রানী ভবানীর কীর্তিরাজি নিয়ে কথা নয় আজ l তার সফলতার গল্প আমরা কম বেশি সবাই জানি l তাই আজ East India Company এর সাথে তার বিরোধ নিয়ে গল্প করতে চাচ্ছি।
পুরো বাংলার প্রায় অর্ধেকের বেশি অঞ্চলের ওপর দাপটের সঙ্গে কর্তৃত্ব ধরে রেখেছিলেন রানী ভবানী।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮ শতকের গোড়ার দিকে নাটোর রাজবংশের সূচনা । বানগাছির জমিদার গণেশ রায় ও ভবানীচরণ চৌধুরী রাজস্ব দিতে ব্যর্থ হয় ,খুব সম্ভবত ১৭০৬ সালের দিকের ঘটনা l এ সুযোগে দেওয়ান রঘুনন্দন জমিদারিটির বন্দোবস্ত পাল্টে নিয়ে নিজ ভাই রামজীবনের করে নিয়েছিলেন। বলতে গেলে তখন থেকেই নাটোর রাজপরিবারের উদ্ভব, ও ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠা l ১৭০৬ সালের দিকে নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন রামজীবন। যা ধীরে ধীরে আরো বিস্তৃত হয় আশপাশের এস্টেট গুলো যোগ করার মাধম্যে l পরবর্তিতে ১৭৩৪ সালের দিকে রামজীবন মারা গেলে জমিদারি অর্জন করেছিলেন রামকান্ত। রাজা রামজীবনের মৃত্যুর মাত্র বছর চারেক আগে ১৭৩০ সালে তার ছেলে রামকান্তর বিয়ে হয় ভবানীর সঙ্গে। এর পর মাত্র ১৮ বছর বেঁচে ছিলেন রামকান্ত। কি কঠিন সময় তার জন্য ,যার ওপর ভরসা করবেন রানীমা তিনিও মারা গেলেন l নবাব আলিবর্দি খান তখনকার জমিদারি ন্যস্ত করার কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি পাননি। অনেকটা নিরুপায় হয়ে তিনি একজন নারী হওয়া সত্ত্বেও জমিদারির গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেন ভবানীর ওপর। দায়িত্ব হিসেবে রানী ভবানী তখনকার রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, রংপুর, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, বীরভূম থেকে মালদহ জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল জমিদারি বুঝে পান। রানী ভবানী কার্যত প্রতিনিধিত্বকারী। এক্ষেত্রে একাধারে একজন নারী ও বিপ্লবী শাসকের প্রতিমূর্তি । ঔপনিবেশিক কালপর্বের শুরুতে আফ্রিকা থেকে শুরু করে লাতিন আমেরিকা কিংবা আরো অন্য সব দেশেও এমন চরিত্রের দেখা মেলে। তবে বাংলা তো বটেই, ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে শক্তিশালী নারী শাসক হিসেবে রানী ভবানীর গুরুত্ব বেড়ে যায় অনেকাংশে। আর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের প্রাক্কালে যখন নিজ নিজ অঞ্চলের ওপর কর্তৃত্ব ধরে রাখাটা বড় দায়, ঠিক তখনই অফুরান সাহস, সত্যনিষ্ঠা, পরহিতাকাঙ্ক্ষা ও স্বদেশপ্রেমের বলে ভবানী হয়ে উঠেছিলেন অনন্য ও অসাধারণ শাসনের প্রতিমূর্তি। নিজ আবাসভূমের স্বাধীনতা ধরে রাখতে প্রজাদের থেকেও নৈতিক সমর্থন পেয়েছিলেন বেশ ভালোভাবেই। করারোপ থেকে শুরু করে আরো নানা কারণে বাংলার অনেক জমিদার ও ভূস্বামী যখন ইংরেজদের সঙ্গে গোপন আঁতাতে লিপ্ত, রানী ভবানী ছিলেন ভিন্ন স্রোতের মানুষ। তিনি যেকোনো মূল্যে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য টিকিয়ে রাখার পক্ষপাতী ছিলেন।