Image Source: Google

অক্টোবরের ৪ তারিখ ।১৯৩০ সন । বৃটিশ এরোনটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর গর্ব আর -১০১(R-101) বিমান ইংল্যান্ড থেকে বিরতিহীন ভাবে ভারতের দিকে তার প্রথম বারের যাত্রা শুরু করবে।আবহাওয়া খুব একটা ভাল ছিলনা।যথা সময়ে যাত্রা শুরু হল। চ্যানেল পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাসে বিমানটি বিরাট এক ধাক্কা খেল।বিমান থেকে আশেপাশের কোন কিছুই আর দৃষ্টি গোচর হল না।১০০০ ফিট উপর দিয়ে বিমানটি ভেসে চলছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই চালক বিমানটির নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেললেন।বাতাসের এক এক ধাক্কায় উড়োজাহাজটি দুইশ থেকে তিনশ ফিট করে নীচের দিকে ধাবিত হতে থাকে। চালক বেশ কষ্টের সঙ্গে এক এক বার বিমানটিকে আয়ত্বে আনেন।কিন্তু নিষ্ঠুর নিয়তির বিধান!পর দিন বেলা প্রায় ২ টা ৫ মিনিটে সিগারেটের আকার বিশিষ্ট বিমানটি উত্তর ফ্রান্সের বিউভিয়াসের বনের পাশে মুখ থুব্‌রে পড়ল।পড়া মাত্র বিস্ফোরণ-সেই সঙ্গে দাউ দাউ করে আগুনের লেলিহান শিখায় স্থানটি উদ্ভাসিত হয়ে উঠল।

বিমানের মাত্র ছয়জন যাত্রী ও ক্র এই মৃত্যু পথ যাত্রা থেকে ফিরে আসার সৌভাগ্য লাভ করেন।জাহাটির পেটের দিকে গন্ডোলার মৃত ঝুলন্ত একটি কামরায় তারা অবস্থান করছিলেন বলে এ যাত্রায় তারা রক্ষা পেয়ে গেলেন।বাকী আটচল্লিশ জন লোকের মর্মান্তিক মৃত্য ঘটলো।

৭৭৭ ফুট লম্বা এই জাহাজটিকে সাড়ে পাঁচ কিউবিক ফিট হাইড্রজেন গ্যাস উপরের দিকে উঠতে সাহায্য করছিল। আর এই হাইড্রজেনই ৩০০ ফিট বেগে আগুন প্রক্ষেপনে সাহায্য করেছিল।

Image Source: Google

এই বিপর্যয় যে ঘাটবে সে ব্যাপারে কিছু কিছু ভবিষ্যৎ বাণী পূর্বেই লোকের মুখে মুখে প্রচারিত হয়েছিল।সে কারণে উপরে বর্ণিত এই দুর্ঘটনা বহু জল্পনা কল্পনার জন্ম দিয়েছে।এ ব্যাপারে বহু অনুসন্ধান চলে।মাঝে মাঝে এক একবার এক একটি সরকারী বিবৃতি প্রদান করা হয়।কিন্তু এই হৃদয় বিদারক দুর্ঘটনার যত ব্যাখ্যাই দেওয়া হোকনা কেন-এর সত্যিকারের কারণ সঠিক ভাবে তুলে ধরতে কেউই পারলনা।এই সব বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা থেকে এর অন্য একটি দিক কেবল জনসমক্ষে প্রকাশ পেল।।

অনুসন্ধানকারীরা আবিস্কার করলেন যে এই আকাশযানটি পাঁচ বছর আগে যখন কেবল মাত্র নক্সার পর্যায়ে ছিল তখন সিভিল এভিয়েশনের ডিরেক্টর ছিলেন,স্যার সেফ্‌ট্‌ন ব্যাঙ্কার ।এই নক্সা তৈরীর পর্যায়ে তিনি একজন জ্যোতিষীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, জ্যোতিষী তাঁকে বলেন যে ছয় বছর পরে তার জীবনের কোন কিছু তার হাতে প্রতিভাত হচ্ছেনা।ষ্টেট অব এয়ারের সচিব লর্ড থম্পসন সহ স্যার সেফটনও উক্ত দুর্ঘটনায় করুণ ও মর্মান্তিক মৃত্য বরণ করেন।

Image Source: Google

ওয়াল্টার র‍্যাডক্লিফ ছিলেন এই যানটির রিগার।দড়াদড়ির দায়িত্বে নিয়োজিত এই লোকটিও যাত্রা করছেন আকাশ পথে।৪ঠা অক্টোবর সকাল বেলা বাড়ীতে র‍্যাডক্লিফের ছোট ছেলে সমানে কান্না জুড়ে দিল।‘এই হ্যাভ্‌ন্ট গট এ ড্যাডী-আমার বাবা নেই-আমার বাবা নেই”।বিমানের কিছু গার্ডার পরীক্ষার পর র‍্যাডক্লিক একদিনের জন্য বাড়ী ফিরে এসেছিলেন ঠিকই ,কিন্তু বিমান ছাড়বার আগেই তাকে ফিরে যেতে হয়েছিল-এবং মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে নিয়তির টানেই হয়ত যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।এটি সকলের কছে বিস্ময়কর যে ক্যাপ্টেনের স্ত্রী আগেই তার স্বামীর মৃত্যু সম্বন্ধে অবহিত ছিলেন-আর ১০১বিমানের ক্যাপ্টেনের নাম ছিল ফ্লাইট লেফটেনান্ট কারমাইকেল বার্ড আরউইন। তার বন্ধু অন্য একজন ক্যাপ্টেন যখন মৃত ক্যাপ্টেনের স্ত্রীকে তাঁর স্বামীর মৃত্যু সংবাদ জ্ঞাপনের জন্য তার বাড়ীতে উপস্থিত হন তখন ক্যাপ্টেনের স্ত্রী আগেই চেঁচিয়ে ওঠেন,’আমি জানি,আমি জানি, তোমাকে উদ্বিগ্ন হতে হবেনা।দেখ,বার্ড ছিলেন একজন আইরিশ আর আমি হলাম স্কটিশ-আমরা উভয়ে জানতাম আমার স্বামী আর ফিরে আসছেন না।

Image Source: Google

এর চেয়ে আরো অবাক করা ঘটনা হল, প্লেনটির ক্রাশ করার মুহুর্তে কার্ডিংটন বেইসের সুইচবোর্ড অপারেটার আরউইনের অফিসের সঙ্গে সংযোজিত টেলিফোনে ক্লিক করে একটি শব্দ শুনতে পান।কর্তব্যরত একজন কর্মচারী ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে  ঐ অফিস কক্ষ শূন্য দেখতে পান।সকলের মনে প্রশ্ন –শব্দটি কি ভাবে হল ?

সবচাইতে বিভ্রমকারীব্যাপার হলো দুর্ঘটনা ঘটার তিন দিন পরে লন্ডনে আতিপ্রাকৃত ভাবে ব্যাপারটি জানবার চেষ্টা চলে।যার মাধ্যমে আত্মা আনার চেষ্টা চলে তার নাম ছিল এলিন গ্যারেট।মহিলা হলেও তিনি আচ্ছন্ন অবস্থায় একজন পুরুষের কণ্ঠে কথা বলেন এবং নিজেকে আরউইন নামে পরিচয় দেন। আরউইন  ঐ মহিলার মাধ্যমে জাহাজটির কতগুলো কৌশলগত খুঁতের উল্লেখ করেন ।পরবর্তী  বৎসর সরকারী ভাবে অনুসন্ধানের ফলাফল জানানোর আগে এই সব খুতের কথা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি ।মিসেস গ্যারেট আরো জানান যে তিন সপ্তাহ পরে আরউইন এবং আরো কয়েকজন মৃতের কাছ থেকে তিনি আরো কিছু তথ্যের সন্ধান পান।এই সব মৃত আত্মার কণ্ঠস্বরের মধ্যে ক্যাপ্টেন সেফ্‌টনের কণ্ঠস্বর ও ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।

Image Source: Google