মিসৌরীর সেন্ট লুইতে মিসেস জে, এইচ কিউরান নামে এক ভদ্র মহিলা বাস করতেন। পাণ্ডিত্য বলতে তার কিছুই ছিলনা। ইতিহাস সম্বন্ধেও তার বিন্দু মাত্র জ্ঞান ছিলনা সামান্য বই পড়ার আগ্রহ ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে মনোযোগ দিতেও তাকে কেউ দেখেনি কোনদিন ।ভাষার ইতিবৃত্ত সম্বন্ধে তো জ্ঞান থাকবার কথাই নয়।
কিন্তু বিধাতার কি অদ্ভুত লীলা। এই মহিলার হাত দিয়েই বেরিয়ে এসেছে লেখার বিচিত্র ফুলঝুরি ! আর স্রোতের মত বেরিয়ে আসা এই লেখাগুলো দেখে আটলান্টিকের উভয় তীরের পণ্ডিত ব্যক্তিরাও দীর্ঘদিন রীতিমত হতবাক হয়ে রইলেন।
মিসেস কিউরান আত্মা, আধ্যাত্মিকতা-মাধ্যম ইত্যাদি বিষয়ের ঘোর বিরোধী ছিলেন।তা সত্বেও তাকে একবার একটি আত্মা আনার ব্যাপারে অংশ গ্রহণ করতে হয়।
পেশান্স অয়ার্থের আগমণঃ
১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই জুলাই আত্মা আনার জন্য সবাই নিয়োজিত।মিসেস কিউরানও তাদের একজন হয়ে আত্মা আনার কাজে শরিক হয়েছেন।আত্মা আনার উইজা বোর্ডে (Ouija) মিসেস কিউরানের হাত হঠাৎ পেশান্স ওয়ার্থের নাম লিখে চললো। আর আশ্চর্য, তার পর থেকে মিসেস কিউরান ও পেশান্স ওয়ার্থ দুজনের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বের সূত্রপাত হল।
মিসেস কিউরানের লেখার মাধ্যমে অথবা তার কথায় জানা যায় পেশান্স ওয়ার্থের জন্ম হয় সপ্তদশ শতকে। পেশান্স ওয়ার্থ বলেন, ইংল্যান্ডের ডর্সেটে তার জন্ম। তিনি তার পিতামাতার আমেরিকায় বসতি স্থাপনের বিস্তৃত বিবরণ দেন। আর এই বসতি স্থাপনের সময়ে এক রেড ইন্ডিয়ান যুদ্ধবাজ দলের হাতে তার মৃত্যু হয় বলে জানান।
তারপর বেশ কয়েক বছর ধরে ঘন ঘন বসার পর –পেশান্স ওয়ার্থ বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক উপন্যাসের কাহিনী বর্ণনা করে গেলেন। প্রতিটি উপন্যাসের ভাষা ও রচনাশৈলী ভিন্ন। আর ঐ উপন্যাসগুলোর বিষয়বস্ত কখন ও খৃষ্টের সমসাময়িক পটভূমির ভিত্তিতে লেখা ‘সরি টেল্স’-এর মত উপন্যাস। আবার কখন ও উনবিংশ শতাব্দীর পটভূমিতে লেখা ‘হোপ টু ট্রু ব্লাডের মত পাণ্ডিত্য পূর্ণ উপন্যাস ।এসব উপন্যাস মানুষের মনে রীতিমত বিস্ময়ের উদ্রেক করে।
সমালোচকদের প্রশংসাঃ
‘‘হোপ টু ট্রু ব্লাড’ উপন্যাসটি সমালোচকদের প্রচুর প্রশংসা অর্জন করল।এথেনিয়াম পত্রিকার প্রতিবেদক বইটি কিভাবে লেখা হয় জানতেন না। তিনি উৎসাহ ভরে লিখলেন ‘চরিত্রগুলো সুন্দর ও যথাযথ ভাবে লেখনির মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। কথোপকথন সুন্দর ,ভাষায় প্রকাশ ভঙ্গী আকর্ষণীয় ,গভীর ,সংযত এবং পরিশীলিত অনুভূতি সম্পন্ন ।এক কথায় –বইটি অনন্য।
মিসেস কিউরান একাদিক্রমে দুইটি কিংবা তার বেশী উপন্যাস একই সঙ্গে লিখে যেতে পারতেন, ঠিক যেভাবে পেশান্সওয়ার্থ বর্ণনা করে যেতেন।
তিনি হয়ত একটি বই এর এক-পরিচ্ছেদ লিখলেন, তারপর আবার সম্পূর্ণ অন্য বিষয় ভিত্তিক অন্য জিনিস নিয়ে অন্য বই এর আর-এক অধ্যায় লিখতে শুরু করলেন। আর তারপর আবার প্রথম বই লেখার কাজে মনোনিবেশ করলেন। কিন্তু বিষয় বা প্রসঙ্গ একটার সঙ্গে আর একটা গুলিয়ে যেত না।
তিনি কেবল উপন্যাস লেখাতেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখলেন না, তিনি কবিতাও লিখতে পারতেন।তার কাছে সমসাময়িক গদ্য কিংবা পদ্যের বিভিন্ন বিষয়বস্তুর উপর প্রশ্ন করা হলে তিনি আরও চমকপ্রদ উত্তর লিখে যেতে পারতেন।এ ব্যপারে তার জ্ঞানগর্ভ অভিমত সকলকে চমৎকৃত করতো। তার সমৃদ্ধ ভাষাজ্ঞান দেখে সকলে বিমোহিত হতেন। রচনা, রচনাশৈলী ,ভাষা ও বিষয়বস্ত্র উপর আগাধ পাণ্ডিত্য ও ভাব ব্যঞ্জনার উপর আগাধ দখল তার ‘টেলকা’ উপন্যাসটির মধ্য দিয়ে বিশেষভাবে হৃদয়ঙ্গম করা যায়। ইংরেজীতে রচিত মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডের সামাজিক ও আর্থিক পরিমণ্ডলকে নিয়ে যে উপন্যাসটির সৃষ্টি ,সেই সামাজিক কিংবা অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলের উপর মিসেস কিউরানের মোটেই পড়াশুনা ছিলনা।মিসেস কিউরানের সীমিত জ্ঞান তার নিজের পক্ষে এসব গ্রন্থ লেখা মোটেই সম্ভবপর ছিলনা।পেশান্স ওয়ার্থ তার সবচেয়ে বড় সহায় ছিলেন।তিনি তা আকপটে স্বীকার ও করতেন। পেশান্স ওয়ার্থর উত্তরোত্তর জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় মনোবিজ্ঞানীদের বিস্ময়ের মাত্রা বাড়িয়েই চললো।কিন্ত মিসেস কিউরানের কাছে পেশান্স ওয়ার্থ ছিলেন অত্যন্ত আনন্দদায়িকা বন্ধু ।আর এই বন্ধুটি প্রায়ই তার প্রিয় বন্ধুকে অতীতের প্রাণস্পর্শী ও মোহনীয় গল্প প্রাঞ্জল ভাষায় শুনিয়ে তার আনন্দ বর্দ্ধন করতেন।