রাশিয়ার রেড আর্মির একজন যুবতী সৈনিক। যুদ্ধের নৃশংসতা, কর্মব্যস্ততা তার মনকে অতিষ্ট করে তুলেছিল।তার ওপর হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে ক্লান্তি ও বিরক্তিতে তিনি রীতিমত অধৈর্য হয়ে উঠেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তিনি রাশিয়ার পক্ষে মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে ফ্রন্টলাইন ফাইটার হিসাবে যুদ্ধ করেছিলেন। যুদ্ধ যখন শেষের পথে তখন একদিন তিনি জার্মানীর বোমার শেলে মারাত্মক রকমের আঘাত পান।আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা চললো। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরও তিনি কিছুতেই সেরে উঠছিলেন না।তার এই সেরে উঠতে বিলম্ব হওয়াটাই ছিল তার বিরক্তি ও ক্লান্তির মূল কারণ।  

      পরবর্তী কোন এক সময় উক্ত মহিলা,যার নাম নাইনেল কুলাগিনা, স্মৃতির পাতা হাতড়িয়ে ব্যক্ত করেন যে একদিন আমার ভীষণ রাগ হল। মনে হল আমার জীবন যেন সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ হয়ে গেছে। নিজেকে রীতিমত বিপর্যস্ত বোধ করলাম একদিন ধীর পদক্ষেপে একটি দেয়াল আলমারির দিকে হেঁটে হেঁটে এগিয়ে গেলাম।হঠাৎ তাকের উপর থেকে একটা জগ আপনা থেকেই নড়ে উঠলো ।এবং তা তাকের কিনারা থেকে মাঝেতে পড়ে গিয়ে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল। এ পতনের কারণ আমি খুঁজে পেলাম না।

      এ ধরনের আরো বিস্ময়কর ঘটনা ঘটলো আমার জীবনে। হঠাৎ আপনা থেকে ঘরে বাতি জ্বলে ওঠে, আবার তা নিভেও যায়; দরজা আপনা থেকে খোলে-বন্ধ হয়; থালা বাসন টেবিলের ওপর এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে যায়।এ কি বিস্ময়! কারুর হস্তক্ষেপ ছাড়া কিভাবে এই জড় পদার্থ গুলো নড়াচড়া করে ? আমার কাছে ঘটনা গুলো কেমন যেন ভূতুরে বলেই মনে থাকলো ?  

      নাইনেল মনে করলেন এ গুলো নিশ্চয় কোন দুষ্ট প্রেতাত্মার কাজ, যারা মানুষকে বিরক্ত করতে ভালবাসে ।কিন্তু তিনি পরে অনুভব করলেন যে, কোন বস্তুর নড়াচড়াটা যেন তার ভেতর থেকেই আসছে ।তিনি মনকে একক ভাবে সন্নিবেশিত করার কায়দা আয়ত্ব করলেন আর তার ক্ষমতা  বাইরে প্রচারের এবং প্রকাশেরও সুযোগ পেলেন। তার এই ক্ষমতার ব্যাপারে জনৈক নমভ্‌ই প্রথম ঔৎসুক্য প্রদর্শন করলেন। একবাক্স দিয়াশলাই তিনি একটি বেঞ্চের উপর দিয়ে ছড়িয়ে দিলেন। নাইনেল ওগুলোর ওপর কিছুটা দূরত্ব রেখে তার দুহাত একত্রে আঁকড়িয়ে ধরলেন ।হাত দুটো তিনি এবার ঝাঁকাতে শুরু করলেন। এভাবে হাত ঝাঁকাতে তার বেশ কষ্ট হচ্ছে-বেশ পরিশ্রম করে একাজ করছেন বোঝা গেল।আর সবাইকে আবাক করে দেখা গেল কাঠিগুলো নড়েচড়ে সবগুলো বেঞ্চের একদিকে জড় হয়ে গেল।তার পর আরো বিস্ময় -কাঠিগুলো একটি একটি করে মেজেতে পড়তে থাকলো !

     এরপর নাইনেলকে নিয়ে আরো বহু পরীক্ষা নিরীক্ষা চললো।নাইনেলের কার্যকলাপের বিভিন্ন ছবি তোলা হল। ৬০ টির ও বেশী ছবির মাধ্যমে নাইনেলের এসব কাজ ধরে রাখা হল। সবচেয়ে উল্লেখ যোগ্য যে ঘটনার ছবি তুলে রাখা হয় তা হচ্ছে, স্যালাইন পানিতে পূর্ণ কাচের ট্যাঙ্কের কাঁচা ডিমভাঙা । গভীর মনোযোগ সহকারে তিনি ডিমের সাদা অংশ ও কুসুমটি পৃথক করতেন ।এই পৃথকীকরণের সময় তিনি সেই ট্যাঙ্ক থেকে বেশ কয়েক ফিট দূরে অবস্থান করতেন।

        তার দেহে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি লাগিয়ে সে সময় পরীক্ষা করে দেখে গেছে যে তিনি সেই মুহূর্তে বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ও মানসিক ভাবে খুব চাপ বোধ করেন।

        ডাক্তার জেনাভী সারযেইয়েভ তার ওপর পরীক্ষা চালিয়ে তার চতুর্দিকের বৈদ্যুতিক ভারসাম্যতার পরিমাপও গ্রহণ করেন। ডিমের কুসুমটি পৃথক করার মুহূর্তে এ স্থানের ভারসাম্যতা সেকেন্ডে চারগুণ বেড়ে যায় ।

        ডাঃসারযেইয়েভ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, এই বৈদ্যুতিক কম্পন চুম্বকের ঢেউ-এর মত কাজ করে। তিনি সর্বসমক্ষে জানান যে ,যে মুহূর্তে এই চুম্বকের কম্পন শুরু হয় -নাইলেন যে জিনিসের উপর দৃষ্টি দেন বা মন সন্নিবেশিত করেন-জিনিসটি চুম্বকত্ব প্রাপ্ত হয়। বস্তুটি  অচৌম্বক জাতীয় হলেও তার শক্তি উক্ত বস্তুর উপর কাজ করে ।এই কারণেই জিনিসটি তার দিকে আকর্ষিত হয় বা বিকর্ষিত হয় ।

#Images Collected from Google