হোসেন কুলি খানের ভাইএর ছেলে হাসানউদ্দিন খানের সাথে ঢাকায় কাজ করত মীরমদন। তার বিশ্বস্ততা ও কর্মদক্ষতার পরিচয় পেয়ে তরুন নবাব সিরাজ মুর্শিদাবাদে এনে সেনাপতির আসনে অধিষ্টিত করেন। তিনি ছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার গোলন্দাজ সেনাপতি। সকাল আটটায় নবাবের ফরাসি সেনানায়ক সিনফ্রে কামানের গোলা ছুড়লে গোলন্দাজ বাহিনী নিয়ে প্রবল আক্রমন শুরু করলেন মীর মদন, মোহনলাল, নবে সিং হাজারীরা। আধা ঘন্টার মধ্যেই ইংরেজদের গোটা তিরিশ সেনা ঘায়েল। ক্লাইভ দেখলেন এভাবে চললে দু দন্ডেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন তারা। তাই আমবাগানের ভিতর ঢুকে পড়লেন। যেভাবেই হোক সন্ধ্যা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। রাতে দেশি ফৌজ যুদ্ধ করতে পারেনা। দক্ষিন দেশের যুদ্ধের অভিজ্ঞতায় ক্লাইভের তা ভাল করেই জানা। ইংরেজদের পিছু হটতে দেখে মীর মদনরাও সামনে এগুতে লাগল। একের পর এক কামানোর গোলা ছুড়েও লাভ হচ্ছেনা। সব গোলাই ইংরেজদের মাথার উপরের গাছের ডাল ভেংগে দিয়ে বাইরে যেতে লাগল। এমন সময় ভাগ্যদেবী বিমুখ হল। হঠাৎ এক পশলার বৃষ্টি নেমে এল পলাশীর প্রান্তরে। টানা আধা ঘন্টার বৃষ্টিতে নবাবের গোলা বারুদ সব ভিজে গেল। এদিকে ইংরেজদের বারুদের গাড়ি ঢাকা ছিল। তার কিছুই হয়নি। বৃষ্টি থেমে গেল মীর মদন ভাবলেন ইংরেজদেরও মনে হয় একই অবস্থা। তিনি ইংরেজ বাহিনীকে ঘিরে ধরার জন্য আরো অগ্রসর হলেন। ওদিকে গোলন্দাজ বাহিনীর এগিয়ে আসা দেখে মুহূর্মুহূ গোলা ছুড়তে লাগলেন ইংরেজ সৈন্য। হঠাৎ এক গোলার আঘাতে লুটিয়ে পড়লেন বাংলার অকুতোভয় সৈনিক মীর মদন। বিশ্বস্ত সেনাপতি মীর মদনের মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়লেন তরুন নবাব সিরাজ। হয়ত কোনঠাসা হয়ে পড়া ইংরেজ বাহিনীকে একাই কাবু করতে পারতেন মোহনলাল। কিন্তু বাংলার ইতিহাস লেখা হল বিশ্বাসঘাতকের কলমে। নবাব সিরাজ মীর জাফর আলী খানের কথায় যুদ্ধ বন্ধ করলে ইংরেজ বাহিনী দিকভ্রান্ত, ক্লান্ত নবাবের বাহিনীকে পরাজিত করতে বেগ পায়নি। আর এভাবেই একজন মহান, দুঃসাহসী সেনানায়কের মৃত্যুতে তরান্বিত হয় বাংলার স্বাধীনতার অবসান। মীর মদনের অনুগত কিছু সৈনিক তার মৃতদেহকে গোপনে মুর্শিদাবাদের রেজিনগরের কাছে ভাগীরথী নদী তীরবর্তী ফরিদপুর গ্রামে কবর দেন। এখনো ফরিদপুরে ফরিদ খানের সমাধির পাশে অবহেলায় শুয়ে আছেন পলাশীর যুদ্ধের অন্যতম সেনানায়ক বীর মীর মদন।
পলাশীর যুদ্ধের অন্যতম সেনানায়ক বীর মীর মদন যদি আঘাত প্রাপ্ত না হতো, তাহলে তিন ঘণ্টা, তার পরেই মঁসিয়ে লালীর শক্তিশালী আশ্রয়ে পৌঁছে যেতেন নবাব। পাটনায় মিলিত হতেন অনুগত পঞ্চাশ হাজার সৈন্যের সাথে, ফিরে আসতেন উন্মত্ত কালবৈশাখীর তাণ্ডবে। পাল্টা আঘাতে গুঁড়িয়ে দেবার কথা ছিল মীরজাফর-ক্লাইভ-ঘসেটি বেগমের ষড়যন্ত্রের দুর্গ। বাংলার মাটি থেকে উপড়ে ফেলতেন ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির নাম। বাংলা ইংরেজদের উপনিবেশ হতো না l ভারতবর্ষ হতো না পরাধীন ১৯০ বছরের জন্য। নীলচাষ হতো না । আঙুল কাটা হতনা মসলিন তাঁতীদের। না,তা হয় নাই lll
তথ্য উৎস
বাংলার কথা কই – হাসান মাহমুদ