মানুষের স্মরণকালের মধ্যে ১৮৫৪-৫৫ সালের শীত উত্তর ইংল্যান্ডের সর্বত্র সবচাইতে বেশী বলে অনুভূত হয়। ৯ই ফেব্রুয়ারী সারারাত প্রবল তুষারপাত হয় –দুই ইঞ্চি পুরু হয়ে ডেভনশহর বরফাচ্ছাদিত হয়ে পড়ে। এক্‌স্‌ নদীর পানি জমে বরফ হয়ে যায়। পাখিগুলো বরফের যেখানেই দাঁড়ায় ফাঁদে পড়ার মত সেখানেই আটকে পড়ে। প্রভাতে তুষারাবৃত প্রান্তর গুলো শ্বেতশুভ্র মসৃন ও সমতল বলে প্রতিভাত হত। আর সেই সঙ্গে সবাইকে অবাক করা একশত মাইল দীর্ঘ এক রহস্যজনক পদচিহ্নের সুস্পষ্ট দাগ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে লাগলো। এই পায়ের ছাপগুলো ঠিক মানুষের পায়ের ছাপ নয়। এঁকে বেঁকে এঁকে বেঁকে এগুলো স্থানীয় পাঁচটি ধর্ম যাজক দ্বারা শাসিত পল্লী এলাকার বাগান গুলোর এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত, ছাদের উপর খরের গাদার বরফের উপর দেয়ালের উপর দিয়ে এবং গোলাবাড়ির বাইরে দেখা যেত ।এই পদচিনহ্ন গুলি ছিল চার ইঞ্চি লম্বা , বিস্তৃত ছিলো আড়াই ইঞ্চি। প্রতিটি পদক্ষেপের দূরত্ব ছিল আট ইঞ্চি ।আর এই ছাপ গুলো দেখে সহজেই অনুমান করা যায় যে এগুলো দ্বিধা বিভক্ত কোন খুড়ের দাগ এবং দুপায়ে ভর করে সোজা-কেবল সোজা- সম্মুখদিকে হেঁটে এগিয়ে গেছে। স্থানীয় লোকের মনে দৃঢ় বিশ্বাস এগুলো নিশ্চয়ই সেই দ্বিধা বিভক্ত পা-ওয়ালা শয়তানের পায়ের ছাপ।

     গির্জাশাসিত শহর টন্টিসের কোন এক বাগানের মধ্যে –ঠিক মধ্যবর্তী স্থান থেকে শুরু হয় এই ভূতুরে পায়ের ছাপ এবং যেমন রহস্যজনক ভাবেই সেগুলো শেষ হয়ে যায় লিট্‌ল্‌ হ্যাম নামক গ্রামের কোন এক মাঠের মাঝখানে । এই পায়ের ছাপ হয়ত কোন গ্রামের দেয়ালহীন কোন চালা ঘরের দিকে চলে গেছে, ঘরের বিপরীত দিকে গিয়ে এ দাগ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এই পদচিহ্নগুলো যার দ্বারাই  সৃষ্টি হয়ে থাকুকনা কেন –প্রতিটি চিহ্নই একই ভাবে ছয় ডায়ামিটার ব্যাসের গভীর গর্তের সৃষ্টি করে এগিয়ে গেছে।

    এই চিহ্ন সৃষ্টিকারী যদি কোন জন্তুর হয় ,তবে কোথায় সে থাকে? কোথা থেকে বের হয়? লোকের হন্যে হয়ে এর হদিশ খুঁজে বের করতে তৎপর হয়ে উঠলো। অন্য একটি গ্রামে দেখা গেল জন্তুটি যেন হামাগুড়ি দিয়ে একটি প্রশস্ত নর্দমার পাইপের ভেতরদিয়ে ঢুকে বিপরীত দিকে বেরিয়ে এসেছে। এই নর্দমার দুপ্রান্তে সেই বিশেষ পায়ের ছাপ সুস্পষ্ট ভাবে ধরা পড়েছে। কোথাও আবার মনে হয় ছাপগুলো জমাট বাঁধা বরফের উপর জ্বলন্ত আগুনের তাপে তৈরি। উলবেরীর গির্জার দরজায়ও ঠিক এরকম উত্তপ্ত লোহার তৈরী চলন্ত কোন জন্তুর পায়ের ছাপ দেখা গেল।

    এই রহস্যময় পদচিহ্নগুলি শত শত লোকের স্বচক্ষে দেখবার সৌভাগ্য হয়। এরপর দৈনিক বিভিন্ন সংবাদ পত্রের অফিসে হাজার হাজার চিঠিও আসতে থাকে। সকলের মনেই একটি প্রশ্ন –কি-কি এগুলো? কোথা থেকে কে এই সব পদচিহ্নগুলো এঁকে দিয়ে যাচ্ছে? সকলেরমনেই এক বিপুল বিস্ময়। সীমাহীন জিজ্ঞাসা!!

    ডলিশ নামে এক গ্রামের কাছেও এই লম্বা টানা পায়ের ছাপে পাওয়া গেল। ছাপগুলো যেন পাশের ঘন সন্নিবিষ্ট ছোট ছোট গাছের জঙ্গলের ভিতর দিকে এগিয়ে গেছে। কুকুর এনে যখন ঐ আগাছার বনের রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করা হল, কুকুরগুলো  আর্তচীৎকার ঐ স্থান থেকে পিছিয়ে এল। তাদের কিছুতেই আর ঐ বনের ভিতর কিন্তু প্রবেশ করানো গেল না।

       বিভিন্ন অনুমানঃ

     প্রকৃতিবিজ্ঞানী রিচার্ড আওয়েল ‘ইলাস্‌ট্রেটেড লন্ডন নিউজ’ পত্রিকায় এক পত্রে তাঁর অভিমত প্রকাশ করলেন। তিনি জানালেন, জন্তুটি হয়ত বা ‘ব্যাজার; নামে কোন নিশাচর জন্তু বিশেষ। তিনি নির্দেশ করেন, ব্যাজার চলার সময় তার সামনের পায়ের চিহ্নের উপর পিছনের পা ফেলে চলে। যদিও এই জন্তুটি শীতকালে জড়ভাবে শীত কাটায়, তবুও কখন কখনও ক্ষুধার তাড়নায় খাদ্যের অন্বেষণে শীত কালেও ইতস্ততঃ বাইরে ঘুরে বেড়ায়।

              বিভিন্ন জন এই জন্তুটি সম্বন্ধে বিভিন্ন মত পোষণ করেন। কেউ বলেন এটি শেয়াল, কেউ বলেন উদ্‌বিড়াল, আবার কেউ বা ব্লেন-এটা নিশ্চয় কোন বনবিড়ালের কাণ্ড! কারোর অভিমত-এটা গাধা ,আবার কেউ বললেন, এটা অবশ্যই ভাঙা নাল বিশিষ্ট কোন ঘোড়ার বাচ্চা। কোন এক সৌখিন প্রকৃতিবিজ্ঞানী ইঙ্গিত করলেন, এটা নিশ্চয় ক্যাঙ্গারুই হবে। ক্যাঙ্গারুটি হয়ত কোন ভ্রাম্যমান বন্য পশুশালা থেকে পালিয়ে এসেছিল। আবার সবার অগোচরেই হয়ত এটা নিজের খাঁচায় ফিরে গেছে।    

       অভিযুক্ত জন্তুটি ইঁদুর খরগোশ, কাঠবেড়াল, ব্যাং-ইত্যাদি বহু ভাবে বহুজনের দ্বারা বহু কিছু হিসাবেই কল্পিত হতে থাকলো।

      রেভারেন্ড হেনরী ফাড্‌সেন নামে একজন ধর্ম আজক মত প্রকাশ করলেন যে এটি কয়েকটি বিড়ালের থাবার দাগ। আর একদল গ্রাম বাসীর বিশ্বাস, যে-কোন একটি বড় জাতের ভল্লুক মাথা মোটা কোন লাঠি নিয়ে অন্য কোন জন্তুকে অনুসরণ করেছে। কিন্তু তার নাগাল হয়ত সে পায়নি। লাঠিটির অন্য দিকে দুটো ডালের দোকাঠা সংযোগ স্থল হওয়াতে হয়তোবা ওটার দুটো প্রান্ত ছিল।

      স্থানীয় লোকজন কিন্তু কিছুতেই তা বিশ্বাস করেনি। সন্ধ্যার পর বহু লোকই ঘরের বাইরে বেরোতে অস্বীকার করতে থাকে ।ফায়ার প্লেসের আগুনের পাশে বসা মুরুব্বীদের ফিস ফাস কথা শুনে শিশুরাও ভয়ে পাশের ছোট্র ঘরে বা আলমারির আশে পাশে লুকিয়ে থাকতো। ডেভন শহরে এই শীতে শয়তানের আগমন ঘটেছে, বড়দের এই ভয় বিহবল বস্ত্রস্ত ভাব দেখলে ছোটরা ভয় পাবে বই কি !