পূর্বকথাঃ চল্লিশের দশকের ঢাকা, পৃথিবীজুড়ে তখন চলছে ২য় বিশ্বযুদ্ধ। বার্মা, নাগাল্যাণ্ডে যুদ্ধ পরিচালনার প্রয়োজনে তেঁজগাওতে গড়ে তোলা হল নতুন বিমান ঘাটি (পরবর্তিকালের তেজগাঁও বিমানবন্দর)। ঢাকার পল্টন ব্যারাকে তখন সমবেত নানা দেশের সৈন্য- মার্কিন ‘জিআই’ সেনা থেকে শুরু করে ব্রিটিশ ‘টমি’ সেনা। কিন্তু তাদের বিনোদনের ব্যবস্থা সেসময় অপ্রতুল। এই সেনাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই এক ইংরেজ ভদ্রলোক তখন পল্টনে গড়ে তুললেন নতুন সিনেমা হল- ‘ব্রিটানিয়া টকিজ’।দেখতে একদমই ভালো নয়, অনেকটা গুদামের মত। বসবার ব্যবস্থাও সেরকমই- সস্তায় বানানো কিছু সোফা, চেয়ার। এই নিয়ে চালু করে দিলেন সেই নতুন হল। স্যামসন র‍্যুবেন এর “A Guide for Travellers in India” বইটি থেকে ঢাকার সেসময়কার আরো যে সব সিনেমা হলের নাম জানা যায় সেগুলো হলো- ১. লায়ন সিনেমা, আশেক জমাদার লেন, ২. মুকুল থিয়েটার, জনসন রোড, ৩. রূপমহল, ১৩৬, সদরঘাট, ৪. নিউ পিকচার হাউস, আরমানিটোলা, এবং ৫. তাজমহল টকিজ, আলী নকির দেউড়ী। তবে এসকল হল এ নির্বাক/সবাক ছবির পাশাপাশি নাটক ও নাচগানের ব্যবস্থা থাকলেও ব্রিটানিয়া টকিজে শুরু থেকেই প্রধানত সবাক ইংরেজি ছবিই প্রদর্শিত হত (যে কারণে নাম ‘টকিজ’)। হল এর নামফলকে লেখা ছিল -The Home of English Movies। বিশ্বযুদ্ধে শেষে যখন গোরা সৈন্যরা বিদায় নিল তখন এর নিয়মিত দর্শক হল ঢাকাস্থ ইংরেজ, এংলো-ইণ্ডিয়ান আর উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠী। প্রতিদিন দু’টা মাত্র শো হতো – সন্ধ্যা ৬টায় ও রাত ৯টায়। তবে দর্শক উপস্থিতি কম হলে শো প্রায়ই স্থগিত করা হত। স্থগিত শো এর টিকেট অবশ্য বাতিল হত না, ওটা দিয়ে পরের কোনো এক শো দেখে নেয়া যেত। এখানে প্রদর্শিত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে- Bathing Beauty (1944), A Double Life (1947), Hamlet (1948), Hotel Sahara (1951) ইত্যাদি। ৫০এর দশকে হলটি বন্ধ হয়ে যায়। সে স্থানে গড়ে উঠে বর্তমানের জীবন বীমা কর্পোরেশনের ভবন এবং রমনা ভবন।

সহায়ক গ্রন্থঃ

১. ঢাকা পুরাণ, মীজানুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন, ২০১১

২. A Guide for travellers in India  compiled by Samson Reuben, D. B. Taraporevala Sons & Company, 1947.

৩. স্মৃতির ঢাকা, সম্পাদকঃ কাজল ঘোষ, নালন্দা, ২০১২।