প্রেম শাশ্বত চিরন্তন। প্রেম নিয়ে রচিত হয়েছে কত গল্প-গাঁথা। উইলিয়াম শেক্সপিয়র-এর অমর উপন্যাস রোমিও-জুলিয়েট ঠিক তেমনি এক উপন্যাস। রোমিও-জুলিয়েটের প্রেমের উপাখ্যানটি জানার পর এমনটি মনে হতেই পারে যে, সেরকম মানুষ পাওয়া এই পৃথিবীতে আসলেই খুব দুর্লভ। রোমিও-জুলিয়েটের এই সকরুণ প্রেমকাহিনী সংঘটিত হয়েছিল ইতালিতে। মূলকাহিনীতে দেখা যায়, প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হবার চেয়ে আত্মহত্যাকেই শ্রেয় বলে মেনে নেয়। এমনতর ঘটনা আমরা দেখতে পাই শিরিন-ফরহাদ, লাইলি-মজনুর প্রেম কাহিনীতেও। এসব গল্প কাহিনীর সত্যিকার এক প্রতিচ্ছবি ‘দ্য লাভার্স অফ ভালদারো’।
বেঁচে থেকে নয়, মরে গিয়েই প্রায় ৬ হাজার বছর ধরে একে-অপরকে আলিঙ্গন করে রেখেছে এই তরুণ-তরুণী। তাও আবার সারা বিশ্বের লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে। আলিঙ্গনরত অবস্থায় তাদের হয়েছে মৃত্যু। ‘অন্তিম আলিঙ্গন’ যাকে বলা যেতে পারে। কিন্তু পৃথিবীর কোন শক্তি তাদের এই আলিঙ্গনকে পৃথক করতে পারেনি। বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা সমস্ত ঘটনাকে একপ্রকার নস্যাৎ করে দিয়েই মাটির সঙ্গে মিশে রয়েছেন তাঁরা। এতদিনেও একটু বদলায়নি তাঁদের অবস্থান। রোমিও – জুলিয়েট, হীর- রঞ্জার প্রেমের উপাখ্যানের সঙ্গে এঁরাও তৈরি করে নিয়েছে তাঁদের নিজের পরিচিতি।এঁরা কেউ জীবিত নন। রক্ত – মাংস মিশে গিয়েছে মাটির সঙ্গে। পড়ে রয়েছে হাড়। কালের নিয়মে তাও জরাজীর্ণ।’লাভার্স অফ ভালদারো’। এই নামেই লোকে চেনেন তাঁদের। এদের সঙ্গে জরিয়ে রয়েছে ৬০০০ বছরের ইতিহাস।২০০৭ সালের প্রত্নতাত্ত্বিকেরা উত্তর ইতালির মান্তুয়া গ্রামে সাক্ষী হয় এই প্রেমের। এক ব্যবসায়ী তার বাড়ির পাশের ফেলে রাখা জায়গায় খননকার্য চালান। এই সময় মাটির তলা থেকে পাওয়া যায় দু’টি কঙ্কাল। কিন্তু মাটির নিচে মিশে যাওয়া অন্যান্য কঙ্কালের মত নয়। সবাই আশ্চর্য হয়ে আবিষ্কার করে, কঙ্কাল দুটো একে অপরের ঠিক মুখোমুখি, আলিঙ্গন করে আছে একে অন্যকে। উওর ইতালির মাঁতুয়া গ্রামে খননকার্য চালানোর সময় মাটির তলা থেকে এই দুটি কঙ্কালকে উদ্ধার করেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা।
সমস্তকিছু পরীক্ষা- নিরীক্ষা করার পর প্রত্নতাত্ত্বিকেরা জানিয়েছেন, ওই কঙ্কালদু’টি ৫০০০-৪০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের। প্রায় ৬০০০ বছরের পুরনো এই কঙ্কালদু’টি। তাঁরা জানিয়েছেন, এইভাবেই হয়ত তাঁদের দু’জনকে কবর দেওয়া হয়েছিল। কিংবা তাঁরা এভাবেই মাটির তলায় চাপা পড়ে মারা গিয়েছিলেন।এ সময় কঙ্কাল দুইটির সাথে ওই সময়ের একটি ছুরি পাওয়া যায়। এ থেকে বিয়োগাত্মক প্রেমের উপাখ্যানের মতই সকলে অনুমান করেন যে এই তরুণ-তরুণীকে হত্যা করা হয়েছে। তবে তাদের হত্যা করার কোন লক্ষণ গবেষকেরা পাননি।
ইতালির এই মান্তুয়া গ্রামটির ঐতিহাসিক এক ভূমিকা রয়েছে। কথিত রয়েছে রোমিও-জুলিয়েটেরে উপখ্যানের রোমিওকে এই মান্তুয়াতে নির্বাসন দেয়া হয়। তাই রোমান্টিক উপন্যাসের নির্মম ট্রাজেডির ঠিকানা যেন এই মান্তুয়া। ৬০০০ বছর পরেও তারই প্রতিধ্বনি করছে ‘লাভার্স অফ ভালদারো’–যেন এক অমর প্রেম কাহিনী। প্রত্নতাত্ত্বিকদের তরফে জানানো হয়েছে, মৃত্যুর সময় ওই যুবক – যুবতীর বয়স ছিলো ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। উচ্চতা ছিল ৫ফুট ২ইঞ্চির কাছাকাছি। মৃত্যুর পরেও এদের দু’জনকে কেও আলাদা করতে পারেনি।লোকে বলে সত্যিকারের ভালবাসার কোনওদিনের মৃত্যু হয় না। আর ছ’হাজার বছরের সেই ভালবাসা আরও একবার সেই কথাই প্রমাণ করল। বর্তমানে তাঁদের নতুন ঠিকানা ইতালির মাঁতুয়ার ন্যাশনাল আর্কিওলজিকাল মিউজিয়ামে।
৬০০০ বছর পরে আবিষ্কার হওয়া এই কঙ্কাল দুটিকে বলা হয় ‘লাভার্স অফ ভালদারো’। এক অমর প্রেমের উপাখ্যান।(লেখা তথ্য সূত্র থেকে)
তথ্যসূত্র: sondesh24/bangla-newspaper-latest-news
varsityvoice/Details/6000-years-old-love-story/
banglahub/6000-years-old-love-story/
ebela/international/the-story-of-lovers-of-valdaro-dgtl
wikipedia/wiki/Lovers_of_Valdaro
ancient-origins/history/neolithic-romeo-and-juliet-star-crossed-lovers-valdaro
ছবি:google search
Contributed by Partha Bhowmick