স্বপ্নের ব্যাপারে নানা মুনির নানা মত। লোকে কেন স্বপ্ন দেখে, তার জবাব আজোও বিদ্বজনেরা খুঁজে বেড়াচ্ছেন। অনেক সময় স্বপ্ন সত্যি হয়- এ কথা সহজে কেউ মেনে নিতে রাজি নয় । এ কথা কাউকে বিশ্বাস করানোও রীতিমত অসম্ভব। আর সেজন্যই হয়তো, ১৮৬৫ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন যখন নিজের মৃত্যু সম্মন্ধে স্বপ্ন দেখেন, তাঁর অন্যান্য সঙ্গীরা মোটেই তা বিশ্বাস করতে পারেননি।
আব্রাহাম লিংকন একদিন কথায় কথায় স্বপ্নে দেখা নিজের মৃত্যুর ঘটনা তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর কাছে ব্যক্ত করেন। তাঁর বন্ধু ওয়ার্ড হিল লেমন স্বপ্নের কথা শুনে হেসে উড়িয়ে দিলেও তিনি বাড়ী এসে তার নোট বইতে তা লিখে রাখেন। ওয়ার্ড হিল লেমন লিংকনের জবানীতে স্বপ্নের কথাটি হুবহু লেখেন,
“দশদিন আগে আমি বেশ রাত করে শুতে যাই। অল্পক্ষনের মধ্যেই আমি স্বপ্ন দেখতে লাগলাম। হঠাৎ আমি অস্ফুট কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। মনে হলো, কেউ যেন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। … … মনে হলো যেন, বহু লোক একত্রে নিঃশব্দে কেঁদেই চলেছে। … … আরো মনে হলো যেন, আমি যেন বিছানা ছেড়ে উঠলাম। বিছুক্ষন নিঃশব্দে পায়চারি করে – অবশেষে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলাম। সেখানেও যেন ঠিক সেইভাবে শত শত লোকের নিরব কান্নায় নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাচ্ছে-! কিন্তু আশ্চার্য্যের বিষয়- যারা কাঁদছে, তাদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এ ঘর থেকে ও ঘরে আমি বার কতক আসা যাওয়া করলাম। জীবিত কোনো লোকের দেখাই আমি পেলাম না। কিন্তু আমি এগিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে কান্নার শব্দগুলোও যেন আমার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে অনুসরণ করে চলতে লাগলো। আমি বড় বিব্রত বোধ করলাম। আমি রীতিমতো ঘাবড়ে গেলাম, বেশ ভীত হয়ে পড়লাম। এ রকম রহস্যময় ও বেদনাদায়ক ঘটনার কারণ খুঁজে বের করার জন্য দৃঢ় সংকল্প হয়ে আমি এগিয়ে চললাম। অবশেষে আমি পূর্ব দিকের একটি বড়োসড় ঘরে এসে হাজির হলাম। ওখানে আমার জন্য আরো বিস্ময়ের, আরো আতঙ্কের ব্যাপার অপেক্ষা করছিল। ঐ ঘরটিতে আমার সামনে রক্ষিত একটি শবাদার দেখতে পেলাম। এই শবাদারের উপরে শোয়ানো আছে একটি মৃতদেহ। মৃতদেহটি একটি বস্ত্রে আচ্ছাদিত। এই মৃতদেহের চতুর্দিকে দাড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য সৈনিক। যেন দেহটিকে তারা পাহাড়া দিচ্ছে। হাজার হাজার লোকের সমাবেশ সেখানে। মৃতদেহটির দিকে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সবাই করুণ চোখে তাকিয়ে রয়েছে, শোকের গভীর ছাপ তাদের চেহারায়, আবার কেউ কেউ মুখ আচ্ছাদিত করে করুণ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে।
আমি ধীর পায়ে শবাদারটির কাছে এগিয়ে গেলাম। একজন সৈনিকের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হোয়াইট হাউসে কে মারা গেলেন?’ বিমর্ষ সৈনিকটি জবাব দিল, “আমাদের প্রেসিডেন্ট নিহত হয়েছেন। নির্মম এক আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন।”
এই বিবরনী লিপিবদ্ধ করার মাত্র কয়েকদিন পরই- ১৪ ই এপ্রিল, ১৮৬৫ সালে লিঙ্কনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওয়াশিংটনের ফোর্ডস থিয়েটারে জন উইলকিস বুথ নামে এক ব্যাক্তি তাকে গুলি করে। তার দেহটি লিংকনের স্বপ্ন দেখা হোয়াইট হাউসের সেই প্রকোষ্টে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে রাজকীয় মর্যাদায় রাখা হয়।