ভাসুবিহারে খননে পাওয়া গেছে এসব পোড়ামাটির ফলক এবং অলঙ্কৃত ইট। ছবি সোয়েল রানা, বগুড়া

ভাসুবিহারে খননে পাওয়া গেছে এসব lছবি সোয়েল রানা, বগুড়া

খননে বেরিয়ে আসা পোড়া মাটির ফলক ও অলংকৃত ইট।

হিউয়েন সাঙের একটি পোর্ট্রেট

সপ্তম শতাব্দীর গুপ্ত রহস্য l বগুড়ার ঐতিহাসিক ভাসুবিহারে প্রত্নখনন l চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং l সপ্তম শতাব্দীর বিলুপ্ত সভ্যতার বসতিচিহ্ন, স্থাপত্যকাঠামো ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন l

আমার আজ বগুরা যাচ্ছি l আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে, হয়ত এই পথ দিয়ে হেটেছিল এক চীনা পর্যটক l তার সাথে দেখা হয় ৭০০ ভিক্ষুর l
হ্যা,চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং ৬৩৯ থেকে ৬৪৫ সালে সম্রাট হর্ষবর্ধনের আমলে ভাসুবিহার ভ্রমণে এসে এখানে ‘পো-সি-পু’ মানে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এবং সেখানে ৭০০ বৌদ্ধ ভিক্ষু বা শিক্ষার্থী রয়েছে বলে তাঁর লেখায় উল্লেখ করেন। পরবরতীকালে ১৮৭৫ সালে ভারতবর্ষে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ গঠনের পর মেজর জেনারেল আলেকজান্ডার ক্যানিংহাম ও হিউয়েন সাংয়ের দাবিকে সমর্থন করেন। তিনি প্রত্নখনন করতে এসে হিউয়েন সাংয়ের দেখা সেই ৭০০ ভিক্ষুর বৌদ্ধবিহারকেও ভাসুবিহার বলে সমর্থন করেন। ভাসুবিহারে এক যুগ ধরে চলছে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাংয়ের দেখা সেই বৌদ্ধবিহারের সন্ধানে প্রত্নখনন। ধারাবাহিক সেই প্রত্নখননে ২৬ ও ২৯ কক্ষবিশিষ্ট দুটি বিহার, একাধিক মন্দির, ছোট–বড় কয়েকটি প্রত্নস্তূপসহ (সমাধিসৌধ) দশম ও একাদশ শতাব্দীর নানা প্রত্নস্থাপনা ও বসতিচিহ্নের সন্ধান মিলেছে। এ বছর আবার চলছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে দুই মাসব্যাপী প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ। ৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এই প্রত্নখনন শেষ হয় মার্চ মাসে l এবারের প্রত্নখননে ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শতাব্দীর বিলুপ্ত সভ্যতার বসতিচিহ্ন, স্থাপত্যকাঠামো ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অস্তিত্ব মিলেছে। ভাবতেও অবাক লাগে কিছু মানুষ ১৪০০ বছর আগে এই পথ দিয়ে চলতো l তারা মন্ত্র পাঠ করতো ,সাহিত্য চর্চা করতো l তাদের ই খবর পেতে যাচ্ছি l কারণ খননে মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে আসছে বিলুপ্ত সভ্যতার নানা মূল্যবান প্রত্নবস্তু ও স্থাপত্য নিদর্শন। ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শতাব্দীর বসতিচিহ্নের অস্তিত্ব মেলায় খুব শিগগির হিউয়েন সাংয়ের দেখা ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শতাব্দীর ৭০০ ভিক্ষুর বৌদ্ধবিহারের সন্ধানও মিলবে বলে আমরা আশাবাদী। এবারের প্রত্নখননে সমুদ্র সমতল ২৫ দশমিক ২৫ মিটার উচ্চতায় মিলেছে অলংকৃত ইট আর ২৫ দশমিক ৪৫ মিটার সমুদ্র সমতল উচ্চতায় রাজহংসখচিত টেরাকোটার ফলক।

স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম

 
 
ভাসুবিহারের ইতিহাস জানিয়ে দেয়, বঙ্গীয় এই বদ্বীপ কতটা সমৃদ্ধ। হিউয়েন সাং যে সমৃদ্ধ ও জীবন্ত বিহারে ৭০০ বৌদ্ধ ভিক্ষুকে দেখেছিলেন, সেই বিহারের সন্ধানেই চলছে এবারের খননকাজ। কারণ, ইতিপূর্বে সন্ধান পাওয়া ২৯ ও ২৬ কক্ষের দুটি বিহারে ৭০০ ভিক্ষুর বসবাস অসম্ভব। এ কারণে আরও একটি বিহারের গুপ্ত রহস্য উদ্‌ঘাটনের কাজ চলছে। ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শতাব্দীর বসতিবিন্যাসের চিহ্ন পাওয়ায় ৭০০ বৌদ্ধ ভিক্ষুকে একসঙ্গে দেখা হিউয়েন সাংয়ের সেই বিহারের রহস্য উদ্‌ঘাটন এখন সময়ের অপেক্ষামাত্র।

হর্ষবর্ধন

 

Travel route of Xuanzang in Indian subcontenent.

ভাসুবিহারে চলছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে দুই মাসব্যাপী প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ।

ভাসুবিহারে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজে বেরিয়ে আসা ইট।

৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দীর বিলুপ্ত সভ্যতার বসতি চিহ্ন, স্থাপত্য কাঠামো ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অস্তিত্ব মিলেছে।

৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দীর বিলুপ্ত সভ্যতার বসতি চিহ্ন, স্থাপত্য কাঠামো ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অস্তিত্ব মিলেছে খননকাজে

মিলেছে পোড়ামাটির তৈরি ইট।

প্রত্নতাত্ত্বিক খননে ২৬ ও ২৯ কক্ষ বিশিষ্ট দুটি বিহার, একাধিক মন্দির, ছোট বড় কয়েকটি সমাধি সৌধসহ দশম ও একাদশ শতাব্দীর নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ও বসতির সন্ধান মিলেছে।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ভাসু বিহারে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলছে।