ইতিহাস থেকে জানা যায়, সম্রাট শাহজাহানের সময় সুদূর পারস্য থেকে ইসলাম প্রচার করতে সুফি সাধক শাহ নেয়ামতউল্লাহ আসেন। শাহজাহানের ২য় পুত্র বাংলার সুবাদার শাহ সুজা তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন । সেই সময় বাংলার দক্ষিণে বরিশালের উপকূলীয় এলাকায় আরাকানী মগ ও পর্তুগীজ জলদস্যুরা লুটতরাজ ও জনগণের উপর অনেক অত্যাচার চালাচ্ছিল। সম্রাট শাহজাহান তাঁর ২য় পুত্র শাহ সুজাকে বাংলার সুবাদার হিসেবে দায়িত্ব দেন। অনেকের মতে, আরাকানী মগদের অত্যাচারে ঐ সময় গ্রামের পর গ্রাম জনমানব শূন্য হয়ে যায়।
নদীর দুইপাড়ের লোকজনকে আরাকানী জলদস্যুরা ধরে নিয়ে গিয়ে দাস হিসেবে বিক্রি করে দিত। পর্তুগীজ জলদস্যুরা গ্রামের ভেতর ঢুকে হামলা চালিয়ে সবর্স্ব লুট করতো। এক্ষেত্রে বাংলার প্রজাদের রক্ষায় সুবাদার শাহ সুজা সুফি শাহ নেয়ামতউল্লাহকে অনুরোধ করেন বাংলার দক্ষিণে গিয়ে ইসলাম প্রচার করতে ও পর্তুগীজদের অত্যাচার থেকে মুসলমানদের রক্ষা করতে । ১৬৫৯ সালে সুফি নেয়ামতউল্লাহ কতিপয় শিষ্যসহ বরিশাল এলাকায় আসেন। এই এলাকায় তিনি একটি আস্তানা গড়েন। এরপর সুবাদার সুজা সৈন্য নিয়ে বিষখালি নদীতে পৌঁছান এবং পর্তুগীজদের দমন করেন। শাহ সুজা বাংলায় দীঘ ২০ বছর সুবাদার হিসেবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বাংলায় অনেক মসজিদ, মাদ্রাসা, দালান, ঈদগাহ নির্মাণ করেন। পরে শাহ সুজার অনুরোধে সেখানে নেয়ামতউল্লাহ এক গম্বুজবিশিষ্ট বিবি চিনি মসজিদটি তৈরি করেন। এটি বর্তমানে বরগুনা জেলার বিবি চিনি গ্রামে অবস্থিত। ধারনা করা হয়, এই মসজিদটি তারই কন্যা বিবি চিনির নামে নামকরণ করা হয়েছে। মসজিদের পাশে ৩টি কবর রয়েছে। জনশ্রুতি রয়েছে, এই তিনটি কবর হল শাহ নিয়ামত উল্লাহ (রঃ) ও তার দুই কন্যা বিবি চিনি এবং ইশা বিবির। অপূর্ব সুন্দর বিবি চিনি মসজিদটি বাংলাদেশের মোঘল স্থাপত্যকর্মের একটি অন্যতম ঐতিহাসিক মসজিদ।