একদিন কাজের অবসরে একজন বয়স্কা মহিলা তার শিশু নাতনীসহ তার গ্রামের বাড়ীর রান্নাঘরে বসেছিলেন।হঠাৎ তিনি শিশুটির আতঙ্কিত চিৎকার শুনে সচকিত হয়ে ওঠেন।অসহায় শিশুটির নিষ্পাপ চোখে ফুটে ওঠে এক নতুন খেলা-শিশুটির মনকে গতানুগতিক খেলা থেকে ফিরিয়ে ভিন্নমুখী করার খেলা।কিন্তু এই খেলাটি যে কি ভয়ঙ্কর ও রহস্যজনক তা না দেখলে কেউ অনুমান করতে পারবেন না।বৃদ্ধাটি আতঙ্কিত নাতনীর কাছে ছুটে গিয়ে যা দেখেন তাতে তিনি নিজেও অতিমাত্রায় শঙ্কিত ও ভীতবিহবল হয়ে ওঠেন।আর আশ্চর্যের বিষয়,শত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও অনুসন্ধান সত্বেও এই রহস্য ভেদ করা আজ পর্যন্ত কারো পক্ষে সম্ভবপর হয়নি।বৈজ্ঞানিকদের কাছে আজও এই বিষয়টি অতল অন্ধকারেই রয়ে গেছে।বাস্তবানুগ কার্যকারণ আজও কেউ খুঁজে বের করতে পারেন নি ।

এই ঘটনার সুএপাত হয় দক্ষিণ স্পেনের কর্ডোবা শহরের অদূরে বেলমেজ নামে একটি গ্রামে।১৯৭১সালের আগস্ট মাস।সকাল বেলা-দিনটি ছিল বেশগরম।রান্নাঘরের মেজে ছিল গোলাপী টালিতে ঢাকা।খেলায় ব্যস্ত শিশুটির চোখের সামনে টালির উপর আপনা থেকে হঠাৎ একটা মুখের ছবি ভেসে ইঠলো। চেহারাটিতে যন্ত্রণার ছাপ পরিস্ফুট–একটু লক্ষ্য করলেই তা বেশ বুঝতে পারা যায়। মুখের ভাবটি অত্যন্ত বিষণ্ণ। চাউনিটি অত্যন্ত করুণ। যে রঙ দিয়ে মুখের ছাপটি আঁকা হয়েছে, আশে পাশে কারো পক্ষেই তা চিনবার সাধ্য হল না।বাড়ীর লোকজন আতঙ্কের সাথে লক্ষ্য করলেন, চেহারাটি মুছে ফেলবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও তা মোছাতো গেলই না বরং ছবিটির চোখ দুটো বিস্তৃত থেকে বিস্তৃত  হয়ে  উঠল।আর মুখের ভাবটি হয়ে উঠলো আরও করুণ, আরো বিষাদময়।

বাড়ীর মালিক আতঙ্কে উদ্ভ্রান্ত হয়ে মেজেটি ভেঙেই ফেলে দিলেন।আর এই ভৌতিক ও রহস্যময় টালিগুলো বদল করে মেজেটা কংক্রিটে আস্তর করে দিলেন।কিন্তু আশ্চের্যের ব্যাপার-তিনটি সপ্তাহও পার হতে পারলো না-মেজেতে আবার একটি চেহারার ছবি ফুটে উঠলো।এবার কিন্তু চেহেরাটা আগের চেয়েও যেন স্পষ্ট হয়ে উঠলো।চেহারাটার প্রতিটি অংশ ও বৈশিষ্ট্য পরিষ্কার ভাবে দেখা গেল।

গ্রামের সরল সাধাসিধা মন-মানসিকতার লোকের জন্য ব্যাপারটা অত্যন্ত জটিল বলে মনে হল।তারা ধারণাই করতে পারলোনা ব্যাপারটা কি হতে পারে।তারপর স্থানীয় বিজ্ঞ কর্মকর্তারা এগিয়ে এলেন।এ ব্যাপারে তারা রীতিমত মাথা ঘামানোও শুরু করলেন।

তারা এসে যে-সব জায়গায় এসব মুখের ছবি ফুটে ওঠে সেই সব জায়গা কেটে ফেলে দিতে আদেশ দিলেন। সরকারী ভাবে অনুসন্ধান বিশেষজ্ঞ দ্বারাও  পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হল।তারা বিভিন্ন ভাবে এই ব্যাপারে সঠিক সমাধানে আসতে চেষ্টা করলেন।তাদের আদেশে শ্রমিকেরা মেজে ভাংচুর করে সবটা মেজে খুঁড়ে মাটি সরিয়ে ফেললো ।আর আশ্চর্যের বিষয়-সেখানে বেরিয়ে এল একটি মধ্য যুগীয় কবর খানা।

মাটি খোঁড়ার আগে একের পর এক মুখচ্ছবি ঘরের মেঝেতে ফুটে উঠতে থাকলো।প্রথম ও দ্বিতীয় মুখের ছবি ফুটে ওঠার পর পরই আবার তৃতীয় মুখের ছবি ফুটে উঠলো।তারপর চতুর্থ, তার পর পর্যায় ক্রমে অসংখ্য মুখের ছবি একসঙ্গে ফুটে উঠতে থাকলো। রান্নাঘরটি তালাবদ্ধ করে সীলমোহর করে দেওয়া হল।একজন নারীর চেহারার ছবি সহ আরো চারটি চেহারার ছবি মেজেতে ঘুরে ফিরে অঙ্কিত হতে থাকলো ।এই মহিলার ছবিটি ঘরের অন্য এক অংশেও অঙ্কিত হয়ে উঠল।কিন্তু এরাই ছিল সর্বশেষ।এই অদ্ভুত ঘটনাটি যেমন অতর্কিত ভাবে শুরু হয়-তেমনি অতর্কিত ভাবেই বন্ধ হয়ে যায়।

এই সব অদ্ভুত ভৌতিক চেহারা বহু বিজ্ঞ বিশারদকে এই বাড়ীতে টেনে আনে।এই সব বিজ্ঞজনের মধ্যে যাঁরা সবচেয়ে বেশী কঠোর ও রূঢ় প্রাকৃতিক লোক ছিলেন-যাঁরা এই আধিভৌতিক ব্যাপারে মোটেই বিশ্বাসী ছিলেন না-তাঁরা ও প্রমান করতে পারেননি যে এগুলো মানুষের সৃষ্টি।এই রহস্যময় মুখচ্ছবি দেখে তাঁরা রীতিমত হতবাক হয়ে থাকেন।যদিও বাড়ীটিতে আলট্রাসেন্‌ সিটিভ মাইক্রোফোন গ্রথিত করে ছবিগুলো মানুষের তৈরী কিনা তা ধরবার প্রয়াস চালিয়ে ছিলেন।কিন্তু বৃথা। কোথায় এর রহস্য ? আলট্রাসেন্‌ সিটিভ মাইক্রোফোন ব্যাবহারের ফলে এই ফোন গুলো কতগুলো অদ্ভুত ভাষায় শব্দ রেকর্ড করে।সেই ভাষা এমন-যা রীতিমত অশ্রাব্য। বিশেষজ্ঞরা অদ্ভুত এক নতুন ভাষায় তাদের কথার শব্দ শুনতে পান।ভীত শঙ্কিত গোঙ্গানী ও আর্তনাদের শব্দও এই রেকর্ডে ধরা পড়ে ।এই শব্দ গুলোর সঙ্গে আতঙ্কিত চেহারাগুলোর বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যায়।তাদের চেহারায়,চোখের দৃষ্টিতে অত্যাচারের ফলে বেদনার বহিঃপ্রকাশের সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি বিশেষজ্ঞরা ভালভাবেই লক্ষ্য করেন।

বেলমেজ গ্রামের ঘরের মেজের মুখের ছবির সন্তোষজনক কোন কারণ বা ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত কেউ উপস্থিত করতে পারেননি। বিশেষজ্ঞরা এইটুকুই শুধু বলেন যে-বাড়ীটি কোন এক সময় নিশ্চয় কোন হৃদয় বিদারক,দূঃখজনক ঘটনাবলীর সংঘঠনস্থল হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। তাঁরা মনে করেন ,হয়ত মধ্যযুগে এই নিদিষ্ট স্থানে অত্যাচার জনিত কারণে কিছু সংখ্যক লোক নিষ্ঠুর ভাবে মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য হয় এবং সেই সব  হতভাগ্যের আত্মারা হয়ত আজও মুক্তি পায়নি।–কিংবা এমন কোন দুর্ঘটনা এই স্থানে ঘটেছিল-যারা ইন্দ্রজাল,যাদুটোনা বা ডাইনীবিদ্যা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত হয়ে করুণ মৃত্যুবরণ করেন আর সেই সব-হতভাগ্য মৃত লোকের মুখচ্ছবি ঘরের মেজেতে বারবার ফুটে ওঠে।–যাদের আত্মারা মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় মানুষের কাছে এভাবেই আকুল মিনতি জানাচ্ছিল।

Images Collected From Google