উনিশ শতকে ফিলাডেলফিয়াতে ডাঃএস.উইয়ার মিচেল নামে এক খ্যাতিনামা স্নায়ু রোগ বিশেষজ্ঞ বাস করতেন।প্রচন্ড শীতের রাত।সারাদিন আপারেশনের ধকলে শ্রান্ত ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে তিনি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসেছেন।অল্পক্ষণের মধ্যে নিদ্রা এসে তার চোখ দুটোকে আচ্ছন্ন করে দিল।চেয়ারে বসে কখন যে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন তা বুঝতেও পারেন নি।
দরজায় হঠাৎ কড়া নাড়ার শব্দ হল। তিনি চমকে জেগে উঠলেন ।চোখ কচলাতে কচলাতে দরজার কাছে দিকে এগিয়ে গেলেন।দরজা খুলে তিনি দেখলেন একটি কৃশকায় মেয়ে দরজায় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে প্রচণ্ডতে হুহু করে কাঁপছে ।গায়ে তার সুতার বোনা একটি শাল মাত্র।সে ডাক্তার কে কাতর অনুরোধ জানাল যে তিনি যেন তার অসুস্থা মাকে একবার দেখতে জান।অত্যন্ত বিনয়ের সাথে সে এ কথাও জানালো যে তার মায়ের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।
ডাক্তার তার ডাক্তারী ব্যাগটি নিয়ে তৎক্ষনাৎ মেয়েটিকে অনুসরণ করলেন।বরফের ভেতর দিয়ে মেয়েটি তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চললো।তারপর তারা প্রাচীন জীর্ণ দশাগ্রস্থ বাড়ীর কাছে এসে থামলন।মেয়েটি ধীর পদক্ষেপে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে লাগলো। ডাক্তার ও তাকে বিনা বাক্য ব্যয়ে অনুসরণ করে এগিয়ে চললেন ।তারা বারান্দা অতিক্রম করে একটি ঘরে প্রবেশ করলেন।সেই নির্জন ঘর টিতে তিনি একজন রুগ্ন মহিলার দেখা পেলেন।তাকে দেখেই তিনি চিনতে পারলেন,-মহিলাটি বহুপূর্বে তার গৃহপরিচারিকার কাজ করতো। তিনি রোগীর বিছানার কাছে এগিয়ে গেলেন।রোগীকে পরীক্ষা করে তিনি বুঝতে পারলেন যে রোগটি নিমোনিয়ায় দাড়িয়েছে।সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রেসক্রিপশন লিখে প্রয়োজনীয় ঔষুধ আনতে মেয়েটিকে পাঠিয়ে দিলেন।তারপর মহিলাটির আরামের জন্য ডাঃ মিচেল যথাসাধ্য সেবা শুশ্রষা করলেন।মহিলাটির এরকম কর্তব্যপরায়ণ একটি মেয়ে আছে বলে তাকে অনেক অভিনন্দন জানালেন।
মেয়েটি ত মৃতঃ
ডাক্তারের কাছে এই কথা শুনে মহিলাটি অবাক বিস্ময়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।তিনি ডাঃ কে জানালেন যে তার মেয়েটি মাত্র একমাস আগে মারা গেছে। ডাক্তারকে আলনায় মেয়েটির ঝুলন্ত শাল ও আলমারীর এক কোণে রাখা জুতো জোড়া দেখিয়ে মহিলাটি তার মেয়ের জন্য চোখের পানিতে ভেসে অনেক আক্ষেপ করলেন।
বিস্মিত ডাক্তার এগিয়ে গিয়ে দেখলেন এটি সেই লাশ-যেটি ঐ দুঃখী মেয়েটি  তার কাঁধের চতুপার্শ্বে জড়িয়ে নিয়েছিল। এটি গায়ে দিয়ে গিয়েই মেয়েটি তার দরজায় কড়া নেড়েছিল। শালটি রীতিমত শুঁকনো অবস্থায় ভাজ করা র‍য়েছে।ভাজ খুলে ঐ রাত্রে কেও সেটা গায়ে দিয়েছে বলে মোটেই মনে হয় না।
যে মেয়েটি তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে এসেছিল তাকে আশেপাশে কোথাও আর খুঁজে পাওয়া গেল না।মেয়েটি কি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল? ডাক্তারের কাছে সে যেন একটি বিরাট জিজ্ঞাসা হয়ে রইল।

Image Source: Google