সত্যজিৎ রায়, বাঙালির প্রিয় ব্যক্তিত্ব। নাম শুনলেই কী মনে আসে বলুন তো?? ফেলুদা, তাই না?? ফেলুদার সেই অসাধারণ গল্পগুলো;ফেলুদা, জটায়ু আর তোপসের রোমাঞ্চকর অভিযান। সোনার কেল্লা, জয়বাবা ফেলুনাথ সিনেমাগুলো। রাজস্থানের মরুভূমির মাঝে সোনার কেল্লার সেই দৃশ্য, বেনারসের ঘাট এগুলো ভেসে ওঠে মনে।

ভেসে ওঠে সেই কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’। অপু-দুর্গার গল্প,কাশবনে পাশ দিয়ে ছুটে চলা ট্রেন। ‘অপুর সংসার’ এ অপু-অপর্ণার ভালোবাসা।

মনে পড়ে গুপী গাইন বাঘা বাইনের কথা, মনে পড়ে হীরক রাজার কথা, ভুতের রাজার কথা।

প্রফেসর শঙ্কু বা তাড়িনী খুড়োর মজার মজার সব জমজমাট গল্পের কথা মনে উঁকি দেয়।

আসলে লোকটা তাঁর অসামান্য  সাহিত্য প্রতিভা আর চলচ্চিত্র নির্মাণের কৌশল দিয়ে বাঙালির মনে এক চিরস্থায়ী ছাপ রেখে গেছেন। তাই সত্যজিৎ রায় বলতেই সেই ফেলুদা, শঙ্কু বা তাড়িনীখুড়োর গল্প,  অথবা পথের পাঁচালী, অপুর সংসার, সোনার কেল্লা, বা জয়বাবা ফেলুনাথ বা চারুলতার কথাই মনে বার বার ভেসে উঠে।

সত্যজিৎ রায়

বাঙালির কাছে সত্যজিৎ জনপ্রিয় এবং গুণী লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেই সুপরিচিত এবং সমাদৃত।

সত্যজিৎ মানেই গল্প আর সিনেমার রংবেরঙের দুনিয়া।

কিন্তু এ বহুমুখী প্রতিভাবান এই মানুষ কিন্তু শিল্পের আরও বিভিন্ন মাধ্যমে নিজের রং ছড়িয়েছেন। তিনি চিত্রনাট্যকার, গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক, শিল্পনির্দেশক এবং চিত্রশিল্পীও ছিলেন।

চিত্রকর বা ইলাস্ট্রেটর হিসেবে সত্যজিৎ বেশ উঁচুদরের শিল্পী ছিলেন। আর শিল্পের এই ক্ষেত্রটিতে তাঁর বিশেষ আগ্রহ ও ভালোবাসাও ছিল। যার প্রতিফলন পরবর্তীতে তাঁর সারাজীবনের কর্মের মধ্যেই দেখা যায়।

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী নাতি ও সুকুমার রায়ের ছেলে সত্যজিৎ তাঁদের মতোই অনেক গুণী ও বহু প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। ছবি আঁকার এই গুণটাও তাঁদের কাছ থেকেই বোধহয় বংশগতির ধারায় পেয়েছিলেন। আর তারপর নিজের চেষ্টায় তিনি তাঁর এই সৃজনশীলতার স্ফূরণ ঘটান। তাঁর প্রথম কর্মজীবন শুরুই হয় অঙ্কনশিল্পী হিসেবেই।

ছাত্রজীবনে যদিও তিনি অর্থনীতি নিয়ে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তে যান, চারুকলার প্রতি দূর্বলতা তাঁর রয়েই যায়। মা সুপ্রভা দেবীর জোরাজুরিতে তিনি শান্তিনিকেতন এ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। সেখানে গিয়ে প্রাচ্যের শিল্প ও চিত্রকলার সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে এবং প্রাচ্যের শিল্পকলাকে তিনি গভীরভাবে বুঝতে ও আবিষ্কার করতে শুরু করেন।

শান্তিনিকেতনের কলাভবনে তিনি আঁকা শিখেছিলেন তিন বছর। এরপর পড়া শেষ না করেই কলকাতায় ফেরত চলে এসেছিলেন। তবে যতদিন ছিলেন, শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন নন্দলাল বোস, রামকিংকর বেইজ, বিনোদবিহারী মুখার্জিকে। তবে তিনি বিশেষভাবে প্রভাবিত হন বিনোদবিহারী মুখার্জির দ্বারা। বিনোদ মুখার্জির প্রভাবেই তাঁর আঁকার স্টাইল পাল্টে যায়। প্রাচ্য শিল্পরীতির প্রতি আগ্রহের সৃষ্টি হয়।

এমনকি তিনি ক্যালিগ্রাফিও শিখেছিলেন বিনোদবাবুর কাছ থেকে।

শান্তিনিকেতন থেকে ফিরে এসে তিনি এক ব্রিটওশ বিজ্ঞাপন সংস্থায় জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার হিসেবে যোগদেন। সত্যজিউ নিজের মনের মতো কাজ পেয়ে গেলেন। তাঁর কাজ কোম্পানির প্রোডাক্টগুলোর ব্যবসা বাড়িয়ে দিয়েছিলো। তাঁর ইলাস্ট্রেশনগুলোও বেশ অন্যরকম ছিলো, যেমন সাবানের প্যাকেট থেকে অর্ধেক বেরোনো সাবান বা সিগারেট প্যাটেক থেকে বেরিয়ে থাকা একটি স্টিক এগুলো ক্রেতাদের মধ্যে আগ্রগের সৃষ্টি করে এবং নজর কেড়ে নিতে সক্ষম হয়। সত্যজিৎ নিজেও যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। কিন্তু শেষমেষ তিনি এ কাজ ছেড়ে দিলেন।

সত্যজিৎ রায়ের আঁকা বিজ্ঞাপন

১৯৪৩ সালের দিকে তিনি যুক্ত হন ডি কে গুপ্তর প্রকাশনা সংস্থা ‘সিগনেট প্রেস’ এ এবং সেখানে বিভিন্ন বইয়ের প্রচ্ছদ করতে থাকেন। তাঁর ডিজাইন করা বইয়ের মধ্যে  জিম করবেটের ‘ম্যানইটার্স অব কুমায়ুন’,  জওহরলাল নেহেরুর ‘দ্য ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় লেখা কালজয়ী বাংলা উপন্যাস পথের পাঁচালীর একটি শিশুতোষ সংস্করণ আম আঁটির ভেঁপু-র ওপরেও কাজ করেন। এমনকি তিনি বইয়ের ভেতরে ছবিগুলোও এঁকে দেন।  এ বইটি নিয়ে কাজ করতে গিয়েই তাঁর মাথায় পথের পাঁচালি বানানোর চিন্তা আসে। ধীরে ধীরে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণের দিকে এগিয়ে যান।

সত্যজিৎ রায়ের ডিজাইন করা বুক কভার

কিন্তু আঁকাআঁকি থেমে যায় নি তাই বলে। সিনেমার সেট ডিজাইন, চরিত্রগুলোর সাজপোশাক, কস্টিউম ডিজাইন তিনি নিজেই করতেন। তাঁর খেরোর খাতাগুলো থেকে সেরকমটাই জানা যায়।মজার ব্যাপার হলো বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন কালজয়ী সৃষ্টির সাথে সত্যজিতের পরিচয় ঘটে এই প্রচ্ছদ আর কভার ডিজাইন করতে গিয়ে।এর আগ পর্যন্ত তিনি খুব বেশি বাংলা সাহিত্য পড়েন নি।

বিভুতিভূষণের ‘চাঁদের পাহাড়’, জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’, অবন ঠাকুরের ‘আপন কথা’, ‘রাজকাহিনী’ লীল মজুমদারের টং লিং, মৃণাল সেনের ‘চার্লি চ্যাপলিন’ প্রভৃতি বইয়ের কভার ইলাস্ট্রেশন করেন সত্যজিৎ রায়। এমনকি বাবা সুকুমার রায়ের অনেক বইয়ের কভার নতুন করে ডিজাইন করেন তিনি।

সত্যজিৎ রায়ের ডিজাইন করা বুক কভার

১৯৬১ সালে তিনি শিশুতোষ ম্যাগাজিন ‘সন্দেশ’ যা কিনা তাঁর দাদু উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর প্রতিষ্ঠিত ছিল তা পুণরায় চালু করেন। বলা বাহুল্য, ঐ ম্যাগাজিনগুলোর কভার প্রচ্ছদ ও তিনিই করতেন। ছোট বাচ্চাদের জন্য তিনি রঙবেরঙের নানারকম ফুল-লতাপাতা, জ্যামিতিক স্ট্রাকচার, আল্পনা আর্টের মতো করে প্রচ্ছদ করতেন। তাঁর করা ম্যাগাজিন কভারগুলোর মধ্যে ইন্ডিয়ান ফোক আর্টের মোটিফ ব্যবহার করতেন। আঁকাগুলোর কাঠের ব্লকপ্রিন্ট করা সেরকম দেখতে হত। তাঁর করা সন্দেশ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ ও কভার ডিজাইন গুলো ছোট বাচ্চাদের অনেক পছন্দের ছিল।

সত্যজিৎ রূয়ের করা সন্দেশ পত্রিকার কভার ইলাস্ট্রেশন

এরপর শুরু হয় বই লিখা, বিশেষত গোয়েন্দা সিরিজ ফেলুদা ও অ্যাডভেঞ্চার সিরিজ শঙ্কু। এই বইগুলের প্রচ্ছদ এবং ভেতরের আঁকাগুলোও তাঁর করা। আর আঁকাগুলোর বেশ ভিন্নধর্মী ছিলো। আলোছায়ার খেলা, সিলুয়েট, বিপরীতধর্মী রঙের চমৎকার ব্যবহার যেন আঁকাগুলোকে জীবন্ত করে তুলতো। বইয়ের কভারের প্রচ্ছদ করার ক্ষেত্রে সত্যজিৎ এক অভিনবত্ব নিয়ে আসেন আর এক নতুন বেঞ্চমার্ক সৃষ্টি করে দেন। গল্পের বিভিন্ন মুহুর্তগুলো তাঁর করা প্রচ্ছদে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠত। আঁকার মাধ্যমে যেকোনো একটা দৃশ্যকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা তাঁর মতো সিদ্ধহস্ত কেউ ছিলো না।

সত্যজিৎ রায়ের আঁকা বইয়ের ইলাস্ট্রেশন; ফেলুদা,প্রফেসর শঙ্কু,তাড়িনীখুড়ো ও অন্যান্য গল্প

 

সত্যজিৎ রায়ের আঁকা বিভিন্ন বইয়ের ইলাস্ট্রেশন ও প্রচ্ছদ;পথের পাঁচালী, প্রফেসর শঙ্কু ও অন্যান্য

টাইপোগ্রাফিতেও অসামান্য দক্ষতা ছিলো সত্যজিতের। বিভিন্ন বইগুলোর কভার ডিজাইনের সময় তিনি নিজের এ দক্ষতার পরিচয় দেন।

এমনকি তিনি কতগুলো বাংলা ও ইংরেজি ফন্ট ও তৈরি করেন যেগুলো এখনো বিভিন্ন সময় ব্যবহার হয়।তিনি আমাদের নতুন ধরনের বাংলা ক্যালিগ্রাফির সাথে পরিচয় ঘটান। তিনি চারটি ইংরেজি ফন্ট তৈরি করেন – Ray Roman, Ray Bizarre, Daphnis আর Holiday Scipt. এর মধ্যে ‘Ray Roman’ আর ‘Ray bizzare’ ১৯৭১ সালে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও পায়। সত্যজিতের  ডিজাইন করা টাইপফেসগুলি দুটি পৃথক ধরনের ছিল: Architectural  (প্রতিলিপিযোগ্য) এবং Calligraphic (অ-প্রতিলিপিযোগ্য)। Architectural গুলো বিভিন্ন ম্যাগাজিন, পিরিওডিক্যালস, বইয়ের টাইটেলের জন্য এবং এগুলো পুনঃমুদ্রণযোগ্য ছিল। কিন্তু calligraphic গুলো সাধারণত পুনঃমুদ্রিত হতো না, একবারই ব্যবহার হতো।

সত্যজিতের তৈরি করা ইংরেজি ফন্ট

সত্যজিৎ রায় বাংলার প্রথম এবং সম্ভবত একমাত্র টাইপফেসের ডিজাইনার যিনি একটি সম্পূর্ণ সম্প্রদায়কে তাদের মাতৃভাষার অক্ষরের সৌন্দর্যকে ভালবাসতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। যুবক সত্যজিৎ, তাঁর ২০-৩০ বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রায়শই আধুনিক বাংলা কবিতার সংকলন ডিজাইন করতেন। কভারগুলির জন্য তিনি কোনও  উপযুক্ত metallic type খুঁজে পান নি যা কবিতার মুড বা মেজাজের সাথে যায়। তাই তিনি ক্যালিগ্রাফির জন্য নিজের দক্ষতার উপর প্রায় সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিলেন। তিনি নিজেই  অনেক নতুন বাংলা টাইপফেস তৈরি করেন যা একদম নতুন ও উদ্ভাবনী হলেও পুরোপুরি সুস্পষ্ট ও সহজপাঠ্য।

সিনেমার পোস্টারে ব্যবহৃত কিছু বাংলা টাইপোগ্রাফি

 

সত্যজিতের করা বাংলা ক্যালিগ্রাফি

নিজের সিনেমার চরিত্রগুলো কেমন হবে, বিভিন্ন দৃশ্য, সেট ডিজাইন, কস্টিউম ডিজাইন, শিল্প নির্দেশনা, সিনেমাটোগ্রাফি এসবই নিজেই করতেন সত্যজিৎ রায়। আর এ কাজগুলো বেশ ডিটেইলে এবং অত্যন্ত যত্নসহকারে নিখুঁতভাবে করতেন। সত্যজিতের সেটের অন্দরসজ্জা, সাজপোশাক সব একদম ঠিকঠাক, যাকে বলে পারফেক্ট, তাই হতো। কোনো বাহুল্য, আতিশয্য, খামতি বা বেমানান কিছুই থাকতো না। এ কারণ, তিনি নিজ হাতে পুরো প্ল্যানটা এঁকে এঁকে ডিজাইন করতেন। তাঁর একটা খেরোর খাতা থাকত, যাতে তিনি এ কাজগুলো করতেন। তিনিই সম্ভবত একমাত্র বাঙালি পরিচালক যিনি নিজে এ কাজগুলো করতেন। তাঁর একটা খেরোর খাতা থাকত, যাতে তিনি এ কাজগুলো করতেন। আঁকিয়ে হিসেবে তাঁর অসামান্য প্রতিভার আর সৃজনশীলতার প্রমাণ মেলে এই এই খেরোর খাতা থেকে।

সত্যজিতের খেরোর খাতা; হীরক রাজার দেশে সিনেমার ক্যারেক্টার আর কস্টিউম ডিজাইন

যন্তর-মন্তর,মগজ ধোলাইের যন্ত্র; ছবি- হীরক রাজার দেশে, সত্যজিতের খেরোর খাতা থেকে নেওয়া।

 

হীরক রাজার দেশের রাজসভার সেট ডিজাইন, সত্যজিতের নিজ হাতে আঁকা।

 

ভুতের রাজা, ও বিভিন্ন ভুত ও ভুতের নৃত্যের সেই চমৎকার দৃশ্যের ডিজাইন ও প্ল্যান

 

সত্যজিতের করা কস্টিউম ডিজাইন(বায়ে); তিনি নিজ হাতে কস্টিউম ডিজাইন করছেন

 

দেয়ালে ছবি এঁকে নিজের ছবির প্রচারণা নিজেই চালাতেন সত্যজিৎ রায়

সত্যজিৎ স্লাইড, পোস্টার, বুকলেট, টাইটেল, বিলবোর্ড, প্রচার সামগ্রী এবং পোস্ট প্রোডাকশন প্রয়োজনীয় সবকিছু ডিজাইন করতেন। এমনকি তিনি দেয়ালে দেয়ালে নিজ হাতে ছবি এঁকে নিজের সিনেমার প্রচারণা চালাতেন।

তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মনীষীদের পোট্রের্ট ও এঁকেছেন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, উপেন্দ্রকিশোর,সুকুমার রায়, গান্ধীজী, স্বামী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, সারদা দেবী,কার্ল মার্কস, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, অবন ঠাকুর, যামিনী রায়, মাদার তেরেসা, আইজাক নিউটন আরও অনেকের পোট্রের্ট স্কেচ করেছিলেন সত্যজিৎ।

আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রবাশিত বই ‘প্রতিকৃতি-সত্যজিৎ রায়’ এ এসব পোট্রের্ট স্থান পেয়েছে।

সত্যজিৎ রায়ের করা বিভিন্ন মনীষীদের পোট্রের্ট ; আনন্দ পাবলিশার্স এর ‘প্রতিকৃতি-সত্যজিৎ রায়’ বই থেকে নেওয়া।

 

সত্যজিৎ রায়ের করা বিভিন্ন মনীষীদের পোট্রের্ট ; আনন্দ পাবলিশার্স এর ‘প্রতিকৃতি-সত্যজিৎ রায়’ বই থেকে নেওয়া।

সত্যজিৎ আর্টের  মধ্যে অ্যাবস্ট্রা

ক্ট আর্ট ফর্মটাকে খুব একটা পছন্দ করতেন না। তাঁর মতে

এসব বাস্তবতা বিবর্জিত ও অদ্ভুত দর্শন ছবি  ছিল।

তিনি মনে করতেন ছবি হবে মূর্ত, ওরকম অদ্ভুত, বিমূর্ত নয়। মানুষের ছবি হবে মানুষের মতো, গাছের ছবি গাছের মতো। এসব অদ্ভুতদর্শন আগামাথা বোঝা না যাওয়া ছবি আঁকাকে তিনি বিমূর্ত শিল্পের নামে ফাজলামি মনে করতেন। তাঁর লিখা গল্পগুলোতেও তাঁর এ মনোভাবের প্রতিফলন ঘটে।  শেষদিকে সম্ভবত তাঁর এ চিন্তার পরিবর্তন ঘটে।

সত্যজিৎ  আঁকা থামাননি জীবনের শেষ দিনগুলিতেও। তিনি অসুস্থ হয়ে যখন হাসপাতালে ভর্তি তখন তিনি একটি ছবি আঁকেন ১১ জন মনীষীর চেহারা সম্বলিত। আসলে ছবিটিতে দেখা যায় একটি গাছ। আর মনীষীদের চেহারা লুকায়িত, সহজে চোখে ধরা পড়ে না। গাছে ডালপালগুলোই ১১ জন মনীষীর চেহারা দিয়েছে। ছবিটি দেখলে বোঝা যায় কত উঁচু মানের শিল্পী ছিলেন তিনি। এটিই তাঁর জীবনের আঁকা শেষ ছবি। এরপর আর কাগজ, কলম, পেন্সিল, তুলি, রঙের কাব্য ফুটিয়ে তোলা হয় নি তাঁর।

সত্যজিৎ রায়ের আঁকা শেষ ছবি, হাসপাতালের বিছানায় বসে আঁকা

প্রায় সাড়ে ছ ফিট উচ্চতা দীর্ঘাঙ্গ মানুষটি যে কেবল অবয়বে নয়, গুণ ও প্রতিভার দিক থেকেও দীর্ঘাঙ্গ, উঁচু হিমালয়সম তার প্রমাণ তিনি প্রতিনিয়ত দিয়ে গেছেন। তাঁর অসংখ্য শিল্পী সত্তার পাশাপাশি চিত্রশিল্পী সত্তাটিও অমর হয়ে থাকুক বাঙলির শিল্প ও চারুকলার ইতিহাসে।

তথ্যসূত্রঃ

১) https://satyajitrayworld.org/index.html২) https://www.google.com/amp/s/www.thedailystar.net/star-weekend/art/the-illustrious-life-satyajit-ray-1571014%3famp

৩) https://www.cinemaazi.com/feature/ray-the-artist-the-sketches-of-satyajit-ray

৪)’প্রতিকৃতি’ – সত্যজিউ রায়, আনন্দ পাবলিশার্স