সাধারণত অনুমান করা হয় যে ডায়নোসর এই পৃথিবী থেকে ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে । তবুও অনেক ডায়নোসরের উত্তরসুরী এখনও আমাদের মাঝে বিরাজ করছে। যে কোন জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেই আমরা তাদের দেখতে পাই। দু’জন বৈজ্ঞানিক দাবি করেন যে পাখিরাই আসলে ডায়নাসোরদের উত্তরসূরী।

হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের রবার্ট টি, ব্যক্কার ও ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পিটার গ্যলটন দাবী করেন যে, আদিম যুগের পাখির যে কঙ্কাল পাওয়া যায় তাদের সঙ্গে ডায়নোসরদের কঙ্কালের বহুলাংশে মিল রয়েছে। এদের দাবীর ভিত্তি হল — কোন কোন বৈজ্ঞানিক ঐ কঙ্কালগুলো ডায়নোসরের কঙ্কাল বলে মনে করেন। বেশীর ভাগ পেলিওএনটো লজিষ্টরা বা ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাণীর সম্বন্ধে গবেষকরা মনে করেন, উড়ন্ত সরীসৃপ, পাখি, ডায়নোসর এবং ক্রোকোডিলিয়ান জাতীয় প্রাণীর উদ্ভব হয় থিওডনশিয়ান প্রাণীর ক্রম বিবর্তনের ফলে। এইসব প্রাণী পৃথিবীর বুকে ২০০ মিলিয়ন বছর আগে বিচরণ করত। ব্যাঙ্কার ও গ্যালটন রীতিমত উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেন যে, প্রাচীন যুগের প্রাচীনতম পাখির জীবাশ্ম আর্কিওপটেরাইক্স প্রজাতির শ্রেণীভূক্ত আর এদের আকৃতি ছিল একটি কাকের মত এবং মাত্র ১৪০ মিলিয়ন বছর আগে এরা এই পৃথিবীর বুকে বিরাজ করত। সুদূর অতীতে বিরাজিত তাদের সম্ভাব্য জাতি ডায়নাসোরদের বহু পরে এই জগতে অসে।

প্রাচীন যুগে ১৪০ মিলিয়ন বৎসর ধরে পৃথিবীর সমতলের, বনজঙ্গল ও জলাভূমিগুলো ছিল বৃহত্তম প্রাণী ডায়নোসরদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। তারপর অনুমান করা হয় সম্ভবতঃ ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে ডায়নোসরদের হঠাৎ করেই মৃত্যু হয় এবং পৃথিবী থেকে তারা চিরতরেই হারিয়ে যায়। তাদের এই হঠাৎ অবলুপ্তির কারণ কিন্তু আজ পর্যন্তও সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভবপর হয়নি।

জগতের শত শত অমিমাংসিত রহস্যের মধ্যে এ ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান তার যথার্থ কারণ খুঁজে বের করতে পারেনি। বহু বৈজ্ঞানিক এ ব্যাপারে বহুভাবে তাদের বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু ডায়নোসর তো কেবলমাত্র একটি প্রজাতিরই ছিল না – – কত বিভিন্ন প্রজাতির ডায়নোসরই তো এই জগত জুড়ে বিচরণ করতো , সকলেরই কেন একই পরিণতি হলো — এর উত্তর কে দেবে ? চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে পরিচালকেরা কত ভাবেই না ডায়নোসরকে পর্দায় দেখিয়ে থাকেন। আর তা দেখিয়ে ছেলে বুড়ো সকলকেই অপার আনন্দ দিয়ে থাকেন। প্রাক – ঐতিহাসিক যুগের এসব ডায়নোসররা কত বিভিন্ন প্রজাতির ছিল, তা নির্ণয় করা আজ কঠিন । এদের কেউবা ছিল অলস প্রকৃতির তৃণভোজী । আবার কেউ কেউ অন্যপ্রাণী শিকার করে তাদের ক্ষুন্নিবৃত্তি করত।

পেলিওএনটোলজিষ্টরা – – যারা ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাণীর আকৃতি প্রকৃতি নিয়ে গভীরভাবে ভাবনা চিন্তা করেন ও গবেষণা করে থাকেন , তাদের মতে ডায়নোসররা ছিল অত্যন্ত বোকা প্রকৃতির । কিন্তু আধুনিক গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে জানা যায় যে বর্তমানের বুকে হাঁটা বা সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীগুলোর চেয়ে বেশী বোকা তারা অবশ্যই ছিল না।

পৃথিবীর প্রায় সকল মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলেই এই অবলুপ্ত ডায়নোসরদের দেহাবশেষের দেখা মেলে। আধুনিক বৈজ্ঞানিকরা এ রকম সম্পূর্ণভাবে ডায়নোসরদের বিলুপ্তির কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে বের করতে পারেননি। গবেষণার মাধ্যমে ভুড়ি ভুড়ি কারণ দাঁড় -করানো হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এগুলো সকলের কাছে নিতান্তই অদ্ভুত ও অবাস্তব বলেই প্রতীয়মান হয়। কারো কারো সিদ্ধান্ত হল , এদের অবলুপ্তির কারণ উড়ন্ত সসার থেকে শিকারী দল এদের শিকার করে নিধন করে। কেউ বলেন, নোয়াহ , যখন বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তু তাঁর নৌকায় তুলে নেন তখন এই বিশালাকৃতি ডায়নাসোরের ঐ নৌকায় স্থান সংকুলান হয়নি। কাজেই একটানা বিরামহীন বন্যায় তাদের মরতে হয়েছে। কেউ আবার এই অভিমত প্রকাশ করেন যে গুহামানবরা নির্বিচারে ডাইনোসরদের হত্যা করে আর তাদের অবলুপ্তির প্রধান কারনই হল এইটি। এই যুক্তি ধোপে টেকে না — কারণ ডায়নোসর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে গুহামানবদের আগমনের কোটি কোটি বছর আগে।

আবার কারো ধারণা আকস্মিক কোন দারুণ বিপদপাতের দরুণ প্রশান্ত মহাসাগর থেকে চাঁদের উৎপাটন জনিত কারণে এরা নিশ্চিহ্ন হয়েছে । অবশ্য আদৌ যদি এ ধরণের কোন কিছু ঘটে থাকে ! বেশীর ভাগ জ্যোতির্বিজ্ঞানীই এই ধারণা বা যুক্তিতে সন্দেহ পোষণ করে থাকেন । তাদের মতে জগতে উন্নততর জীবনের অবির্ভাবের কোটি কোটি বৎসর আগে এ ধরণের ঘটনা ঘটে থাকলেও থাকতে পারে।

কেউ অভিমত প্রকাশ করেন যে লেমিং- এর মত পাইকারী হারে একই সঙ্গে বিভিন্ন প্রজাতির আত্মহননও এর কারণ হতে পারে । এমনকি একজন গবেষক বলেন যে ডায়নোসররা প্রাচীন জগতের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে বিরক্তিতে তারা মৃত্যুবরণ করে ।

আবার কতগুলো কল্পনা প্রাথমিকভাবে কিছুটা সত্য বলে ধরে নেয়া গেলেও পর মুহর্তেই তা যুক্তির তুবরীতে উড়িয়ে দেওয়া যায় ।রোগ ও পরজীবী : রোগ ও পরজীবীর আক্রমণ জনিত কারণে এরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে বলে যে অনুমান করা হয় তা সঠিক বলে মেনে নেয়া যায় না । প্রশ্নথেকে যায় যে — এই বিশাল ও বিস্তীর্ণ পৃথিবীর বুকে বিভিন্ন মহাদেশ জুড়ে কত বিভিন্ন প্রজাতির ডায়নোসর ঘুড়ে বেড়াত । একই সঙ্গে সমগ্র জগতের ডায়নোসররা মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে – তাও কি সম্ভবপর ? তা কি বিশ্বাসযোগ্য ?

কসমিক বিকিরণ : কসমিক বিকিরণ এর ফলে এদের বিলুপ্তি ঘটেছে বলে যে ধারণা করা হয় — তাও মেনে নেয়া যায় না। কেউ কেউ বলেন , গ্যালাস্ফির সুপারনোভা নক্ষত্রের বিস্ফোরণের ফলে পৃথিবীতে তেজস্ক্রিয়তা বেড়ে গিয়ে পরিবেশ দূষিত করে তোলে। তার এই পরিবেশ দূষণের ফলেই তাদের মৃত্যু ঘটে। তাই যদি হয় তবে তৎকালীন অন্যান্য স্তন্যপায়ী বৃহদাকার জন্তুদেরও তা থেকে রেহাই পাওয়ার কথা নয়। তেজস্ক্রিয়তার ফলে কেবল ডায়নোসররাই আক্রান্ত হল, আর বাকীদের কিছুই হবে না ?

অনাহারজনিত কারণে : মাংসাসী ডায়নোসরদের তৎপরতা হয়তো বেড়ে যায় – – – – যে কারণে তারা তৃণভোজী ডায়নোসরদের হত্যা করে নিজেদের ক্ষুন্নিবৃত্তি করে। আর এ কারণেই হয়তো তৃণভোজী ডায়নোসরদের বিলুপ্তি ঘটে। আবার এর উল্টোটাও ঘটা অসম্ভব ছিল না। হয়ত অন্য কোন কারণ বশতঃ তৃণভোজী ডায়নোসরদের মৃত্যু ঘটে যার ফলে মাংসাসী ডয়েনোসরদের খাদ্যের অভাব প্রকটভাবে দেখা দেয়। তাই তারা অনাহারে মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য হয়।

দৈহিক গঠনগত অসামঞ্জস্যতা : পরিবেশের তুলনায় ডায়নোসর ছিল অতিকায় জীব। আর এই ধারণাটাতে আমাদের কিছুটা প্রত্যয় বা বিশ্বাস জন্মে। মাটির নীচের থেকে ডায়নোসরের যে সব অতিকায় ফসিল বা জীবাশ্ম পাওয়া গেছে তাতে কোন কোন প্রজাতির পিটুইটারী গ্ল্যাণ্ড অতিমাত্রায় বড় বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। আমরা জানি এই পিটুইটারী গ্রন্থি দ্বারা জীব দেহের বৃদ্ধি সাধিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। এই অতিমাত্রায় বড় গ্রন্থির কর্মক্ষমতা ডায়নোসরের দেহে দ্রুত রাসায়নিক পরিবর্তন আনে। এ কারণেই হয়তো বা এদের তাড়াতাড়ি মৃত্যু ঘটে। তবে কিছু কিছু প্রজাতি — যেমন হাইপসিলেপোডন জাতীয় ডায়নোসর আট ফিটের চেয়ে লম্বা ছিল না। অতিকায় ডায়নোসরদের সঙ্গে সঙ্গে এইসব অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকৃতি ডায়নোসরদেরও মৃত্যু হল কেন ?

ক্ষয় প্রাপ্ত মস্তিষ্ক — টাইসিব্যাটোপস নামে চ্যাপ্টা ও সরীসৃপ জাতীয় ডায়নোসরের গলার চতুর্দিকে একটি আবরণ ছিল। এই জীবটির দৈর্ঘ্য ছিল ২৫ ফিট, ওজন ছিল পোনে দুই টন। আর আশ্চর্য – এর মস্তিষ্ক ছিল ছোট্ট একটি আখরোটের আকৃতির ।

ডিম খেকো স্তণ্যপায়ী –অন্যান্য অনেক জন্তু ডায়নোসরের ডিম খেয়ে সাবার করত। এই ডিম খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সন্দেহের কোন অবকাশ থাকতে পারে না। কিন্তু ডিম খেয়ে সাবার করলেও জীবটি যে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে – তা কি সম্ভব বলে মনে হয় ? শত শত যুগ ধরে বিভিন্ন প্রাণী কুমীর ও কচ্ছপের ডিম খেয়ে আসছে। কিন্তু কুমীর ও কচ্ছপ তো আজও দুনিয়ার বুকে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে।বার্ধক্যঃ জাতিগতভাবে বার্ধক্যজনিত কারণে তারা বিলুপ্ত হয়েছে বলে যে ধারণা করা হয় তা মেনে নেওয়া যায় না। কারণ আমরা জানি যে, ক্রমধারা বজায় রাখতে তারা অবশ্যই কর্মক্ষম ছিল।

গত শতাব্দীতে এর চেয়েও জ্ঞানগর্ভ ও যুক্তিসমত ধারণার উদ্ভব হয়েছে। সেই ধারণা অনুযায়ী উপরিউক্ত প্রশ্নগুলোর সমাধান সম্পূর্ণরূপে খুঁজে না পেলেও কিছু কিছু এমন তত্ত্ব পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলো থেকে আমরা তাদের দেহগত তত্ত্বের কার্যকারণের সঙ্গতিপূর্ণ জবাব খুঁজে পাই।

১৯৭২ সনে বন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টিম ডায়নোসরের আটটি ডিম আবিষ্কার করেন। এদের মধ্যে দুটি ছিল একেবারে অক্ষত অবস্থায়। ফরাসী পীরেনীজের কর্ভিরেস অঞ্চলের একটি প্রস্তরের দেয়ালে এগুলো পাওয়া যায়। প্রতি ডিমগুলোতে খেলিসের সঙ্কোচনের (Thinning) চিহ্ন পরিলক্ষিত হয় – যা আজকাল অনেক পাখি ও সরীসৃপের ডিমে দেখা যায় । এই সঙ্কোচন জনিত কারণে বহু পাখি ও সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। হরমোনের ব্যাঘাত জনিত কারণে এই সঙ্কোচন ঘটে বলে বৈজ্ঞানিকরা অনুমান করেন। পরিবেশগত কারণে এই হরমোনের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় বলে সকলের ধারণা।

যখন এই অবস্থার সৃষ্টি হয় তখন ডিমের খোলস অত্যন্ত ভঙ্গুর হয়ে পড়ে এবং সময়ের আগেই এগুলো বিনষ্ট হয়ে যায় । অথবা যথেষ্ট পরিমানে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করতে না পারার দরুণ ভিতরের ভ্রূণগুলো নষ্ট হয়ে যায়। অতিরিক্ত পরিমানে ডায়নোসরের বংশবৃদ্ধিই পরিবেশের উপর চাপ সৃষ্টি করে আর পরিবেশে চাপ সৃষ্টির কারণেই তাদের বিলুপ্তি ঘটে বলে অনুমান করা হয়।

তবে পরিবেশগত কারণে ডায়নোসরদের অবলুপ্তির বহু পর্ব থেকেই কোন কোন ক্ষেত্রে অন্য কোন বৃহৎ ও অজানা কারণে ইতিমধ্যেই ডায়নোসরদের বংশ ধ্বংস প্রাপ্ত হতে শুরু হয়।শীতল মৃত্যু : উত্তপ্ত CRETACEOUS PERIOD – এ তাদের বিলুতি সাধিত হয়। এই সময় বড় বড় পর্বত শ্রেণীর সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে কেবলমাত্র জলবায়ুর উপরেই প্রভাব বিস্তার করেনি, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের তাপের সৃষ্টি করে বিভিন্ন গাছপালার জীবনেও নানা বৈচিত্র্য নিয়ে আসে। কোথাও গাছপালা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। আবার কোন অঞ্চলে অন্য ধরণের বৃক্ষরাজির উদ্ভব হয় ও পৃথিবীর বুকে নূতন নূতন জীবনের সঞ্চার করে। এই বৈচিত্র্যময় আবহাওয়া নিঃসন্দেহে বহু ডায়নোসরের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে যেই সব উওপ্ত অঞ্চলে এদের মৃত্যু হয় — যে সব স্থানে অতিমাত্রায় ডায়নোসরের সমাবেশ ছিল।

এই ধরার বুকে একদা সঞ্চরণশীল বৃহত্তম জন্তু ডায়নোসরের মৃত্যুর বা অবলুপ্তির সবচেয়ে বড় কারণ হিসাবে বিভিন্ন ফুল বিশিষ্ট মুষ্টিমেয় কিছু বিষাক্ত ও বণ্য চারা গাছকে দায়ী করা যেতে পারে। ১৯৭৪ খৃষ্টাব্দের লণ্ডনের কিউ বোটানিকাল গার্ডেনের ডঃ টনি সোয়াইন সাম্প্রতিককালে একটি অনুমানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে অভিমত প্রকাশ করেন যে অন্যান্য সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর ন্যায় ডায়নোসরদের আহার্য দ্রব্যের স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা অত্যন্ত কম ছিল। স্বাদগ্রহনের গ্রহি সমূহ (TASTE BUDS) হয়ত ততটা কর্মক্ষম ছিলনা। যে কারণে এরা নির্বিচারে প্রচুর পরিমানে ঘাসপাতা ইত্যাদি তৃণ জাতীয় খাদ্য ভক্ষণ করতো । ডঃ সোয়াইনের মতে এই তৃণ জাতীয় খাদ্যের বেশীর ভাগই ছিল ফার্ণজাতীয় চারাগাছ । উদাহরণ স্বরূপ তিনি উল্লেখ করেন যে হেড্রোস নামীয় ডায়নোসর দৈনিক ৪০০ থেকে ৮০০ পাউণ্ড সবুজ ঘাসপাতা খেয়ে থাকে।স্বাদ গ্রহণের অপারগতার কারণে নিজেদের অজ্ঞাতসারেই তারা বিষ ভক্ষণ করত বলে কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করেন। ১৩০ মিলিয়ন বৎসর আগে যখন বিষাক্ত ফুল বিশিষ্ট চারা গাছের উম্ভব হয় , কোন কোন গাছ অন্য গাছের বা অন্য কিছুর সংমিশ্রণে অতিরিক্ত পরিমাণে মাদকদ্রব্যে পরিণত হয়। আধুনিক সরীসৃপ নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষায় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে যে তৎকালীন ডায়নোসরদের মাদকদ্রব্য সম্বন্ধে যেহেতু কোন রকম জ্ঞান ছিল না — কোন লতাগুল্মে মাদকতা সৃষ্টি হয় তা বুঝবার ক্ষমতাও তাদের ছিল না সেহেতু তারা অতিরিক্ত মাত্রায় এইসব গাছপালা ভক্ষণের ফলে অজ্ঞতা বশতঃই নিজেদের দেহে নিজেরাই বিষ প্রয়োগ করে।

কিন্তু ডঃ সোয়াইনের অভিমত ভিন্নতর। তিনি নির্দেশ করেন যে, ডায়নোসরদের যে সব দেহাবশেষ প্রায়ই পাওয়া যায় সেগুলোর অবস্থান রীতিমত সংযত। দেহের কোন রকম প্রতিক্রিয়া – যথা সংকোচন , প্রসারন বা আক্ষেপের লক্ষণ সেগুলোতে ধরা পড়ে না — যা নাকি বিষক্রিয়ার ফলে থাকা একান্তই উচিত ।

অতিরিক্তমাত্রায় মাদকদ্রব্য ভক্ষণের ফলে ডিমগুলোর উপরে হয়তো তার প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, যে কারণে ডিমের খোলসগুলোতে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেয়। সেই কারণেই হয়তো বা খোলসগুলোর শক্ত হবার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। আমরা জানি (D.D.T) ডি.ডি.টি-র কারণে বর্তমান যুগে পাখিদের বেলার এই লক্ষণ ধরা পড়েছে এবং ডি.ডি.টি-র ব্যবহার সেজন্যেই সীমিতকরণ করা হয়েছে।

তৃনভোজী ডায়নোসরদের মৃত্যুর কারণে মাংসাসী ডায়নোসরদের খাদ্যাভাব ঘটে এবং এই খাদ্যাভাবের কারণেই হয়তো বা মাংসাসী ডায়নোসরদের অবলুপ্তি ঘটে। তারপর পৃথিবীরূপ নাট্যমঞ্চে নতুন কোন প্রজাতির খেলোয়াড়ের আবির্ভাব হয়ে থাকবে এবং তারাই হয়ে ওঠে সর্বেসর্বা। এরা হয়তো বা স্তন্যপায়ী প্রাণী, যারা সুদূর অতীতে কোন দিক দিয়ে হয়তো বা মানুষের পূর্বপুরুষ ছিল। কিছু দিনের জন্য হয়তো তারা উত্তরাধিকার সূত্রে এই মোহিনী জগতের বাসিন্দা হবার অধিকার লাভ করেছিল।