ইবাদত খানায় বসে নানান ধর্মের কাহিনী শুনতেন সম্রাট আকবর। একদিন তিনি ধর্ম প্রধানদের উদ্দেশ্য করে বললেন , আপনারা বলেন সবই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। কিন্তু সবকিছুই কি তিনি দিয়েছেন ? মানুষ কি তবে কিছুই সৃষ্টি করেনি ? যেমন ধরুন , ভাষা। কথা বলার ক্ষমতা, মানুষের স্বর সব সৃষ্টি কর্তা দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ভাষার ব্যবহার কি মানুষের সৃষ্টি নয়? ধর্মীয় প্রধানরা হৈ হৈ করে প্রতিবাদ করে উঠলেন। তাদের মতে ভাষাও ঈশ্বরের দান।আকবর উত্তরে বললেন, আমার মনে হয় একটি শিশু তার মা বাবার কথা শুনে ,নিজের চেষ্টাতে কথা বলতে শেখে।আর কোন শিশু যদি জন্মের পর থেকে মানুষের ভাষা না শোনে, তাহলে ঈশ্বরের কৃপা থাকলেও সে কথা শিখতে পারবে না।ধর্ম ভীরুরা জোর দিয়ে বললেন, নিশ্চয়ই পারবে। আকবর সেদিনের মতো সভা মুলতবি করলেন।

            এরপর কেটে গেল চার বছর। একদিন সম্রাট ইবাদতখানাতে বসে ধর্মীয় পন্ডিত দের সাথে জমিয়ে আলোচনা করছিলেন। হঠাৎ আকবর বলে উঠলেন, চার বছর আগে একটি আলোচনা করেছিলাম, ভাষা কার সৃষ্টি ? – মানুষের না ঈশ্বরের।  মনে আছে তো আপনাদের? সম্রাটের আদেশে মীর মুনসি আলোচনার লিখিত বিবরণ পড়ে শোনাতে, সকলেরই মনে পড়ে গেল।এবার আকবর বলতে শুরু করলেন – তার পরের দিনই আমি একটি পরীক্ষা শুরু করেছিলাম। ফতেপুর সিক্রির বিভিন্ন স্থান থেকে দশটি সদ্যজাত শিশুকে এনে,তাদের আলাদা একটি বাড়িতে আজ চার বছর ধরে লালন পালন করা হচ্ছে।তাদের যারা দেখাশোনা করেছে তারাও মুক ও বধির। আমার কড়া নির্দেশে ওই বাড়ির ত্রি সীমানায় কেউ কোন শব্দ উচ্চারণ করেনি। আসুন আমরা সবাই সেই গুঙ্গা মহলে যাই, দেখি ঈশ্বরের কৃপায় তারা কতটা কথা বলতে  শিখেছে। গিয়ে দেখা গেল দশ জনের একজনও কথা বলতে পারেনা।হাত পা নেড়ে কেবল মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে।আকবর এবার বললেন – এবার নিশ্চয়ই আপনারা মেনে নেবেন, ভাষা মানুষেরই সৃষ্টি।আকবরের এই পরীক্ষা দেখে মোল্লা , পন্ডিতরা তো থ। সম্রাট আকবরের সবচেয়ে বড় গুন ছিল এটাই, তিনি অন্ধ ভাবে কোন কিছু মেনে নিতেন না। যুক্তি বা পরীক্ষার মাধ্যমে সত্যকে খুঁজে দেখার চেষ্টা করতেন নিরন্তর। এজন্যই তিনি মহামতি আকবর।

তথ্যসূত্র

1) ইতিহাসের আড়ালে – শান্তা শ্রীমানি

2) লা জবাব দেহলী অপরূপা আগ্রা – নারায়ণ সান্যাল