১৮৬৩ খৃষ্টাব্দে সিটি অব লিমেরিন নামে একটি জাহাজ ইংল্যান্ডে লিভারপুল থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে নিউইয়র্কের দিকে যাত্রা করে। যাত্রা পথে উত্তর আটলান্টিকে জাহাজটি হঠাৎ প্রচণ্ড ঝড়ের কবলে পড়ে টাল মাটাল হয়ে ওঠে। এই ঝড়ের তাণ্ডব নৃত্য এক সপ্তাহের বেশী কাল স্থায়ী হয়। ঘরে বসে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর পেয়ে দেশের আত্মিয় স্বজন জাহাজটির বিপর্যয়ের আশঙ্কায় রীতিমত শঙ্কিত হয়ে ওঠেন। সকলের মনে গভীর আতঙ্ক –এই বুঝি দুঃসংবাদ এলো-!
অবশেষে আতঙ্কের অবসান ঘটিয়ে ঝড়ের প্রকোপ শান্ত হয়ে এলো। জাহাজের যাত্রী মিঃ উইলমট এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে রীতিমত আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ওঠেন। রাতের পর রাত নিদ্রাহীন অবস্থায় কাটিয়ে শ্রান্তি ও ক্লান্তিতে একেবারে ভেঙে পড়েছেন। প্রাকৃতিক তাণ্ডবলীলা কিছুটা স্তিমিত হয়ে এলে ক্লান্তিতে কখন যে দুচোখের পাতা এক গেছে তিনি জানেন না। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মনে হল তিনি স্বপ্ন দেখছেন- তার স্ত্রী রাত্রিবাস পড়ে এদিকে ওদিকে দৃষ্টিপাত করে ধীরে পায়ে কেবিনে ঢুকে তার দিকে এগিয়ে আসছেন। ভদ্রলোক বেশ কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেলেন। কেবিনে তার এক অংশীদার সহযাত্রী রয়েছেন। অদূরে একটি বাঙ্কে শুয়ে তিনি এখনও জেগে আছেন আর তাদের দিকেই তাকিয়ে আছেন। মিসেস উইলমট কোনদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সোজা স্বামীর শয্যার দিকে এগিয়ে গেলেন। তারপর নত হয়ে স্বামীকে আলিঙ্গন করে মুখচুম্বন করলেন। তারপর যেমন নিঃশব্দে এসেছিলেন তেমনি নিঃশব্দে বেরিয়ে গেলেন। মিঃ উইলমট লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। দুপা হেঁটে তিনি তার বন্ধুর শয্যার দিকে এগিয়ে গেলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন সঙ্গী ভদ্রলোক অবাক বিস্ময়ে তার দিকে দুচোখ মেলে চেয়ে আছেন।ভদ্রলোকটির নাম ছিল মিঃটেইট। তিনি ভাবছেন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে উইলমট কিভাবে একজন নারী নিয়ে স্ফূর্তি করার মন মানসিকতা রাখেন ? তিনি যা দেখেছেন তার হুবহু বর্ণনা দিলেন মিঃ উইলমটের কাছে।
তারপর যথা সময়ে জাহাজ নিউইয়র্ক পৌঁছায় । কাজ শেষে অবশেষে উইলমট ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এলেন। তার স্ত্রী তার কাছে জানতে চাইলেন তিনি সপ্তাহ খানেক আগে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন কিনা। ঝড়ের সংবাদেপরম দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনায় তার স্ত্রী প্রায় আধমরা হয়ে ওঠেন। তখন একদিন ভোর চারটায় তার মনে হল তিনি যেন তার স্বামীর খোঁজে বেরিয়ে গেলেন।
তিনি স্বপ্ন দেখলেন তিনি যেন এক গভীর অন্ধকার রাত্রিতে একটি অতলান্ত বিক্ষুদ্ধ সাগরের অগাধ জলরাশির ওপর দিয়ে হেঁটে চলেছেন। চলতে চলতে একটি বাস্প চালিত জাহাজ তার দৃষ্টিগোচর হল। ধীর পদক্ষেপে তিনি জাহাজটির কাছে চলে এলেন।জাহাজে উঠে নিচের তলায় ডেকের উপর দিয়ে পায়ে পায়ে হেঁটে সামনের দিকে এগিয়ে চললেন। অবশেষে জাহাজের পিছনের দিকে এসে তার স্বামীর কেবিনের দেখা পেলেন। তিনি তার স্বামীর কাছে জানতে চাইলেন-সত্যিই কি জাহাজের পেছন দিকে তার স্বামীর কেবিন টি ছিল ? তার স্বপ্নে দেখা কেবিনের মতই স্বামীর কেবিনটি সাজানো ছিল কিনা তা জানার তার বড় আগ্রহ। তিনি বললেন, কেবিনটিতে নিচের বার্থ থেকে উপরের বার্থটি একটু সামনের দিকে এগোনো। তিনি আরও জানালেন যে উপরের বার্থে শোয়া লোকটি ড্যাবড্যাবে চোখে তার দিকে সোজা সুজি তাকিয়ে ছিল। প্রথমে তিনি কেবিনে ঢুকবেন কি ঢুকবেন না-বেশ একটু দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন ।লোকটিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার রীতিমত ভয় হচ্ছিল। অবশেষে সব দ্বিধা দন্দ কাটিয়ে-কিছুটা যেন মরিয়া হয়েই তিনি সোজাসুজি কেবিনে ঢুকে পড়লেন। ধীর পায়ে তিনি তার স্বামীর বার্থের কাছে চলে গেলেন। নিচু হয়ে স্বামীকে চুম্বন ও আলিঙ্গন করে নিঃশব্দে তিনি কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। বর্ণনা শুনে স্বামী হতবাক হয়ে বসে রইলেন। অলৌকিক ঘটনাটি তাদের উভয়কেই গভীরভাবে নাড়া দিয়ে গেল।
Images collected from Google