রোম যখন জ্বলছিল নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল!! হাজার বছর পরও এ প্রবাদের ব্যাবহার দেখতে পাওয়া যায় l রোমান সম্রাট নিরো ছিলেন রোমান সাম্রাজ্যের একজন অদ্ভুত শাসক। রোম নগরী পুড়ে যাওয়ার সময় সম্রাট নিরো কি আসলেই বাঁশি বাজাচ্ছিলেন? এ প্রশ্নের উত্তর পেতেগেলে হাজার বছরের পুরনো রোমে ঘুরে আসতে হবে l ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে ৬৪ খৃস্টাব্দে রোমের বেশিরভাগ এলাকা পুড়ে গিয়েছিল। একটা গুজব আছে যে নিরোই নাকি এই আগুনটা লাগিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, পরে এও দাবী করা হয় যে রোম নগরী যখন পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি বেহালা বাজাচ্ছিলেন।


এই তথ্য সঠিক হতে পারে না। কারণ রোমান সাম্রাজ্যের আমলে বেহালার অস্তিত্ব ছিল না। তবে নিরো বীণাজাতীয় বিশেষ একটি বাদ্যযন্ত্র বাজানো উপভোগ করতেন।
ঐতিহাসিকরা মনে করেন রোমের অগ্নিকাণ্ডের জন্যে নিরো দায়ী নন। কারণ এই আগুনে নিরোর নিজের প্রাসাদও ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। শুধু তাই নয়, অগ্নিকাণ্ডের পর তিনি রোম নগরীর বড় ধরনের উন্নতিও সাধন করেছিলেন। ইতিহাসবিদ ট্যাসিটাস এই ধরনের দাবিকে গুজব বলে নিন্দা করেছিলেন। তাঁর মতে, নিরো অগ্নিকাণ্ডের প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যান্টিয়ামে চলে গিয়েছিল এবং রোমে ফিরে এসে উদ্ধার ও পুনর্নির্মাণের প্রচেষ্টা চালাতে সহায়তা করেছিল এবং এমনকি যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন তাদের জন্য তাঁর প্রাসাদ ও উদ্যানগুলিও খুলে দিয়েছিলেন l

তার নতুন প্রাসাদ নির্মাণ করার ইচ্ছা থেকে সম্রাট চারিদিকের এলাকাকে পরিষ্কার করার জন্য তার লোকদের আগুন জ্বালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। নিরোর এই ভীতিকর ইমেজ কি আসলেই সত্য? মনে হয় না l তবে এ কথা সত্য যে নিরো অবশ্যই পুরোপুরিভাবে সাধু ছিলেন না – তিনি ক্ষমতায় ওঠার সময় তাঁর নিজের মাকে হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন l নিরোর ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম দিকে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বাসযোগ্য উপদেষ্টা ছিলেন তার মা এগ্রিপিনা। সেকারণে রোমান মুদ্রায় তার ছবির সাথে এগ্রিপিনার মুখের ছবিও খোদাই করা ছিল। কিন্তু নিরো পরে আরো বেশি ক্ষমতা ও স্বাধীনতার জন্যে তার মাকেও হত্যা করেন।

নিজেকে বাঁচাবার জন্য নিরো অভিযোগ করেন যে খ্রিস্টানরাই এই আগুন লাগিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে নিজেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে তিনি আরো একধাপ এগিয়ে যায় l শহরে আগুন দেওয়ার শাস্তি হিসেবে খ্রিস্টানদের অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিলেন নিরো। তাদেরকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়, বন্য জন্তু দিয়ে তাদের উপর আক্রমণ চালানো হয়, এবং তাদের শরীরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এখানেই শেষ নয়, এসব শাস্তি দেওয়ার সময় উৎসবও করা হতো। লোকজনকে আমন্ত্রণ জানানো হতো এসব প্রত্যক্ষ করার জন্য ওই সময়ে রোমে খ্রিস্টানদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। তারা ছিল প্রান্তিক এবং অজনপ্রিয়। পরবরতীকালে খ্রিস্টানরাই তার বিরুদ্ধে এ অপপ্রচার চালিয়ে তাকে অপদস্থ করে l