বলিউড ইতিহাসে ক্রিকেটার-অভিনেত্রী প্রণয় চিরাচরিত ভাবে চলে আসছে ।গারফিল্ড সোবার্স, ভিভিয়ান রিচার্ড থেকে আজকের বিরুষ্কা , কিন্তু এত বিতর্ক আর নিবিড় প্রেমকাহিনী এক অনন্য ইতিহাস।
হ্যা বলছি বলছি বিশ্ববরেণ্য ভারতীয় অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর আর বিশ্ববিখ্যাত ক্রিকেটার মনসুর আলীখান বা পতৌদি নবাব বা টাইগার পতৌদির কথা।
টিভিতে শর্মিলাজীর একটি সাক্ষাৎকারে শুনেছি নবাব ইভনিং ইন প্যারিস দেখেছেন কিনা প্রশ্ন করায় নবাব জবাব দিয়েছিলেন যে রিঙ্কুর (শর্মিলাজীর ডাকনাম) একটা ছবিও আমি দেখিনি। শর্মিলা বলেছিলেন নবাব খুব স্ত্রী-নির্ভর ছিলেন। জল দেওয়া থেকে পোষাক গূছিয়ে দেয়া সব আমাকেই করতে হত। ঘোরতর সংসারী আর মনোমালিন্য হীন সাদা-সরল স্বামীর এই পকাপোক্ত রসায়ন খুবই দুর্লভ ।
।। *এই সময়* লিখছে ।।
বিতর্ক আর আর আবেগের মেশামেশি: পতৌদি আর শর্মিলার রূপকথাসুলভ প্রেমের অজানা কাহিনি
এই বিয়ে একেবারে বিনা সমস্যায় হয়নি। শর্মিলার পরিবার ছিল সনাতনপন্থী বাঙালি হিন্দু পরিবার। অবাঙালি মুসলমান পাত্রের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে নিয়ে আপত্তি ছিল তাঁদের। পতৌদির পরিবারও এক বলিউড নায়িকাকে পুত্রবধূ করার ব্যাপারে একটু সন্দিহান ছিলেন।
ক্রিকেট-দুনিয়ার সঙ্গে বলিউডের ঘনিষ্ঠ মেলামেশার ইতিহাস অতি পুরনো। সেই মেলামেশা অনেকক্ষেত্রেই নামজাদা ক্রিকেটারদের সঙ্গে বলিউড নায়িকাদের বৈবাহিক সম্পর্ক পর্যন্ত গড়িয়েছে। সেই সম্পর্কের তালিকায় অন্যতম বিখ্যাত নাম নবাব মনসুর আলি খান পতৌদি আর শর্মিলা ঠাকুরের সম্পর্ক। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই হৃদয় ভাসানো তবু বিতর্কিত প্রেমের ভিতরের কাহিনি।
শর্মিলা আর পতৌদির প্রেমের সূচনা ১৯৬৫ সালে। দিল্লিতে তখন একটা ফিল্মের শ্যুটিং-এর জন্য এসেছেন শর্মিলা। কয়েকজন বন্ধুর সূত্রে পতৌদির সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। শর্মিলা তখন হিন্দি সিনেমার নামজাদা নায়িকা। পতৌদিও ভারতের ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন। দু’জনেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত, দু’জনেই বিখ্যাত। শর্মিলার রূপ প্রথমেই হৃদয় জয় করে নেয় পতৌদির। পাশাপাশি শর্মিলা ছিলেন প্রাণচঞ্চল, পরিণতমনস্কা। সেই গুণগুলোর আকর্ষণ এড়াতে পারেননি পতৌদি। আর পতৌদির রসবোধ এবং বিনীত ভদ্র আচরণ টেনেছিল শর্মিলার মন। তবে চট করে শর্মিলাকে প্রেমপ্রস্তাবে সম্মত করাতে পারেননি পতৌদি। এর জন্য বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল নবাবকে। শোনা যায়, শর্মিলার মন পেতে তাঁকে নাকি একটি রেফ্রিজারেটর পর্যন্ত উপহার দিয়েছিলেন পতৌদি। কিন্তু এসব সত্ত্বেও চার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল পতৌদিকে। তার পরে বিবাহে সম্মতি জানান শর্মিলা। ১৯৬৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন দু’জনে।
তবে এই বিয়ে একেবারে বিনা সমস্যায় হয়নি। শর্মিলার পরিবার ছিল সনাতনপন্থী বাঙালি হিন্দু পরিবার। অবাঙালি মুসলমান পাত্রের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে নিয়ে আপত্তি ছিল তাঁদের। পতৌদির পরিবারও এক বলিউড নায়িকাকে পুত্রবধূ করার ব্যাপারে একটু সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কারোর কোনও আপত্তিই টেঁকেনি। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন প্রণয়ীযুগল।
বিয়ের পরেও কিছু কিছু বিতর্ক তাড়া করেছিল তাঁদের। মুসলমানকে বিয়ে করার ‘অপরাধে’ এক হিন্দু ধর্মগুরু শর্মিলাকে হিন্দু ধর্মচ্যুত করেন। তার পরেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন শর্মিলা। তাঁর নতুন নাম হয় আয়েষা সুলতানা।
তবে বিতর্ক-বাধা-বিপত্তি কোনও কিছুই প্রভাব ফেলতে পারেনি পতৌদি আর শর্মিলার ভালবাসায়। বিয়ের পরে সাংসারিক দায়িত্ব ভালভাবে পালন করার উদ্দেশ্যে ফিল্ম জগৎ থেকেও দূরে সরে আসেন শর্মিলা। তবে এ ছিল একান্তভাবেই তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এর জন্য তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে কোনও চাপ দেওয়া হয়নি— এ কথা বারবার নিজের বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন শর্মিলা। তাঁদের জুটিটিও ছিল ভারি অদ্ভুত। শর্মিলা ক্রিকেট জগতের খোঁজখবর রাখতেন, নজর রাখতেন নবাবের খেলার ওপরেও। কিন্তু পতৌদি বলিউডের ফিল্মের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র উৎসাহী ছিলেন না। এমনকী, শর্মিলার একটি সিনেমাও নাকি তিনি কোনওদিন দেখেননি। সে যাই হোক, তাঁদের ভালবাসা সবসময় অটুট থেকেছে। দু’জন সম্পূর্ণ ভিন্ন ক্ষেত্রের দুই সেলিব্রিটি দম্পত্তির সংসার সুখে-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠেছে দিন
লেখকঃ অমল কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়