ভারত উপমহদেশের উর্বরতা ও প্রাচুর্যের কারণে বিভিন্ন দেশের লোকেরা এখানে আসত এবং দেশ বিজয় করে শাসন করেছে। যেমন- গ্রিক, শক, হুন, মঙ্গল সহ বিভিন্ন জাতি এদেশের মাটিতে রাজত্ব করে গেছেন।  এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে পর্তুগিজ, ইংরেজরাও সেভাবে এসেছে। দাক্ষিণাত্যের দিকে তাকালেও দেখব, হাবশিরা সেখানে শাসন করেছেন।

কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাই যে, রাজনৈতিক কোনো একটা কারণে শুধুমাত্র মোগলদের বিরুদ্ধেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যম, রাজনীতিবিদরা এবং কিছু ঐতিহাসিকরা ভীষণভাবে খারাপ প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। যেটা সম্পূর্ণভাবে অনৈতিক ও ভয়ংকর ব্যাপার। এটা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। যেসময়ের ইতিহাসে বলা হচ্ছে, সেইকালে রাজত্বের জন্য যুদ্ধ ছিল নিয়মের ভেতরেই। এমনকি ভাই ভাইকে হত্যা করে শাসনভার দখল করত এটাও ছিল সাধারণ একটা বিষয়।

আরও অনেক এরকম বিষয় দেখা যায়। সেকালে এরকম অনেক ভয়ংকর বিষয় রয়েছে। এমনকি হিন্দু রাজারাও হিন্দুদের মন্দির ভাঙতে দ্বিধাবোধ করেনি। মন্দির যে ভেঙেছে, সেটা ছিল মাসলশক্তির ব্যাপার। আসলে মাসলশক্তির জোড়েইতো রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে পারত। এমনকি নেতার মাথা কেটে জনসমক্ষে প্রদর্শন করে বীরত্ব প্রকাশ করতেও তারা দ্বিধা বোধ করত না।

আজ ২০০ বছর পরে এসে এইগুলো বিচার করতে গেলে, সেই সময়ের স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় রাখতে হবে প্রথমে। তা না করে বর্তমানে যেভাবে সমালোচনা করা হচ্ছে ও বিষেদাগার করা হচ্ছে এবং যেখানে কিছু সত্য, কিছু মিথ্যা সব একাকার করে ফেলছে; সেটা বড়ই দুঃখজনক। আরো দুঃখজনক বিষয় হলো যে ইতিহাস বিকৃত করে যা বলা হচ্ছে তা নতুন প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর হিসেবে দেখা দেবে। এসবই সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিচ্ছে। সব বিষয়গুলোর কথা চিন্তা করে এবং ইতিহাসের একজন ছাত্র হিসেবে এইসব বিষয়ে কথা বলা আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করি ।

তাজমহলের নিকটে নির্মাণ শ্রমিকদের তাজগন্জ বসতি

ইতিহাসের একজন সচেতন পাঠক হিসেবে এরকম একটি বিষয় সম্রাট শাহজাহানকে নিয়ে আমাদের আজকের প্রতিবেদন ‘শাহজাহান কি তাজমহল নির্মাণ শ্রমিকদের হাত কেটে নিয়েছিলেন?’ সম্প্রতি এটা ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। আগামীতে হয়ত আরো অস্থির করে তুলতে পারে। যে কারণে আমরা চিন্তিত। সেইখান থেকে যেস কোন সাম্প্রদায়িকতা ছড়াতে না পারে এবং সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য এবং প্রচণ্ডভবে প্রতিবাদ করে আমাদের এই লেখা।

গত কয়েকদিন যাবত বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে যে, ভারতের দিল্লীর  তাজমহল সমাধি সৌধ তৈরি করতে মোঘল আমলে যে শ্রমিকেরা দীর্ঘ 22 বছর ধরে কাজ করেছিল, তাদের সকলের হাত কেটে নিয়েছিলেন মোঘল সম্রাট শাহজাহান। আর সম্প্রতি এটিকে সবার সামনে এনেছেন সয়ং ভারতের একটি নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক। মূলত  তিনি গত ১৩ ডিসেম্বর কাশী বিশ্বনাথ ধাম করিডোর উদ্বোধনের নিউজ কাভার করতে গিয়ে এই বেশি বাক্য সচেতনভাবে অথবা অচেতনভাবে বা, প্রপাগান্ডা হিসেবে মিডিয়ার সামনে বলে ফেলেন। আমাদের মতন সাধারণ জনগন মনে করে এর ভেতরে রয়েছে বিরাট এক ষড়যন্ত্র।

তার ভেতরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর তোষামোদ নীতিও থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।  আসলে সেদিন কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ সেখানকার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের গায়ে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী । আর সেটিকেই ফুলিয়ে ফাপিয়ে এই অবস্থার নতুন মোড় তৈরি করেন ভারতীয় এক সাংবাদিক। ইতিমধ্যেই নেটিজেনদের মাধ্যমে যমুনার জল অনেক দূর গড়িয়ে গেছে। এখানে বর্তমান সরকারকে শাহজাহানের শাসনের সাথে তুলনা করতে গিয়ে বিশাল বিষেদাগারের ছড়াছড়ি ছাড়া আর কিছুই হয়নি। অবশ্য এই বক্তেব্যের উদগাতা কিন্তু তিনি নিজেও নন। এরকম ইতিহাস বিকৃতির ব্যাপারগুলো জানতেই আমাদের আজকের আয়োজন।

কিছুদিন আগে  ইতিহাসবিদ শশাঙ্ক শেখর সিনহার ২০২১ সালে প্রকাশিত ‘দিল্লি, আগ্রা, ফতেহপুর সিক্রি: মনুমেন্টস, সিটিজ অ্যান্ড কানেক্টেড হিস্ট্রিজ’ বইতে উল্লেখ রয়েছে যে, “শাহজাহান তাজমহল নির্মাণকারী স্থপতি ও শ্রমিকদের মেরে ফেলেন। আরো শোনা যায়, সম্রাট তাদের হাত কেটে ফেলেন এবং তাদের চোখ খুবলে বের করে নেন, কিংবা তাদেরকে ছুড়ে ফেলেন আগ্রা দুর্গের অন্ধকূপে, যেন আর কেউই অবশিষ্ট না থাকে।“

শাহজাহান, যিনি তাজমহল নির্মাণ করিয়েছিলেন

অবশ্য অনেক ট্যুরিস্ট গাইডরাও বিষয়টিকে ‘হাত কেটে ফেলা’ হিসেবে ভ্রমণকারীদের কাছে ব্যাখ্যা করে থাকেন। যদিও এ ধরনের কাহিনির কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায় যে, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া এবং এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের নানা স্মৃতিস্তম্ভকে ঘিরে এই রকমের অনেক মিথ, কাহিনী, লোকশ্রুতি বিদ্যমান রয়েছে। আসলে গল্পটির শুরু কিভাবে হলো সেই বিষয়ে জানতে আমাদের ফিরে যেতে হবে ইতিহাসের পাতায়। চলুন, তাহলে ঘুরে আসি দিল্লীর তাজমহল থেকে।

তাজমহল ভারতের উত্তর প্রদেশে আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম যিনি মমতাজ মহল নামে বেশি পরিচিত, তার ভালোবাসার স্মৃতির উদ্দেশে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন। সৌধটির নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ সালে, আর সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়েছিল ১৬৫৩ সালে। তাজমহল সৌধটি মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি অনন্য আকর্ষণীয় নিদর্শন। যার নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের এক অসাধারণ সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। সাদা মার্বেলের গোম্বুজাকৃতি রাজকীয় সমাধিটিসহ তাজমহল আসলেই সামগ্রিকভাবে একটি জটিল অখণ্ড স্থাপত্য। এটি ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কোর বিশ্বঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম তাজমহল এবং ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের সর্বজনীন প্রশংসিত শ্রেষ্ঠকর্ম।

মুমতাজ মহল

যাইহোক, ১৭ বছর আগে ২০০৪ সালে শীর্ষস্থানীয় ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে তাজমহলের ৩৫০তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে এলিজাবেথ গাইকি তার ‘দ্য তাজমহল’ শীর্ষক নিবন্ধে লেখেন, “। সেখানে তিনি বলেন, তাজমহল নির্মাণে অন্তত ২০,০০০ মানুষের ২২ বছর সময় লেগেছিল। যে কারিগররা তাজ নির্মাণে কাজ করেছিলেন, নির্মাণকাজ শেষে তাদের হাত কেটে নেওয়া হয়; যেন তারা পরে কখনো অনুরূপ কোনো সুন্দর  অবকাঠামো নির্মাণ করতে না পারেন।”

কিন্তু  প্রশ্ন হলো  আসলেই কি এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছিল? নাকি এটি কেবলই একটি লোককথা? নাকি সমসাময়িক রাজনৈতিক কোন প্রোপাগান্ডা?  আজকের দিনে যারা মোঘল সম্রাট শাহজাহানের বিরুদ্ধে এরকম বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে, তাদের আসল উদ্দেশ্য কী? সত্যিই কী তাজমহল নির্মাণের পর শ্রমিকদের হাত কেটে নিয়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান?

যদি তাই হতো, তাহলে তাজমহল নির্মাণ শেষে শাহজাহানের শ্রমিকরা তার জন্য দিল্লিতে শাহজাহানাবাদ নামে আরেকটি নতুন একটি সাম্রাজ্যিক শহর নির্মাণ করতে পারতেন না। যদি তাজমহল নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিকদেরই তিনি এ কাজে নিযুক্ত না করতেন, সেখানে পুনরায় সম্রাটের পক্ষে আবারও এত কম সময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ রাজমিস্ত্রি ও কারিগরের দল খুঁজে বের করা ছিল অসম্ভব। তাছাড়া তাদের বসবাসের জন্য দিল্লীর সন্নিকটে যে বসতি গড়ে উঠেছিল, সেটা এখনো বর্তমান রয়েছে।

তাজমহলের নির্মাণকারী শ্রমিকরাই পরবর্তীতে সম্রাট শাহজাহানের নতুন শহর শাহজাহানাবাদ তৈরি করেছিলেন। তাই মোগল সম্রাট শাহজাহান যদি তাজমহল বানানোর পর তার শ্রমিকদের হাতের আঙ্গুল কেটে ফেলে দিয়েছিল বলে যে অভিযোগ বলা হয়, তা কিভাবে সম্ভব? আর, তাহলে কিভাবে সম্ভব হলো শাহজাহানাবাদ শহরে গড়ে তোলা? এখানে বলে রাখা ভালো যে, অতিশয়োক্তি কথা, বেশি বাড়াবাড়ি কারোর জন্যই ভালো নয়; সে সাংবাদিক হোক আর যেই হোক না কেন!

ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে তোষামোদি করতে গিয়ে এক নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন এখানে।  তেমনটি করতে গিয়ে ভারতীয় ঐ সাংবাদিক বলছেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যেখানে মন্দিরের পরিষ্কার পরিছন্নতা কর্মীদের গায়ে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে সম্মান জানিয়েছেন সেখানে শাহজাহান কেটে নিয়েছিলেন তাজমহল নির্মানের অংশগ্রহণকারী শ্রমিকদের হাতের আঙ্গুল।  আর তারই সুর ধরে একটি দলের বহু নেতাকর্মী আরো জোরে ঢোলে বাড়ি মারতে আরম্ভ করে দিয়েছেন।

তাজমহলের সর্বনিম্ন তলে শাহজাহান ও মুমতাজের কবর

একবারে কেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রান্তিক মাঠ পর্যায় পর্যন্ত এখন এটা চলমান। আর সাথে সাথে শুরু হয়ে গেলো ফেসবুক, টুইটারসহ সকল সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়, যুদ্ধ, কথা কাটাকাটি, নিন্দা আক্রমণ ইত্যাদি ইত্যাদি কর্মকাণ্ড।

কিন্তু এই কাহিনি বাস্তবে বিদ্যমান তথ্য-প্রমাণের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এমনকি আজও ‘তাজগঞ্জ’ নামে একটি বিশাল বসতির অস্তিত্ব রয়েছে। সম্রাট শাহজাহান এই বসতিটি গড়ে তুলেছিলেন তাজমহল নির্মাণে অংশ নেওয়া হাজারো রাজমিস্ত্রি, কারিগর ও অন্যান্য শ্রমিকদের জন্য। যারা তার রাজ্যের দূর-দূরান্তের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে দিল্লীর তাজমহল তৈরিতে সমবেত হয়েছিলেন। ওই শ্রমিকদের বংশধররা আজও সেখানে বসবাস করেন, এবং তাদের দাদা-পরদাদাদের শিখিয়ে যাওয়া কাজ করে থাকেন।

এইসব পর্যালোচনার পর এই প্রসঙ্গে কথা বলেন ভারতের প্রখ্যাত  ইতিহাসবিদ ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ইরফান হাবিব। তার বক্তব্য  হলো, “আমি এ কথা বলতে পারি যে এ আখ্যানের না আছে কোনো প্রামাণ্য ভিত্তি, না কোনো নির্ভরযোগ্য ইতিহাসবিদ কোনোদিন এই ধরনের দাবি করেছেন। প্রসঙ্গত বলতে পারি, এই শহুরে মিথটির জন্ম সেই ১৯৬০-র দশকে। লোকমুখে এ কাহিনি শুনেছিলাম আমি। তবে তখনকার সঙ্গে এখনকার দাবির একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য  রয়েছে। আজ এই মিথের সঙ্গে একটি সাম্প্রদায়িক যোগসূত্র স্থাপন করা হয়। অথচ সে সময়ে মূলত ব্যক্তি শাহজাহানের প্রতি এক ধরনের বিদ্রূপ হিসেবে এসব কথা বলা হতো।”

অন্যদিকে গুগল বুকসে দেখা মেলে ১৯৭১ সালে ভারতের রাঁচি ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘জার্নাল অব হিস্টোরিকাল রিসার্চ’-এর। সেখানেও এ কাহিনিকে আখ্যায়িত করা হয়েছে একটি শহুরে কিংবদন্তী হিসেবে। আরো একবার যদি আমরা প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে বিচার করি তাহলেও দেখবো যে, প্রথমত, কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ যেমন- হাতের বা মাথার কোন কঙ্কাল নেই, যা থেকে বোঝা সম্ভব আসলেই এ ধরনের গণ হাত কর্তনের ঘটনা ঘটেছিল।

দ্বিতীয়ত, সমসাময়িক কোনো গ্রন্থ কিংবা ভারতে তৎকালীন কোনো বিদেশি সফরকারীর আত্মজৈবনিক রচনায়ও এই ঘটনার কোন উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

তৃতীয়ত, শাহজাহানের শাসনামলকে বলা হয় ‘মোঘল নির্মাণের স্বর্ণযুগ’। তার শাসনামলে নির্মাণকাজ কখনোই থামেনি। তাজমহল ছাড়াও তিনি আগ্রায় নির্মাণ করেন মোতি মসজিদ, দিল্লিতে লাল দুর্গ ও জামা মসজিদ। এছাড়াও স্থাপন করেন শাহজাহানাবাদ নামের একটি শহর। তিনি যদি আসলেই অঙ্গচ্ছেদের ঘটনা ঘটাতেন, তাহলে কোনো শ্রমিকই তার এসব কাজে অংশ নিতেন না।”

যাইহোক, সম্রাট শাহজাহান যে কখনো তাজমহলের নির্মাণ শ্রমিকদের হাত কেটে নেননি তা প্রমানিত।

আসলে সেই বিট্রিশ আমল থেকেই মোঘলদেরকে বিভিন্নভাবে অপদস্ত করার জন্য ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়ে তাদেরকে মানুষের কাছে শত্রু হিসেবে প্রমাণ করতে ইংরেজরা সর্বদা প্রস্তুত ছিল। সেরকই এক মিথ তারা গড়ে তুলেছিল সম্রাট শাহজাহানের তাজমহলকে কেন্দ্র করে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো আমাদের যে, সেই চোরা ফাঁদে বারবার আমরা আমাদের পা কাটছি। সেজন্য আমাদেরকে জাতির সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি স্থান , কাল পাত্রভেদে ইতিহাসের সঠিক তথ্য-উপাত্ত নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।

শিউলি ফুলের বিষণ্ণতার গল্প

শরতের রাতের সৌন্দর্য বলতে যে ফুলকে বোঝানো হয়, তা হলো শিউলি ফুল। তবে এ সৌন্দর্য আনন্দের নয়, বেদনার প্রতীক। শিউলি ফুলের নাকি সব সময়ই মন খারাপ থাকে। সূর্যের ওপর তার এক রাশ অভিমান। তাই তো রাতের আঁধারেই নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে পছন্দ করে সে এবং সূর্য ওঠার আগেই লুকিয়ে ঝরে পড়ে।...

মিশরীয় সিন্ডারেলা

মিশরে তখন ১৬ তম রাজবংশের যুগ। পার্সিয়ান আক্রমনের সম্ভাবনায় দিন গুণছে মিশর। সে সময় মিশরীয় সৈন্যদের তুলনায় গ্রীক সৈন্যদের কদর ছিলো অনেক বেশি। কারণ গ্রীক সৈন্যদের দক্ষতার গল্প প্রচলিত ছিলো বিশ্ব জুড়ে। এমন সময় ফারাও এপ্রিয়েজকে হত্যা করে মিশরের নতুন ফারাও হলেন রাজবংশের...

প্রাচীন সভ্যতায় ঈশ্বরের ধারণার উৎপত্তি ও সংখ্যাগত অবনমন

যে কোন সভ্যতার প্রাচীন ইতিহাস ঘাটলেই আমরা বহু ঈশ্বর বা গডের অস্তিত্বের কথা জানতে পারি। তবে আজকের প্রেক্ষাপটে ঈশ্বর সম্পর্কে এ ধারণা অনেকটাই পাল্টেছে। কেননা বর্তমান বিশ্বে বহু ধর্মমত এখনও বিদ্যমান থাকলেও ঈশ্বরের সংখ্যার বিষয়টি কমে এসেছে। একেশ্বরবাদ কিংবা বহুঈশ্বরবাদী...

হিন্দু দেব-দেবীর ধারণা প্রাচীন মধ্য এশীয় বিশ্বাসেরই প্রতিরূপ নয় তো?

সিংহবাহনের ওপর এক হাতে চাঁদ ও এক হাতে সূর্য নিয়ে চার হাতবিশিষ্ট এক দেবী যুদ্ধবাজ ভঙ্গিমায় আসীন নিজের সন্তানদের প্রতিরক্ষার জন্য। খুব পরিচিত লাগছে তাই না? নিশ্চয়ই দেবী দুর্গার সাথে সাদৃশ্য খুঁজে পাচ্ছেন। কিন্তু এ তো দুর্গা নয়, ব্যাক্ট্রিয়ান মাতৃদেবী ‘নানায়াহ’ বা ‘ননা’...

মহাবীর কর্ণের অন্তিম যাত্রা

সূর্যদেব অস্তে চলে যাচ্ছেন। গোধূলিবেলার লালচে আলোতে আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি আমার এই জন্মের শত্রুকে। তার গান্ডিব ধরা উদ্ধত হাতে চকচক করছে অঞ্জলিক বাণ, যা আমার মস্তক ছেদ করার জন্য একটু পরেই ছুটে আসবে।পান্ডব বীর অর্জুন, যে আমার চরম শত্রু আবার আমার সহদর কনিষ্ঠ ভ্রাতা।ওই...

মীরাবাঈ, লেডি ম্যাকবেথ, বিনোদিনীর রুপে মঞ্চ মাতিয়ে রাখা তিনকড়ি দাসী

ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও বড়লোক বাবুর রক্ষিতা হতে হয়েছিল তাকে। আর সেই রক্ষিতার পুরস্কার হিসেবেই পেয়েছিলেন তিন তিনটে বাড়ি। তিনটি বাড়ির মালিক হওয়া সত্ত্বেও তা নিজের করে ধরে রাখার কোন ইচ্ছে ছিল না তার। বাড়ি তিনটির একটি তার রক্ষক বাবুর ছেলেকে এবং বাকি দুটো মৃত্যুর আগে...

নারীকে ‘দ্বিতীয় শ্রেণী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে সৃষ্টির শুরুর ইতিহাসের সাথে পরবর্তী ইতিহাসের সংঘাত

প্রত্যেক সময়ের প্রেক্ষাপটেই দেখতে পাওয়া যায়, নারীর ওপর সমাজ কতোগুলো বিধি-নিষেধ আরোপ করে থাকে। তাদের চলা-ফেরা, বাক-স্বাধীনতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সমস্ত কিছুর উপর প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে সমাজ। তবে এতো বাধা-বিপত্তির পরও প্রতিটি যুগে অসংখ্য নারী...

তিন সম্রাটের শাসনের প্রত্যক্ষদর্শী মুঘল রাজকন্যা গুলবদন বানু বেগম

“ইতিহাসের বই দিয়ে ব্যক্তিত্ব বিচার করলে এটি দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে, পুরুষরাই ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক চরিত্র ছিলেন। অন্তত মনে রাখার মতো কোনো চরিত্র যদি থেকে থাকে, তবে পুরুষরাই সবার সামনে চলে আসেন। অবশ্যই এটি একটি অসত্য বিষয়। কিন্তু আমরা এই অসত্য বিষয়টিকেই...

আমার চোখে ‘বড় আপা’, অগ্রণী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ড. কাজী আনোয়ারা মনসুর

ছেলেবেলা থেকে আমার গড়ে উঠবার প্রতিটি ধাপে আমার অন্তরাত্মাকে পরিশুদ্ধ করবার ক্ষেত্রে, আমার অনুধাবন ও উপলব্ধিকে গঠনমূলক রূপ প্রদানের ক্ষেত্রে এবং আমার স্বশিক্ষাকে পরিপূর্ণ করবার ক্ষেত্রে বেশ ক’জন ব্যক্তির অবদান রয়েছে। এই তালিকায় অবশ্যই আমার মা, বাবা, খালাসহ পরিবারের...

বিস্মৃতপ্রায় অযোধ্যার রাজমাতা: মালিকা কিশোয়ার

লখনৌ এর বিশাল রাজবাড়ি। অন্দরমহল থেকে ছুটে আসছেন অযোধ্যার রাজমাতা। তার চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট; পা খালি, জুতো ছাড়াই ছুটে আসছেন তিনি; গা থেকে খুলে পড়ে যাচ্ছে চাদর। রাজমাতার এমন অবস্থা দেখে পেছন পেছন ছুটছেন দাসীরা। কি হলো রাজমাতার! নিজের কামরা থেকে কদাচিৎ বের...