জ্যোৎস্না রাতের তৈলচিত্র, Stay Curioussis

Zohann Zoffany. Image source: Image

জার্মান শিল্পি য়োহান যোজেফ জোফানির আঁকা জ্যোৎস্না রাতের তৈলচিত্র শিল্পকর্ম আমাদেরকে পরিচিত করায় প্রাচীন ইতিহাসের সাথে, যে পৃথিবী বহু আগেই হারিয়ে গিয়েছে কালের আবর্তে। সেই ইতিহাস আমাদের প্রাচীন ঢাকার ইতিহাস। তার চিত্রকর্মে দেখা যায় কর্মমুখর একটি নৌকার ঘাট। প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা নদীর পাড়। এটি ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়। হয়তো কোন এক জ্যোৎস্না রাতে চিত্রকর সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন এবং মনের মাধুরী মিশিয়ে একেঁছিলেন এই তৈলচিত্র। এত রাতেও রয়েছে লোক সমাগম। আজো আমরা তাই দেখতে পাই সদরঘাট এলাকায়, ঘাটের এ চিত্র আজও বদলায়নি। ২০২০ সালে আজ অমরা স্বশরীরে ১৭৮৭ সালের নদীর এই ঘাটের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারছিনা কিন্তু এই চিত্রকর্মের মাধ্যমে অনুধাবন করতে পারি আমার গৌরবান্বিত অতীত ঢাকা। তৈলচিত্রটির একপাশে আগুনের কুন্ডলি দেখা যাচ্ছে। হয়তো কেউ শীত পোহাতে আগুন জ্বালিয়েছিল। অথবা, কোন হিন্দু মৃতদেহের শেষকৃত্য হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে। তারই পাশে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে মোগল স্থাপনার আদলে কলম্বো সাহেবের সমাধি। এই সমাধি সম্পর্কে জানা যায় বিশপ হেবারের স্মৃতিকথা থেকে। তিনি ১৮২৪ সালে ঢাকায় আসেন এবং নারিন্দার খ্রিষ্টান কবরস্থানে গিয়েছিলেন। সেই সময় ওখানকার কেয়ারটেকারই নাকি জানিয়েছিলেন, ওটা কলম্বো সাহেবের সামাধি; কেয়ারটেকার এর বেশি কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। কে এই কলম্বো সাহেব? কলম্বো সাহেব সম্পর্কে শুধু জানা যায় যে, তিনি ইংরেজ কোম্পানীতে চাকুরি করতেন এবং ১৭২৪ সালে তাকে এখানে সমাহিত করা হয়। তিনি ছিলেন খ্রিষ্টান। কিন্তু তিন তলা উচুঁ দৃষ্টিনন্দন এই সমাধি সৌধটি কোন যেনতেন ব্যাক্তির হতে পারে না। পাশে আরো দুটো ছোট ছোট সমাধির উপর স্থাপত্যকাঠামো দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেগুলো অতি সাধারন। এমনওতো হতে পারে যে, য়োহান যোজেফ এর কোন আত্বীয় এই কলম্বো সাহেব, যার স্মৃতি রক্ষার্থে তিনি এই ছবিটি একেঁছিলেন। ১৭৮৭ সালের আঁকা এই তৈলচিত্র শিল্পকর্মটি ঢাকার প্রাচীনতম চিত্রগুলির মধ্যে একটি। যার ক্যাপশনে ছিল “নাগাপন ঘাট, নারিন্দা, ঢাকা, ১৭৮৭।” আজ এত বছর পরে এসে আমরা আমাদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি য়োহান যোজেফ ও বিশপ হেবারকে আমাদের ঐতিহাসিক ঘটনা গুলো তুলে ধরার জন্য।

জ্যোৎস্না রাতের তৈলচিত্র, Stay Curioussis

Monument of Mr Colombo. Image Source: Google