সিল্ক রোডের গল্প আমরা অনেকেই জানি। এই প্রাচীন সিল্ক রোড বাণিজ্যপথ দক্ষিণ-পূর্ব, পশ্চিম-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন সাম্রাজ্যের মধ্যে শুধু রেশম, মশলা বা মূল্যবান পণ্যের লেনদেনেই সীমাবদ্ধ ছিল না—এটি ছিল সংস্কৃতি, ধর্ম, ভাষা ও জ্ঞানের বিস্তারের এক বিশাল সেতুবন্ধ। এই পথ ধরেই ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু ও বৌদ্ধ ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সংস্কৃত ভাষা ছড়িয়ে পড়েছিল এশিয়ার নানা প্রান্তে। ইতিহাস বলে, অষ্টম শতাব্দী পর্যন্ত মধ্য এশিয়ায় ভারতীয় সংস্কৃতি গভীর প্রভাব বিস্তার করে গেছে।
উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান ও আফগানিস্তানের নানা স্থানে আজও পাওয়া যায় ভারতীয় দেব-দেবীর মূর্তি ও দেয়ালচিত্র। একসময় আফগানিস্তানই ছিল বৌদ্ধ ধর্ম, ভারতীয় সংস্কৃতি ও গান্ধার শিল্পকলার অন্যতম কেন্দ্র। সিল্ক রোডের মাধ্যমে হিন্দু ধর্মের বিস্তার ঘটে, বিশেষ করে শিব পূজা মধ্য এশিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বহু ক্ষেত্রে শিব পূজা মধ্য এশিয়ায় মিশে যায় স্থানীয় দেবতা ইসোর পূজার সঙ্গে। ধারণা করা হয়, উত্তর ভারতে বসবাসকারী শ্বেত হুন ও কুষাণদের মাধ্যমেই এসব দেবতা মধ্য এশিয়ায় পৌঁছায়।

মধ্য এশিয়ায় পাওয়া প্রাচীন শিব মূর্তি © sogdians.si.edu
ইরানের সগডিয়ানা, চীনের খোতান রাজ্য ও তারিম অববাহিকাতেও দেখা গেছে শিবভক্তদের উপস্থিতি। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যের স্বার্থে দীর্ঘ সময় সেখানেই বসতি গড়ে তোলেন এবং নিজেদের ধর্মীয় ঐতিহ্য স্থানীয় সমাজে প্রতিষ্ঠা করেন। এমনকি জোরোস্ট্রিয়ান দেবতা আহুরা মাজদাও অনেক অঞ্চলে শিবের রূপে পূজিত হতেন।
খ্রিস্টপূর্ব ১৮৪ সালে পতন ঘটে পরাক্রমশালী মৌর্য সাম্রাজ্যের। এরপর ইন্দো-সিথিয়ান শাসক https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9C%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A5%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6বা পার্সিয়ানরা ভারতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল দখল করে। বিদেশী শাসক হয়েও তারা ভারতীয় শিল্পকলা, স্থাপত্য ও সাহিত্যকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয় এবং নিজেদের সংস্কৃতিতে তা গ্রহণ করে। তাদের মাধ্যমেই খরোষ্ঠী ও ব্রাহ্মী লিপি, সংস্কৃত সাহিত্য, হিন্দু ও বৌদ্ধ প্রথা মধ্য এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।

জোরোস্ট্রিয়ান ধর্মের আহুরা মাজদার প্রাচীন ভাস্কর্য © wikipedia
মধ্য এশিয়ার অনেক শাসক ভারতীয় নাম গ্রহণ করেছিলেন, ভারতীয় দেবতার উপাসনা করতেন এবং মুদ্রায় দেবমূর্তির ছাপ ব্যবহার করতেন। এর ফলে ভারতীয় ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সাধারণ জনগণের মধ্যেও গভীরভাবে প্রোথিত হয়।
আজও আমরা এই সাংস্কৃতিক বিনিময়ের প্রমাণ পাই মুদ্রা, ভাস্কর্য, মন্দির, ধ্বংসাবশেষ, শিলালিপি ও পাণ্ডুলিপিতে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বিস্মিত হন—দুই হাজার বছর আগে, এত দূরে থাকা মানুষ কীভাবে একে অপরের সংস্পর্শে এসে সিল্ক রোডে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব এর এমন সমৃদ্ধ বিকাশ ঘটিয়েছিল! এই অমূল্য নিদর্শনের অনেকই এখন উপমহাদেশের বাইরের জাদুঘরে সংরক্ষিত, আমাদের অতীতের সেই অসাধারণ সংযোগের সাক্ষ্য বহন করে।