হরিয়ানার থানেসর শহরের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে এক প্রাচীন সৌন্দর্য—শেখ চিলির সমাধি। ইতিহাস আর মুগ্ধতার এক নীরব ঠিকানা। সুফি সাধক শেখ চিলি, যিনি মুঘল যুবরাজ দারা শিকোহের শিক্ষক ছিলেন, তাঁর স্মৃতিতেই গড়া এই অনন্য সমাধি যেন ছোট ইতিহাসের এক সম্পূর্ণ জগৎ।
লাল বেলে পাথরে নির্মিত এই সমাধি কেবল একটি কবর নয়, বরং পুরো একটি স্থাপত্য জটিলতা। এখানে রয়েছে দুটি সমাধি—একটি শেখ চিলির, আরেকটি সম্ভবত তাঁর স্ত্রীর। রয়েছে একটি মাদ্রাসা ও একটি ছোট মসজিদ, যার ছাদ ও স্তম্ভে সূক্ষ্ম ফুলের নকশা খোদাই করা। মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে কিবলা, আর দুই পাশে খিলানখচিত খোপে খোদাই করা রয়েছে কুরআনের আয়াত।
শেখ চিলির সমাধি কমপ্লেক্সের বাইরের দেয়াল © wikipedia
মসজিদের উত্তর দিকে রয়েছে এক মুঘল বাগান, যেন জীবন্ত চারবাগ। মাঝখানে বর্গাকার জলাধার, যার পানির উৎস ছিল মাটির নিচের পোড়ামাটির পাইপ। পাইপগুলো চুন-সুড়কির আস্তরণে ঢাকা, আর এক কোণায় স্থাপিত ছিল তামার ফোয়ারা—এক অনন্য প্রকৌশল নিদর্শন।
সমাধি চত্বরের নাম এখন হর্ষবর্ধন পার্ক। এর পূর্ব দেওয়ালে রয়েছে সুসজ্জিত প্রবেশদ্বার, যেখানে দাঁড়ালে মনে হয় সময় যেন উল্টো হেঁটে চলেছে। চারপাশে ছড়িয়ে আছে ছোট ছোট কক্ষ—কোনোটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট, কোনোটি সিঁড়িসহ। প্রবেশদ্বারের বিপরীতে রয়েছে এক বিশাল ভবন, যার নিচে দরজা নেই—শুধু ওপরে একটি খোলা অংশ, সম্ভবত এখান থেকেই কোনো প্রশাসক বক্তৃতা দিতেন।
এই সমাধির পাশেই রয়েছে হর্ষ-কা-টিলা—এক প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ। খননে জানা গেছে, এখানে প্রথম শতাব্দী থেকেই মানুষের বসতি ছিল। কুশান, গুপ্ত, বর্ধন, রাজপুত, এমনকি মুঘল যুগেরও ছাপ মিলেছে এখানে—পোড়ামাটির বাসন ও ধূসর-লাল মাটির খণ্ডে বন্দি ইতিহাসের টুকরো।

শেখ চিলির সমাধি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের সংগ্রহ প্রদর্শনী © wikipedia
সময় পেলে ঘুরে আসা যায় এই নীরব ইতিহাস প্রহরীর কাছে—শেখ চিলির সমাধি, যেখানে পাথরের দেয়াল ইতিহাস বলে, আর বাতাসে ভেসে আসে সুফি আত্মার সুবাস।