কলম্বাস প্রকৃতপক্ষে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার অংশবিশেষ আবিষ্কার করেছিলেন -আমেরিকা তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবিষ্কার করেন নি। তা সত্ত্বেও এই দুই মহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বেশ ঘটা করে দিবসটি পালন করে থাকে। কেবল তাই নয় । আমেরিকার মিসিসিপি জর্জিও, অহিও, ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে কলম্বাস নামের কয়েকটি শহরও রয়েছে। কলম্বাস সম্পর্কে  আমাদের অনেক অজানা তথ্য উদঘাটন করেছেন মারিয়াম ডেভিস নামক একজন মার্কিন মহিলা । কলম্বাসের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল ছিল যে যেহেতু পৃথিবী গোলাকার তাই পশ্চিম দিকে জাহাজ পরিচালনা করলে মার্কোপোলো বর্ণিত প্রাচ্যের দেশগুলোতে দ্রুত এবং সরাসরি পৌঁছানো যাবে । মারিয়াম একথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন যে ,কলম্বাসের উদ্দেশ্য ছিল এটাই যে বাণিজ্য হতে উপার্জিত অর্থ দিয়ে জেরুজালেম পুনরায় জয়ের জন্য অভিযান পরিচালনা করা। মূলত এই উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য কলম্বাস তার অভিযান পরিচালনা করেছিলেন এবং জ্যোতির্বিদ্যা মানচিত্র প্রণয়ন বিদ্যা সম্পর্কে পড়াশুনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন ।এই বিষয়ে প্রকৃতপক্ষে জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে বাইবেলের সাহায্য নিয়েছিলেন। কিন্তু যেহেতু ইতোমধ্যে বাইবেলে অনেকখানি বিকৃতি এসে গিয়েছিলো ।তাই কলম্বাসের হিসেবে গরমিল ছিল।

অ্যালিজও ফার্নান্দেজের আঁকা ক্রিস্টোফার কলম্বাসের প্রতিকৃতি (সময়কাল:১৫০৫ থেকে ১৫৩৬)

প্রথমত কলম্বাসের সামনে যে প্রশ্নটি ছিল তা হচ্ছে পৃথিবীর আকার এবং এর পরিধি দৈর্ঘ্য কত ? কলম্বাসের অনুমিত দৈর্ঘ্যটি ছিল প্রকৃত দৈর্ঘ্যের এক-চতুর্থাংশ। ১৪৯২ সালে প্রথম অভিযাত্রায় মানুষ ছিল মাত্র ৯০ জন। আধুনিক মানের প্রেক্ষিতে জাহাজগুলো ছিল ক্ষুদ্রাকার টেনিস কোর্টের চেয়েও ছোট এবং প্রস্থ ৩০ ফুট ।এরকম শান্তামারিয়া জাহাজের ৪০ জন ,পিনটা জাহাজ ২৬ জন এবং নিনা জাহাজে ছিল ২৪ জন ক্রু । জাহাজের বাহিনীতে চারজন ছিল অপরাধী । একজন ছিল শাস্তিপ্রাপ্ত হত্যাকারী। ঝগড়াকালে সে একজনকে হত্যা করেছিল। অন্য তিনজন ছিল ওই হত্যাকারীদের জেল থেকে পালানোর চেষ্টায় সাহায্যকারী।

কলম্বাসের অভিযানকে স্মরণ করতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ১২ই অক্টোবর কলম্বাস দিবস পালন করা হয়।

১৪৯২ সালের ২ আগস্ট তারা জাহাজ যাত্রা শুরু করে । একই বছরের ১১ অক্টোবরে উত্তর আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের সন্ধান লাভ করেন । গুনাহটি নামের একটি দ্বীপে তারা অবতরণ করেন। পরে কলম্বাস দ্বীপটির নামকরণ করেন সান সালভেদর ।স্থানীয় আদিবাসী ইন্ডিয়ানদের সাথে দেখা হয় তাদের । সেসব অধিবাসীদের অনেকেই কলম্বাসের লোকদের হাতে ধরা পড়ে। তাদের ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করেন কলম্বাস । কলম্বাসের ধারণা হয়েছিল তারা পৌঁছে গেছেন এশিয়ায়। আর ঠিক এ কারণেই তিনি দ্বীপের নামকরণ করেন ইন্ডিজ এবং এর অধিবাসীদের ইন্ডিয়ানা বলে অভিহিত করেন । এ সময় বিশেষত সোনাদানা লুট করার উদ্দেশ্যে আশেপাশের দেশ গুলোতে ব্যাপক অভিযান চালানোর সময় কলম্বাসের ক্রু এর দল হিসপানিওয়ালা দ্বীপসমূহ (বর্তমানে হাইতি এবং ডোমিনিয়ন রিপাবলিকে বিভক্ত) কিউবা এবং আরো অনেক ছোট ছোট দ্বীপে ভ্রমণ করে সমুদ্রযাত্রা হতে ফেরার পথে সান্তামারিয়া ডুবে ধ্বংস হয়ে যায় এবং অন্যদিকে পিনটা জাহাজের ক্যাপ্টেন মার্টিন অ্যালেঞ্জো  পিনজন কলম্বাসকে পরাজিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে নিজের ইচ্ছেমত পথ অনুসরণ করেন। অবশেষে নিনা জাহাজে করে ১৪৯৩ সালের ১৫ মার্চ স্পেনের মাটিতে ফিরে আসতে সক্ষম হন কলম্বাস।

কেমন করে এই সমুদ্রযাত্রার যাবতীয় ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছিলেন কলম্বাস? জানা যায় যে কলম্বাস তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে ১৪৮৪ সালে পর্তুগালের রাজা দ্বিতীয় জনের শরণাপন্ন হলে রাজা তাকে সাহায্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিছুটা হতাশাগ্রস্থ কলম্বাস এ সময় পর্তুগালে কর্মরত তার ভাই বার্থোলিও কলম্বাসকে ইংল্যান্ডে এবং ফ্রান্সের রাজ দরবারে প্রেরণ করেন ।কিন্তু এবারও তিনি ব্যর্থ হলেন। এরপর তিনি স্পেনের রাজা ফার্ডিন্যান্ড এবং রানী ইসাবেলার দরবারে যোগ দেন । তাদের কাছে নৌ অভিযানের জন্য আর্থিক সাহায্য প্রার্থনা করলেন । এ সময় রাজা ও রানী তাকে আর্থিক সাহায্য অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে রানীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা তাকে এই বলে বোঝাতে থাকেন যে ,অভিযান এর সকল ব্যয় নির্বাহের জন্য অন্যান্য যথেষ্ট পন্থা রয়েছে। একটি ছিল পালোস শহরকে রাজঋণ পরিশোধ হিসেবে জাহাজ দিতে বাধ্য করা । অন্যটি ছিল সার্বিক জয়ের অংশ বিশেষের জন্য ইতালিয় সহায়তা লাভ করা।

রানী ইসাবেলা ও রাজা ফার্ডিন্যান্ড

তবে এসময় কলম্বাস নতুন এক পন্থা আবিস্কার করেন। তিনি ১৪৮৬ সাল হতে রাজদরবারে অবস্থান করে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের নানাভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে লাগলেন। এ সময় গির্জার পাদ্রীদের প্ররোচিত করে তুললেন কলম্বাস। স্পেনীয়রা মনে মনে আশা করত যে একদিন রাজা ফার্ডিন্যান্ড এবং রানী ইসাবেলা হবেন জেরুজালেমের রাজা ও রানী । প্রথমদিকে রাজা ও রানী এ ব্যাপারে উৎসাহ না দেখালেও পরবর্তীতে জেরুজালেম হস্তগত করার ব্যাপারে তারা উৎসাহী হয়ে ওঠেন। কলম্বাস এসময় মোসাহেবীর সুযোগ লাভ করলেন । তিনি রাজা ও রানী সভাসদদের কাছে উপস্থিত হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ধর্ম যুদ্ধে প্রবৃত্ত হবার আহ্বান জানালেন। এজন্য প্রয়োজনীয় খরচাদি তিনি অভিযান হতে এনে দেবেন বলে আশ্বাস দিলেন । কলম্বাসের প্ররোচনায় স্পেনীয়রা এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে গ্রানাডা ইউরোপ হতে মুসলমানদের বিতাড়িত করলো। গ্রানাডার যুদ্ধ পরিচালনা করতে গিয়ে স্পেন প্রভুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলে কলম্বাস তার কাঙ্ক্ষিত সমুদ্রযাত্রা হতে প্রচুর অর্থ এনে দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করলেন। এবারে  নিরুপায় হয়ে রাজা এবং রাণী অভিযানে সম্মতি দিলেন।

অভিযান হতে প্রত্যাবর্তনের পর কলম্বাস রাজা ও রানীর কাছে তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন এভাবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে ইউরোপীয় শক্তির পবিত্র ঘর অর্থাৎ আল-আকসা দখল করতে পারবে। এরপর প্রায় পনের শত লোকজনসহ ১৭ টি জাহাজ নিয়ে সোনার সন্ধান এবং ক্রীতদাস হিসাবে ইন্ডিয়ানদের ধরে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে ১৪৯৩ সালের ২৫ নভেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো সমুদ্রযাত্রা পরিচালনা করেন । এ সময় তিনি ডোমিনিয়ন গুয়াডেলুপ ,অ্যান্টিগুয়া এবং পুয়ের্তোরিকো আবিষ্কার করেছিলেন।

হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র জীববিদ্যা বিষয়ক অধ্যাপক জো ইদানিং বেশ জোরেশোরেই বলছেন কলম্বাসের বহুকাল আগেই নাকি মুসলমানরা আমেরিকা পৌঁছেছিল। ব্যারি ফেল সেইসব প্রাচীন ভাষা নিয়ে গবেষণা করেন যা ইতিমধ্যে পৃথিবী হতে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে গবেষণাকালে একবার ব্যারি ফেল পলিনেশিয়া যান এবং সেখানে আপাতদৃষ্টিতে এলোমেলো কিছু পাথর দেখতে পান। অনেক গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে এগুলো ছিল পলিনেশিয়ান প্রাচীন উপজাতিদের বর্ণমালা । আরো আশ্চর্যের বিষয় হল বর্ণমালাগুলোতে প্রাচীনকালে লিবিয়াতে প্রচলিত প্রাচীন গ্রিক এবং মিশরীয় শব্দের প্রচুর মিল রয়েছে। আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো আমেরিকা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কাজ করতো অ্যালগোনকুইয়ান নামের এক উপজাতি। এই উপজাতীয়দের শব্দ ভাণ্ডারের মধ্যে প্রচুর মিশরীয় শব্দের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ থেকে ধারণা করা যেতে পারে যে প্রাচীনকালের মিশরীয় কিংবা লিবীয় মানুষ নিশ্চিত ভাবেই আমেরিকা গিয়ে থাকবে । শুধুমাত্র সামাজিক, ব্যবসায়িক এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগ থাকলেই কোন এক দেশের ভাষার শব্দ অন্য ভাষায় স্থানান্তর হওয়া সম্ভব । যদি তাই হয়ে থাকে তবে এটা কলম্বাসের জন্মের শত শত বছর আগেই ঘটেছিল।

অ্যালগোনকুইয়ান গ্রামের 16 শতকের একটি স্কেচ

কোন এক সময় ব্যারি ফেল নিউগিনির এক গুহায় একটি লিবীয় ভাষার বইয়ের সন্ধান পান ।ব ইটির রচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব 232। রচয়িতা মামুন নামের একজন নাবিক। এখানে নিউগিনি এবং ওদের মধ্যে যোগাযোগের ব্যাপারটি আমাদের মনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। কলম্বাস নিজেও তার এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন যে, তার পিতা জেনোয়াতে সেখানকার মুসলিম নারীদের কাছে জানতে পারেন যে, ইউরোপ থেকে ভ্রমণের ক্রমাগত পূর্বদিকে জাহাজ চালিয়ে যেমন ভারতবর্ষ যাওয়া যায় তেমনি পশ্চিম দিকে জাহাজ চালিয়েও ভারতবর্ষে পৌঁছানো যায়। বর্তমানে সৌদি আরবের জেদ্দা হতে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রকাশিত একটি অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলা হয়েছে যে অনেক অনুসন্ধানের পর প্রত্নতত্ত্ববিদ, নৃতত্ত্ববিদ, গবেষক এবং ঐতিহাসিকগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে , অতি প্রাচীনকাল হতেই আমেরিকায় নানা জাতিগোষ্ঠীর আগমন ঘটে। এছাড়াও মধ্যযুগের মুসলিম বিজয়ী বীরদের কতিপয় স্থাপত্য বিদ্যমান। আমেরিকার অনেক গ্রাম, শহর, নগর এর আরবি নাম বিদ্যমান রয়েছে । লেবাননের বিশিষ্ট গবেষক এবং সাংবাদিক ডাক্তার ইউসুফ মারওয়া এযাবত 565 গ্রাম ও শহরের ইসলামী এবং আরবি নাম মূল্যবান গবেষণার মাধ্যমে আমাদেরকে জ্ঞাত করেছেন । তার মধ্যে এসবের অনেকগুলি নামকরণ কলম্বাসের অভিযানের পূর্বেই হয়েছে। অধ্যাপক ব্যারি ফেলের গবেষণার কথা আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। তার রচিত গ্রন্থে আমেরিকার আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের ব্যবহার করা অনেক আরবি শব্দের উল্লেখ রয়েছে যা আজও পূর্বের ন্যায় অপরিবর্তিত রূপে আমেরিকায় ব্যবহূত হচ্ছে। ক্রিস্টোফার কলম্বাস নিজেও তার ডায়রিতে একথা জানিয়েছেন যে, তিনি 1492 খ্রিস্টাব্দের 12 অক্টোবার বাহামার একটি ছোট দ্বীপে অবতরণ করে সে দ্বীপের প্রাচীন নাম পরিবর্তন করে নামকরণ করেন সানসালভেদর। ডাক্তার মারওয়া এর মাতে জাওয়ান হানী স্পেনে ব্যাপক ব্যবহৃত আরবি শব্দ ইখ ওয়ান হানী এর পরিবর্তিত রূপ। এ থেকে গবেষকগণ ধারণা করেন যে সম্ভবত সে দ্বীপটি কলম্বাসের পূর্বে মুসলমান আবিষ্কার করেছিল।

কলম্বাস তার ডায়রিতে আরো লিখেছেন তিনি 1492 খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসের কোন একদিন যখন জাহাজে করে কিউবার উত্তর-পূর্ব সৈকত এর নিকট যাচ্ছিলেন তিনি সুরম্য এক পর্বত শৃঙ্গের একটি মসজিদ দেখেছিলেন। এছাড়া আরো একটি বিষয় হল যে সকল পণ্ডিতগণ ভাষার উৎপত্তি নিয়ে গবেষণা করেন সেইসব ভাষাতত্ত্ববিদ আমেরিকার প্রাচীন অধিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের ভাষার মধ্যে কতিপয় আরবি শব্দের সন্ধান পেয়েছেন । এই শব্দগুলো কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের অনেক আগ থেকেই প্রচলিত ছিল। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার উইট ওয়াটার স্ট্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের social anthropology এর একজন অধ্যাপক Dr. Jeffery 1952 সালে প্রকাশ করেন যে কলম্বাসের বহু পূর্বেই মুসলমানরা আমেরিকা পৌঁছেছিল। মুসলমানদের লিখিত দলিল পত্র পুড়িয়ে মুসলিমদের প্রায় 900 বছরের কার্যকলাপ নিশ্চিহ্ন করতে চাইলেও ভাগ্যক্রমে এসবের কিছু কিছু রক্ষা পায় এবং আর কিছু কিছু বর্তমান অধ্যাপক গিয়াস এর মতে আল ইদ্রিসি তৃতীয় ইকলিমের বর্ণনা হতে মনে হয় যে, মুসলিমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বীপপুঞ্জ এবং আমেরিকার কথা হয়ত জানতেন। এছাড়া কলম্বাসের অনেক আগেই আমেরিকার শস্য ভুট্টা আটলান্টিক আমেরিকা হতে আটলান্টিক সাগরের ওপারে কিভাবে এলো এবং আফ্রিকার কলা আটলান্টিকের ওপারে কেমন করে গেল তাও পণ্ডিতদের দৃষ্টি এড়ায়নি। মোটকথা কলম্বাসের অনেক পূর্ব হতেই আফ্রিকা আর আমেরিকার মধ্যে কোন এক জাতি যাতায়াত করতো। এই জাতি যে মুসলমান তা অনেক ঐতিহাসিকগন স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যে কলম্বাসের বহু আগে নিগ্রোরাও আমেরিকায় এসেছিল। professor winer Africa and Discovery of America গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ড এ বিষয়ে প্রমাণ উপস্থাপন করেন। নৃতত্ত্ববিদ অধ্যাপক হুটার তার Apes Men and Merons গ্রন্থে বলেছেন যে, পিকো নদীর উপত্যকায় তিনি কলম্বাসের আগমনের অনেক আগেকার কতগুলো কবর দেখতে পেয়েছেন। তিনি মনে করেন পিকো নদীর কঙ্কালগুলো আরবীয় নিগ্রো মানুষের কঙ্কাল। আরব পুরুষ এবং নিগ্রো ক্রীতদাসীর বংশধররা এখানে এসেছিল কলম্বাসের অনেক আগেই।

শুধু আরবিও রাইট নয় 1783 সালে রোড আইল্যান্ড এর বৃষ্টলে পাহাড়ের গুহায় পাথরের গায়ে কিছু লিপি আবিষ্কৃত হয়েছিল। এখানে লেখা ছিল টারসিস হতে আসা নাবিকদের শুভ কামনা করছি। টারসিস এর অবস্থান স্পেনের দক্ষিণ উপকূলে। বাইবেলেও এই টারসিসের উল্লেখ রয়েছে। টারসিসরা ছিল স্প্যানিশ। শিলালিপি দ্বারা প্রমাণিত হয় স্পেনিশরাও আমেরিকায় গিয়েছিল প্রাচীনকালে।খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ সালে ভূমধ্যসাগরের মধ্য দিয়ে একটা নৌবাণিজ্য পথ আমেরিকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। এটা আজ প্রমাণিত। সবশেষে প্রকৃত সত্য এইযে কলম্বাস তার বেঁচে থাকাকালীন সময়েই স্বীকার করেননি যে তিনি একটি নতুন মহাদেশ বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবিষ্কার করেছেন।

তথ্যসূত্রঃ

১.বিজ্ঞানে মুসলমানদের দান 12 খন্ড এম আকবর আলী
২.ইন্টারন্যাশনাল কলম্বিয়ান কুইন সেপ্টেনারী অ্যালাইয়্যাস
৩.মাসিক পৃথিবী এপ্রিল 1998
৪.প্রথম আলো সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ছুটির দিনে
৫.কিশোর পত্রিকা 15 এপ্রিল-15 মে 1994
৬.মাসিক কওমি কণ্ঠ জুন 2004
৭. ভোরের কাগজ।