খুব, খুব অনেক বছর আগে—প্রায় ৯,০০০ বছর আগে—দক্ষিণ তুরস্কের চাতালহইউক নামের এক প্রাচীন শহরে মানুষ বাস করত কাদামাটি ইটের তৈরি ছোট ছোট ঘরে। সেই ঘরগুলো ছিল পাশাপাশি গাঁথা, আর ছাদ বেয়ে পাশের বাড়িতে যাওয়া যেত। আজ শহরটি নেই, কিন্তু তার মাটির নিচে লুকিয়ে ছিল বিস্ময়কর এক ইতিহাস।
গবেষকেরা সম্প্রতি চাতালহইউকের প্রাচীন ঘরগুলোর নিচে সমাহিত থাকা প্রায় ১৩০ জন মানুষের ডিএনএ বিশ্লেষণ করেন। তাতে উঠে আসে এক অভাবনীয় সত্য—যা বদলে দেয় প্রাচীন সমাজ নিয়ে আমাদের অনেক ধারণা।

চাতালহইউকের পূর্ব ও পশ্চিম গড় এবং খননের গর্তসমূহের উড়ন্ত দৃশ্য। এটি স্থানটির ম্যাপ-সদৃশ বিন্যাস ও ঘরগুলো একে অপরের ছাদের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকার ধারণা তুলে ধরে। © wikimedia
ফলাফলে দেখা যায়, একই ঘরে একসঙ্গে বসবাস করতেন মূলত নারীরা—এবং তাঁদের বেশিরভাগই ছিলেন রক্তের আত্মীয়: মা-মেয়ে, বোন, খালা-ভাগ্নি। অথচ সেই ঘরে থাকা পুরুষদের ডিএনএ জানায়, তাঁরা এই নারীদের আত্মীয় নন; তাঁরা এসেছেন বাইরে থেকে।
অর্থাৎ, পুরুষরা বিয়ের পর স্ত্রীর বাড়িতে এসে থাকতেন। একে সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন “ম্যাট্রিলোকালিটি”—বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর ঘরে বসবাস।
আমরা এতদিন ভেবেছি প্রাচীন সমাজ ছিল পুরুষতান্ত্রিক। কিন্তু চাতালহইউকের এই গবেষণা বলছে উল্টো কথা—এখানে নারীরাই ছিলেন পরিবারের কেন্দ্র। তাঁরা বাড়ির উত্তরাধিকারী ছিলেন, সামাজিক সিদ্ধান্ত নিতেন, এমনকি নেতৃত্বেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন।
একটি সাধারণ অভ্যন্তরীণ কক্ষের স্থলেই পুনর্নির্মাণ © wikimedia
এমন নারীনিবাস কৃষিভিত্তিক সমাজে অত্যন্ত বিরল। চাতালহইউক ছিল কয়েক হাজার মানুষের সমন্বয়ে গঠিত বৃহৎ জনপদ, যেখানে নারীদের ক্ষমতা ও নেতৃত্বের এই উদাহরণ ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হয়ে রয়েছে।
আজকের গবেষণা সেই হারিয়ে যাওয়া নারীদের কণ্ঠস্বর ফিরিয়ে আনছে—মাটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা সত্যগুলো একে একে প্রকাশ পাচ্ছে।
চাতালহইউক আমাদের শেখায়—ইতিহাস শুধু রাজা-সাম্রাজ্যের গল্প নয়; নারীর ঘরও একদিন সমাজের কেন্দ্র ছিল।

মুরালে দেখা যাচ্ছে অরক্সের পেছনের অংশ, একটি হরিণ এবং কিছু নারি শিকারি © wikimedia