প্রাচীন মিশরের রাজাদের উপাধি ছিল ‘ফেরাউন’। ‘রামিসেস দ্য সেকেন্ড’ পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র ফেরাউন, যাকে মিশর সরকার পাসপোর্ট ইস্যু করেছে এবং পাসপোর্টে তার পেশা দেখানো হয়েছে একজন রাজা হিসাবে।
মিশরীয় সাম্রাজ্যের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ফেরাউন ছিলেন দ্বিতীয় রামিসেস। রাজবংশের তৃতীয় শতকে তার অভিষেক ঘটে এবং তিনি আনুমানিক দীর্ঘ ৬৭ বছর মিশরের শাসক ছিলেন। তিনি ক্যানানে মিশরীয় নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে লিভ্যান্টে বহুসংখ্যক সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দেন। দক্ষিণে নুবিয়াতেও তিনি অভিযান পরিচালনা করেছিলেন বলে বাইত আল-ওয়ালি এবং জারফ হুসেইনের রচনায় উল্লেখ পাওয়া যায়। এ কারণে দ্বিতীয় রামিসেসকে ‘দ্য গ্রেট’ উপাধি দেয়া হয়।
রামিসেসকে সম্মান জানিয়ে বা স্রেফ প্রচারণা পাওয়ার জন্য এই পাসপোর্ট বানানো হয়নি। অন্য এক কারণে মিশর সরকার পাসপোর্ট ইস্যু করেছিল। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে হলে ফিরে যেতে হবে ১৮৮১ সালে। সে বছর এক রাখাল প্রথমবারের মতো এই গোপন কুঠুরি সন্ধান পায়। সেখানে ছিল দ্বিতীয় রামিসেসসহ আরো ৫০জনের মমি। দ্বিতীয় রামিসেসের সমাধিক্ষেত্রে প্রথমে নদী উপত্যকাতেই ছিল। কিন্তু রাজ্যের পুরোহিতরা সন্দেহ করেছিলেন যে, লাশ চুরি হয়ে যেতে পারে। তাই লাশ সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সারকোজাস কিংবা পাথর দিয়ে বানানো কফিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয় সে মমি। অনেক প্রতিপত্তি ও সম্পদ থাকার পরও ফারাওয়ের এই কফিন ইতিহাসের মতই যেন হারিয়ে গেছে। আচমকা ১৮৮১ সালে এক রাখাল দ্বিতীয় রামিসেসের মমির খোঁজ পায়। উদ্ধার করার সময় দ্বিতীয় রামিসেসের মমি সম্পূর্ণ অক্ষত ছিল। এমনকি তিন হাজার বছরেরও বেশি সময়ে তার মাথার চুল নষ্ট হয়নি। উদ্ধারের পরই মমিটি কায়রো জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়। কিন্তু জাদুঘরের আবহাওয়ার জন্য ১০০ বছরের ব্যবধানে ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে এই মমি।
ফারাওয়ের মৃতদেহ সংরক্ষণ নিয়ে আধুনিক যুগে মিশর সরকারকে যথেষ্ট ঝামেলা পোহাতে হয়। রামিসেসের মমিতে ব্যাকটেরিয়া জন্মে পঁচন ধরতে শুরু করে। তখন জাদুঘর কর্তৃপক্ষ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করতে থাকে। সে সমযয়ে পৃথিবীতে মমি পুনরুদ্ধারের একমাত্র ব্যবস্থা ছিল ফ্রান্সে। দেশটির নিয়মানুসারে জীবিত অথবা মৃত যে কোনো ব্যক্তি প্রবেশ করতে চাইলে অবশ্যই তার সঙ্গে বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে। যেহেতু রামিসেসের মমি টিকিয়ে রাখতে হলে তাকে ফ্রান্সে নিয়ে যেতেই হবে। বাধ্য হয়ে মিশরীয় কর্তৃপক্ষ তিন হাজার বছর আগের মৃত ফেরাউনের নামে পাসপোর্ট তৈরি করে। ফেরাউনের পাসপোর্ট বানানো হয় ১৯৭৪ সালে। পাসপোর্ট রামিসেস-এর জন্ম তারিখ দেয়া হয় খ্রিস্টপূর্ব ৩০৩ সাল এবং পেশা হিসেবে উল্লেখ করা হয় রাজা (মৃত)। বহনকারী বিমান অবতরণ করলে রাষ্ট্রীয় সফরে আসা অন্য যে কোনো রাজার মতই ফেরাউনের মমিকেও সামরিক অভিবাদন জানানো হয়। ফলে একমাত্র ফেরাউন হিসেবে দ্বিতীয় রামেসিস অন্য কোনো দেশের সামরিক সম্মান পেয়েছেন।
তথ্য সূত্র ডেইলি বাংলাদেhttp://xn--n6b.com/