কলম্বিয়ায় ককা উপত্যকার একটি আখের ক্ষেত। একজন কৃষক তার ট্রাক্টরটি নিয়ে কাজ শুরু করলেন। হঠাৎ করেই বিকট এক শব্দ। তাকিয়ে দেখলেন, ট্রাক্টরের নিচে কিছু একটা আটকে গিয়েছে। নিচে নেমে যা দেখলেন, তাতে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেলো তার। ট্রাক্টরের নিচে প্রায় চার টনের আস্ত এক মুখোশ!

কৃষিজীবী লোকটি সেদিন পাওয়া মুখোশের বিষয়টি একেবারে বেমালুম চেপে গিয়েছিলো। কিন্তু এসব খবর তো আর বেশি দিন লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তাই কিছু দিনের মাঝেই সবার সামনে চলে আসলো মুখোশের গল্পটি। আর সেই সাথে বের হয়ে আসলো মালাগানা সংস্কৃতির কতোশত না জানা কথা!

১৯৯২ সালে ওই একই এলাকা থেকে মালাগানা সংস্কৃতির বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী উদ্ধার হয়। এর মধ্যে অন্যতম একটা সোনার চিমটে, যা ভ্রূ ঠিক করতে ব্যবহার করতেন প্রাচীনকালের অভিজাত ব্যক্তিরা।

কতো যে ঘটনা জড়িয়ে গেলো হঠাৎ পাওয়া এই মুখোশটির সাথে! একটি সোনার মুখোশকে কেন্দ্র করে খুন, লুটপাট এবং আরো না জানি কতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার যোগসূত্র তৈরী হয়ে গেলো!

প্রায় ৫০০ বর্গমিটার বিস্তৃত এই চাষের জমিটি শুধুমাত্র এই মুখোশের কারণেই পরবর্তীতে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক খননের স্থান হিসেবে সবার কাছে প্রতীয়মান হয়। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে মালাগানা সংস্কৃতির আরো অনেক প্রত্নসামগ্রী উদ্ধার হয়। তার মধ্যে ছিলো একটি সোনার চিমটা। ভ্রু ঠিক করতে সেটি ব্যবহার করতেন প্রাচীনকালের অভিজাত ব্যক্তিরা।

চার টনের এই সোনার মুখোশ মিলে যাওয়াই যেনো কাল হয়ে দাঁড়ালো। শত শত সমাধি ধ্বংস করা হলো। আরো বেশি সোনা খুঁজে পাওয়ার লোভে চলতে থাকে খনন আর খনন। আর এরই মাধ্যমে প্রত্নতত্ত্ববিদদের সামনে কতো যে গল্প বের হয়ে আসে, তার কোন শেষ নেই।

খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ সাল থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৬০০ বছর স্থায়ী হয়েছিলো কলম্বিয়ার কালিমা সংস্কৃতি এবং মালাগানা সংস্কৃতি এই কালিমা সংস্কৃতিরই একটি অংশ ছিলো। ১৯৯২ সালে মাটির নিচ থেকে এই সভ্যতার নানা সামগ্রী আবিষ্কৃত হয়।

সোনার বিভিন্ন সামগ্রী ছাড়াও রহস্যময় কিছু সমাধি এবং সিরামিকের মডেলও পাওয়া গিয়েছিলা সেখানে। কলম্বিয়ার রাজধানীতে রাখা হয়েছে এ সব সামগ্রীগুলো। ধারণা করা হয়, মৃত্যুর পরে অভিজাত ব্যক্তি বা পুরোহিতদেরকে বিরাট আকারের এই মুখোশগুলো পরিয়ে সমাধিস্থ করা হতো। আবার অনেকে বলেন, সাধারণ মানুষকেও তার পরিবার থেকে এ ধরনের মুখোশ উপহার দেয়া হতো।

শুধু কৃষিকাজ নয়, নগরায়নের ফলে এই সংস্কৃতির বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানও ধ্বংস হয়েছে আগেই।

এই অমূল্য মুখোশগুলো ও তার সাথে উদ্ধার করা প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তুগুলো আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেয় হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার সাথে, পরিচয় করিয়ে দেয় আমাদের পূর্বপুরুষদের সাথে। ইতিহাসের এ সমস্ত অজানা অলি-গলিতে বিচরণই যেনো প্রতিবার নতুন করে আমাদের ইতিহাস উদ্ধারের তৃষ্ণাকে বৃদ্ধি করে।