প্রাচীন চীনের মানুষ বিশ্বাস করত মানুষের অন্তরে দুইটি আত্মা রয়েছে। একটির নাম হান, আরেকটি নাম পো। মৃত্যুর পরে হান শরীর থেকে বিদায় নিলেও মৃতের শরীরে পো থেকে যায়। মানুষজন তাদের প্রিয় মানুষের আত্মা পো এর একাকীত্ব ও সুখ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতো। আর তাই প্রিয় মানুষের সমাধিতে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এমনকি মানুষও রেখে আসত তারা। উদ্দেশ্য মৃতের পো যাতে পরকালীন জীবন স্বাচ্ছন্দ্যে কাটাতে পারে। এজন্য চীনের প্রাথমিক যুগের সমাধিগুলো অনেকটা বাড়ি বা রাজপ্রাসাদের মতো মনে হতো। সোনা ও রূপার জিনিসপত্র, রেশমের তৈরি কাপড়, বিভিন্ন ধরনের অলংকার, খাবার পাত্র, বাদ্যযন্ত্র এবং সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে তাদের পো’কে সঙ্গ দিতে তাদের উপপত্নী, দাস, সঙ্গীতশিল্পী, পোষা প্রাণী ও ঘোড়ার মৃতদেহও সমাধিতে রাখা হতো। ২১০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চীনের প্রথম সম্রাটের মৃত্যু হলে জীবন্ত মানুষকে কবর দেয়ার প্রথা শুরু হয়। তার মৃত্যুর পরের জীবন সুরক্ষিত রাখতে অনিন্দ্যসুন্দর এই সমাধিতে রাখা হয় পোড়ামাটির সেনাবাহিনী।
আরো রাখা হয় তার জীবন্ত উপপত্নী, শতাধিক চাকর ও বিনোদন কর্মী এবং পোষা প্রাণী। তার ৫০০ বছর পর জীবন্ত মানুষের পরিবর্তে মূর্তি রাখার প্রথা চালু হয়। প্রথমে মৃত লাশের সমান আকারের মূর্তি রাখা হতো। পরে ধীরে ধীরে মূর্তিগুলোর আকার ছোট হতে থাকে। সমাধিস্থ এই বস্তুগুলোকে বলা হতো মিঙ্গী। ষষ্ঠ থেকে নবম শতাব্দীর পর্যন্ত রাজত্ব করা তাং রাজবংশের সময়ে উৎকৃষ্ট মিঙ্গী পাওয়া গেছিল। এদের বেশিরভাগই সানকাই নামক এক বিশেষ ত্রি-রঙা কৌশলে ব্যবহার করে তৈরি করা হতো।
একটি ছবি, অনিন্দ্যসুন্দর একজন নারী পোলো খেলছে। তিনি নারী ও পুরুষের সমন্বয়ে গড়া একটি টিমের সদস্য। রঙিন একটি আকর্ষণীয় ঘোড়ার ওপর সে বসে আছে। তার বেশভূষা অনেকটা পুরুষদের মত, বহু পাকে সন্নিবেশিত চুলগুলো অগোছালো হয়ে আছে। বলের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকার কারণে তার শরীর বাঁকা হয়ে আছে। খেলার প্রতি তার মনোযোগ ও দৃঢ় অভিভূত হবার মত। জিকি নামের এই খেলাটি কমপক্ষে তৃতীয় শতাব্দী থেকে চর্চিত হয়ে আসছে। তাং রাজবংশের সময়ে একটি কবিতায় এমন একটি পোলো খেলার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। শীতল হেমন্তের সকালে সূর্যোদয়ের ঠিক আগে ১০০০ পদক্ষেপ সমান আয়তনের একটি মাঠে এই খেলাটি শুরু হতো। মাঠটি ছিল আবার ছোট দেয়াল দিয়ে ঘেরা। এই কবিতায় কবি বলকে বর্ণনা করেছেন স্বর্গীয় গুটি হিসেবে। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে উদযাপনের অনুষঙ্গ হিসেবে ড্রাম বাজানো হতো, রঙিন পতাকা উত্তোলন করা হতো। যেসব দর্শকরা খেলায় বাজি ধরতেন তাদের ভেতর বেশ উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যেত। খেলায় অংশ নেয়া প্রতিযোগীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা এতই তীব্র ছিল যে সেই কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি বলতে চেয়েছেন যে পোলো শুধুমাত্র একটি খেলা না বরং এর মাধ্যমে সামরিক প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়ে থাকে। এর কারণেই তাং রাজারা তাদের তরুণ অমাত্যদের পোলো খেলতে উৎসাহ দিতেন যাতে করে তারা সামরিক প্রশিক্ষণ নেয়ার পাশাপাশি নিজেদের ব্যক্তিগত প্রতাপ প্রদর্শন করতে সক্ষম হন এবং প্রয়োজনবোধে যুদ্ধেও তাদের এই দক্ষতা কাজে লাগাতে পারেন। পোলো খেলাটি নারী পুরুষ সবাই পছন্দ করত। রাজ্যের পণ্ডিতরাও এই খেলার নিয়মিত দর্শক ছিল।