লোকে বলে, প্রায় দু’শ বছর আগে গভীর এক রাতে জ্বীনেরা ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়া মসজিদটি নির্মাণ করেছিল। যে কারণে, এই মসজিদ রহস্যময় “জ্বীনের মসজিদ” নামে পরিচিত। জনশ্রুতি মতে, সেই সময়ে মসজিদ দেখতে এবং সেখানে নামাজ আদায় করতে বহু দুর-দুরান্ত থেকে মুসল্লিরা আসতো।
চলুন তাহলে জেনে আসা যাক, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়া মসজিদ রহস্যময় “জ্বীনের মসজিদ” নামে পরিচিত কেন? ঐতিহিাসিক এই জামে মসজিদটি ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার বালিয়া গ্রামে অবস্থিত। লোককাহিনী থেকে জানা যায় যে, অনেক রকমের কারুকার্যময় অলংকরণ ও পুরু দেয়াল গড়তে গড়তে রাত শেষ হয়ে গেলে জ্বীনেরা চলে যায়, কারণ, দিনের আলোয় জ্বীনরা থাকে না, তাই গম্বুজের কাজ শেষ না করেই তারা চলে গিয়েছিল। অসম্পূর্ণ এই মসজিদটি মোঘল মসজিদগুলোর মতন দেখতে। কালের বিবর্তনে মসজিদটি অনেকটা ধ্বংস হয়েগিয়েছিল। অনেক ভেঙ্গে চূড়ে যাওয়া মসজিদটির সংস্কার কাজ শুরু হয় ২০০৫ সালে এবং ২০১০ সালে তা শেষ হয়। তিনটি সুউচ্চ গম্বুজ বিশিষ্ঠ অপরূপ আয়তাকার এই মসজিদটি উত্তর দক্ষিণে ৬৯ ফুট ২ ইঞ্চি আর পূর্ব পশ্চিমে ৬২ ফুট ৬ ইঞ্চি দীর্ঘ। মসজিদ তৈরিতে ইটের সঙ্গে চুন সুরকীর ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের দেয়ালে ঘণ্টা, আমলকি, কলস, বাটি, পদ্ম আকৃতির বিভিন্ন অলংকৃত নকশা রয়েছে। যা অত্যন্ত সুনিপুণভাবে বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা। এছাড়া বিশাল আকৃতির ফটকওয়ালা মসজিদটি এই অঞ্চলে একমাত্র মসজিদ।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের সময় শালবাড়ি পরগণার বালিয়ার জমিদার কন্যা গুলমতি চৌধুরানী ১৮৬০ সালের দিকে মসজিদটি তৈরি করেন। তবে সমস্ত কাজ দেখাশুনা করেছিলেন তাঁর স্বামী মেহের বক্স চৌধুরী। মেহের বক্স চৌধুরীর পূর্বপুরুষরা মোঘলদের সময় এই এলাকায় আসেন বলে জানা যায়। ইতিহাস খ্যাত লোকজ জ্বীনের এই মসজিদটি যুগের পর যুগ ধরে কালের স্বাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে। যেটা আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ও গৌরবের। এটিকে আমাদেরকেই সংরক্ষণ করতে হবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রহস্যময় “জ্বীনের মসজিদ” নামে পরিচিত বালিয়া মসজিদের ছবি।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া।