত্মার সন্ধানে। আর যশোধরা রাজকীয় বসন-শয্যা-আহার ত্যাগ করে বিনা প্রশ্নে হয়েছেন স্বামীর অপেক্ষারত অনুগামী।
ইতিহাসে যশোধরাকে একজন আদর্শ স্ত্রী হিসেবেই দেখানো হয়েছে। আদর্শ স্ত্রীতো তিনি অবশ্যই ছিলেন, তবে স্বামীর এমন হঠাৎ চলে যাওয়া কি তার মনে একটুও দাগ ফেলে নি? পৃথিবীর একদম শুরু থেকে কোনো কালেই তো নারীর চলার পথ মসৃণ ছিলো না। তাহলে সদ্য মা হওয়া একজন নারীকে রেখে স্বামীর বৈরাগ্যের পথে প্রস্থানের এই ঘটনায় যশোধরার পথের মসৃণতার পরিমাপ করতে বসাটাও তো নিতান্তই অপরাধতুল্য। হ্যাঁ, যশোধরা দুঃখী হয়েছিলেন, অভিমানও করেছিলেন। সব জেনে-বুঝেও তার নারীসত্তা তাকে স্বামীকে দোষারোপ করা থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি দেয় নি। কে জানে? হয়তো ভেতরে ভেতরে তিনি বিচ্ছেদের আগুনে পুড়ছিলেন। হয়তো তিনি নিজের মনে প্রশ্নও জমিয়েছিলেন যে, একবার, অন্তত একটিবার তো বলে যেতে পারতেন সিদ্ধার্থ, তবে কি সিদ্ধার্থ তাকে বিশ্বাস করেন নি? সিদ্ধার্থ কি ভেবেছিলেন, যশোধরা বাধা দেবেন তাকে? যে স্বামী ছিলেন তার খেলার সাথী, যে স্বামীকে এতো ভালোবেসেছেন যশোধরা, সেই স্বামী কি তাকে শেষ পর্যন্ত চিনতে পারেন নি? এমন হাজারো প্রশ্নের ভীড়ে সামান্য অভিমান ও বৈরাগ্যের মিশ্র অনুভূতি নিয়ে দিনের পর দিন কাটিয়ে দেয়া কি কোনো নারীর জন্য এতোই সহজ? কিন্তু কোলে তার ছোট্ট শিশু। দৃঢ় যশোধরা এবার আরও দৃঢ় হলেন। অভিমান হোক, কিংবা স্বামীর প্রতি সম্মান, যশোধরা হয়ে উঠলেন বহুগুণ শক্তিশালী এক নারী। জগতের কোনো শক্তিরই আর সাধ্য নেই তাকে দুর্বল করবার। একাগ্রচিত্তে সন্ন্যাসী বেশে সন্তানকে লালন-পালন করতে লাগলেন যশোধরা। প্রমাণ করে দিলেন- একজন নারী চাইলে নিজের শক্তিতে বাঁচতেও পারে, বাঁচিয়ে রাখতেও পারে।
বুদ্ধত্ব লাভ করে দীর্ঘ সাত বছর পর নিজের এলাকায় ফিরে এলেন গৌতম বুদ্ধে পরিণত হওয়া সিদ্ধার্থ। আর যশোধরা এই লম্বা সময়ে বাস্তবতার সাথে লড়াই করতে করতে হয়েছেন আরও অনেক বেশি দৃঢ়, অনেক বেশি মানসিক ক্ষমতার অধিকারি। রূপবতী যশোধরাকে বিয়ে করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকা পাত্রদের প্রত্যেককে খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন যশোধরা, আত্মীয়-স্বজনদের নতুনভাবে জীবন গড়ে তোলার পরামর্শগুলোকেও হেলায় সরিয়ে দিয়ে একমাত্র নিজের মন যা চায়, তা-ই করবার সিদ্ধান্তে সবসময় অবিচল থেকেছেন তিনি। এমনকি গৌতম বুদ্ধের আসার খবর শুনে রাজ্যের সবাই যখন একবার তাকে দেখার জন্য পাগলপ্রায়, তখনও দীর্ঘ অপেক্ষা নিয়ে বসে থাকা যশোধরার দৃঢ়তা ভেঙে যায় নি। বরং একজন বজ্রকণ্ঠী নারীর মতো তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, যদি সামান্যতম পুণ্যও তিনি করে থাকেন, তবে স্বয়ং গৌতম বুদ্ধ আসবেন তার সাথে দেখা করতে। হলোও তা-ই। গৌতম বুদ্ধ নিজেই এলেন পুণ্যবতী যশোধরার সঙ্গে দেখা করতে।
দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর স্বামীকে সামনে দেখে দৃঢ়চিত্ত যশোধরা শেষ পর্যন্ত পারেন নি তার চোখের দু ফোঁটা অশ্রু আটকে রাখতে। সেই অশ্রু আনন্দের, নাকি অভিমানের জলধারাই গড়িয়ে পড়ছে তার চোখ থেকে, সেই খবর যশোধরা নিজেও জানেন না। তিনি শুধু গৌতম বুদ্ধকে এটুকুই বললেন, “আপনি লাভ করেছেন বোধিশিক্ষা, আর আমি লাভ করেছি একজন স্বনির্ভর নারী হিসেবে বেঁচে থাকার সক্ষমতার শিক্ষা”। সে দিন যশোধরা দৃঢ়স্বরে যা বললেন তাতে সবাই বুঝতে পারলো যে, একজন সাহসী নারীর পরিপূর্ণ হতে কারো সহায়তার প্রয়োজন কখনোই জরুরি নয়, সে নিজেই নিজেকে পরিপূর্ণ করবার জন্য যথেষ্ট। গৌতম বুদ্ধ মৃদু হেসে যশোধরাকে জানালেন যে, তার আর যশোধরার বন্ধন শুধু এই জগতে সীমাবদ্ধ নয়, তাদের জন্ম-জন্মান্তরের এই বন্ধন দৃশ্যমান এই জগতের অনেক ঊর্ধ্বে। তিনি যশোধরার সহনশীলতা, সাহসিকতা ও দৃঢ়চিত্তের প্রশংসা করে সবাইকে বুঝিয়ে দেন যশোধরার গুরুত্ব কতো বেশি এবং যশোধরাকে আশীর্বাদ করে ছেলে রাহুলকে নিজের সাথে নিয়ে যান বুদ্ধত্বের আলোয় আলোকিত করবার জন্য।
এরপর মা বিহীন সিদ্ধার্থকে পরম স্নেহে বড় করে তোলা গৌতমীর (গৌতমী ছিলেন সিদ্ধার্থের মা মায়াদেবীর বোন ও পরবর্তীতে রাজা শুদ্ধোদনের স্ত্রী; তার নাম থেকেই সিদ্ধার্থের নাম হয় ‘গৌতম বুদ্ধ’) নেতৃত্বে খ্রিস্টপূর্ব ৫২২ সালে গড়ে ওঠা ভিক্ষুণী সংঘে পরবর্তীতে যোগ দিয়েছিলেন যশোধরাও। আত্মশুদ্ধি ও নিরন্তর তপস্যার মাধ্যমে কখন যে তিনি নিজেও অর্হৎ লাভ করেছেন, এই খবর কেউ জানতে পারে নি। যশোধরা থেকে তিনি হয়ে উঠলেন ‘ভিক্ষুণীবদ্যকাচন্না’।
যশোধরা কখনোই তার ভেতরের সুপ্ত ক্ষমতাকে প্রকাশ করেন নি। কিন্তু যশোধরার নির্বাক ভূমিকা যে এক সময় তার মতো গুরুত্বপূর্ণ নারীর অস্তিত্বকে আড়াল করে দিতে পারে, সেই আশঙ্কা স্বয়ং গৌতম বুদ্ধও করেছিলেন। তাই তো আটাত্তর বছর বয়সের বৃদ্ধা যশোধারা যখন শেষ বিদায়ের জন্য বুদ্ধের সভায় এলেন, তখন গৌতম বুদ্ধ নিজেই যশোধরাকে অনুরোধ করেছিলেন তার ক্ষমতা প্রদর্শন করতে। গৌতম বুদ্ধের অনুরোধেই যশোধরা দেখিয়েছিলেন তার ভেতরের সুপ্ত অলৌকিক শক্তিগুলোকে। নিজের শরীরের মাটির ভাগকে নিমিষেই বদলে দিলেন জলধারায়, বায়বীয় ভাগকে বদলে দিলেন তেজে। উপস্থিত সবাই সে দিন দেখেছিল বয়সের ভারে আনত বৃদ্ধার অস্বাভাবিক দৈহিক শক্তি, সবাই জেনেছিল, যশোধরা স্পষ্ট দেখতে পান অতীত ও ভবিষ্যতের প্রত্যেকটি ঘটনা। সবাই উপলব্ধি করেছিল, গৌতম বুদ্ধ যেমন কোনো সাধারণ পুরুষ নন, তেমনি তার সঙ্গিনীও কোনো সাধারণ নারী নন।
আটাত্তর বছর বয়সে খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৫ সালে দেবীরূপী যশোধরা দেহত্যাগ করেছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই মহিয়সী নারী প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন ভক্তি-শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সহনশীলতা, সাহসিকতা ও দৃঢ় নারীসত্তার এক অমূল্য দৃষ্টান্ত। স্বয়ং গৌতম বুদ্ধও স্ত্রীর মৃত্যুর আগে তার গুণগানে মুখর হয়েছিলেন, ঘোষণা করেছিলেন যশোধরার মতো পবিত্র আত্মা ও পরম জ্ঞানের অধিকারি হওয়া কোনো সামান্য ব্যাপার নয়, আর এ জন্যই যশোধরার মর্যাদা বহুগুণ বেশি।
প্রথম প্রকাশঃ দৈনিক মানবজমিন