মিশরে তখন ১৬ তম রাজবংশের যুগ। পার্সিয়ান আক্রমনের সম্ভাবনায় দিন গুণছে মিশর। সে সময় মিশরীয় সৈন্যদের তুলনায় গ্রীক সৈন্যদের কদর ছিলো অনেক বেশি। কারণ গ্রীক সৈন্যদের দক্ষতার গল্প প্রচলিত ছিলো বিশ্ব জুড়ে। এমন সময় ফারাও এপ্রিয়েজকে হত্যা করে মিশরের নতুন ফারাও হলেন রাজবংশের বাইরের একজন সেনাপতি, দ্বিতীয় আহামোস বা দ্বিতীয় আমাসিস।
এক দিন ফারাও দ্বিতীয় আমাসিসের একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে হঠাৎ করেই একটি ঈগল এসে সুন্দর এক পাটি গোলাপি কারুকাজ করা জুতা ফেলে গেলো ফারাওয়ের কোলে। প্রথমে সবাই একটু চমকে গিয়েছিলেন। ফারাও নিজেও খানিকটা হতচকিত হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরক্ষণেই তিনি একে মিশরীয় দেবতা হোরাসের একটি উদ্দেশ্য বলে মেনে নিলেন। কারণ ঈগলকে দেবতা হোরাসের পাখি বলেই মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো।
সুন্দর সেই ছোট জুতাটি দেখে ফারাওয়ের মনে এক অদ্ভূত অনুভূতি হলো। তিনি এই এক পাটি জুতার মালিককে খুঁজে বের করার জন্য মরিয়া হয়ে গেলেন। তিনি চার দিকে তার লোক পাঠালেন সেই বিশেষ নারীকে খুঁজে বের করার জন্য, যিনি এই জুতার মালিক।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর ফারাও এর লোকেরা মিশরে নুক্রেটিসে একজন ধনী গ্রীক ব্যবসায়ী ক্যারোজোসের বাড়িতে গিয়ে হাজির হলেন। সেখানে উপস্থিত সব নারীদেরকেও সেই বিশেষ জুতাটি পরানোর চেষ্টা করা হলো। তবে একজন ব্যতীত আর কেউই জুতাটি পরতে পারলেন না। বিশেষ সেই জুতোটি কোনো প্রকার কসরত ছাড়াই পরে ফেললেন একজন গ্রীক দাসী। তার নাম রোডোপিস।
রোডোপিস জানালেন, এই জুতোর পাটিটি তারই। নদীর তীরে গোসল করতে যাবার পর হঠাৎ করেই একটি ঈগল এসে তার এক পাটি জুতা নিয়ে ঊড়াল দেয়। এতে রোডোপিস ভীষণ ব্যথিত হয়েছিলেন। কারণ এই জুতো জোড়া তাকে তার দয়ালু মালিক ক্যারোজোস উপহার দিয়েছিলেন। রোডোপিস প্রমাণস্বরূপ জুতাটির অপর পাটিও ফারাও এর লোকদেরকে দেখালেন, যেটি তিনি ব্যথিত হৃদয়ে কাপড়ে মুড়িয়ে রেখে দিয়েছিলেন।
আসলে রোডোপিস একজন গ্রীক বংশোদ্ভূত নারী, যাকে ক্রীতদাস হিসেবে মিশরীয় বাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়েছিলো। তার জীবনের কষ্টে ভরা গল্প শুনে ক্যারোজোস দয়াপরবশ হয়ে তাকে কিনে এনেছিলেন এবং এই সুন্দর জুতো জোড়া তাকে উপহার দিয়েছিলেন, যা ছিলো রোডোপিসের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু।
ফারাওয়ের নির্দেশ মতে, তার লোকেরা রোডোপিসকে ফারাও এর দরবারে নিয়ে যেতে চাইলে ক্যারোজোস আর আপওি করলেন না, কেননা ফরাওয়ের নির্দেশ অমান্য করবার সাহস কারো ছিলো না।
ফারাও দ্বিতীয় আহামোস রোডোপিসকে দেখে তার সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে গেলেন এবং মুগ্ধ হয়ে তাকে বিয়ে করলেন। শুধু তা-ই নয়, গ্রীক বংশোদ্ভূত হওয়া সত্ত্বেও প্রধান রাণীর মর্যাদাও দেয়া হলো রোডোপিসকে।
কি? গল্পটি সিন্ডারেলার গল্পের সাথে ভীষণভাবে মিলে যাচ্ছে, তাই তো? হ্যা, এই রোডোপিস ছিলেন প্রাচীন মিশরীয় সিন্ডারেলা। রোডোপিসের এই গল্প থেকেই সিন্ডারেলার গল্পটি অনুপ্রাণিত হয়েছিলো কি না, তা আসলে হলফ করে বলা যায় না। কিন্তু রোডোপিসের এই গল্পটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইতিহাসবিদের লেখায় বিভিন্ন সংস্করণে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে উঠে এসেছে। যেহেতু এই গল্পটি এক সময় মিশরে বহুল প্রচলিত ছিলো, সুতরাং এ কথা বলাই যায় যে, রোডোপিসের এই গল্পটির কিছুটা হলেও সত্যতা রয়েছে।