যশোর রাজ্যের রাজপরিবারেরই একজন উত্তরপুরুষ যশোরের চাচড়া অঞ্চলের রাজা নীলকন্ঠ রায়। গল্পটা তাকে আর তার মেয়েকে নিয়ে l
রাজা-রানীর ঘর আলো করে জন্মগ্রহন করে এক কন্যা সন্তান। ভারী মিষ্টি দেখতে সে।বাবা নীলকন্ঠ রায় তার নাম রাখেন ‘অভয়া’। বাবার ভীষণ আদরের অভয়া l শান্ত, সমাহিত চরিত্রের জন্য সবার প্রিয় এই অভয়া l ধর্মে কর্মে খুব নিষ্ঠাবান সে l
দিনে দিনে হেসেখেলে বেড়ে ওঠে রাজকন্যা। সময় বয়ে চলে তার আপন গতিতে। বড় হয়ে যাচ্ছে অভয়া l বিয়ের বয়স প্রায় চলে আসলো বলে l পাত্র খোঁজা শুরু হলো l সে সময়ের অত্যন্ত প্রতাপশালী ‘নড়াইল জমিদার’ বংশের নীলাম্বর রায়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করা হলো অভয়ার l শানাই বাজলো, ঢোল বাজলো, মহা ধুমধামে বিয়ে হলো ছোট্ট মেয়েটির l শাখা-সিঁদুর পরে, নাকের নথ দুলাতে দুলাতে অভয়া গেলো স্বামীর বাড়ি l আনন্দ আর ভালোবাসায় ঐ বালিকা বধূর দিন কাটছিলো বেশ ভালো l কিন্তু হায়! ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস , এই সুখ টিকলো না অভয়ার কপালে বেশি দিন l রোগ এসে বাসা বাঁধলো নীলাম্বরের শরীরে l কিছুদিন রোগভোগের পরে মারা গেলেন নীলাম্বর রায়। বিধবা হলো রাজকন্যা অভয়া। শাখা- সিঁদুর সব খুইয়ে বাবার কাছে ফেরৎ আসলো সে l সে সময়ে বিধবা বিবাহের প্রচলন ছিলো না। আজীবন একাকী কাটিয়ে দিতে হবে অভয়ার জীবন। কিন্তু নামের মধ্যেই যেন রাজকন্যা অভয়ার পরিচয়, অল্প বয়সে স্বামী হারিয়ে সে কিছুতেই জীবন যুদ্ধে হেরে যেতে চায়নি, ভয় পায়নি জীবনের কঠিন পথে একলা চলতে। সে ছিলো শৈব অর্থাৎ মহাদেব শিবের উপাসক। বাবার কাছে তার অনুরোধ , তিনি তার বাকি জীবন মহাদেবের আরাধনা করেই কাটিয়ে দিতে চান আর সেজন্য চাই শিব মন্দির।
নীলকন্ঠ রায় মেয়ের ইচ্ছা শুনে রাজবাড়ির কাছে মেয়ের জন্য মন্দির তৈরি করে দেন। একটি-দুটি নয়, ৬০ একর জায়গার উপর ১১টি শিব মন্দির তৈরি করেন তিনি। মন্দিরের কাছেই তৈরি করে দেন অভয়ার জন্য একটি বাড়ি এবং বাড়ি সংলগ্ন একটি পুকুর। আর মেয়ের নাম অনুসারেই নগরের নাম রাখেন অভয়ানগর, যা কালক্রমে পরিচয় পেয়েছে অভয়নগর নামে। ভৈরব নদীর তীরে কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে সেই স্থাপনা। পোড়ামাটির কারুকাজ সম্বলিত এই শিব মন্দির বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র।