আমরা কম–বেশী ভাইকিংদের (Viking) গল্প শুনেছি। ওদের কথা শুনলে গা কেমন যেন ছমছম করে, তাই না? ভাইকিংরা ছিল মূলত উত্তর ইউরোপের দেশ, যেমন নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্কের বাসিন্দা। ওরা ইউরোপের বিস্তীর্ণ এলাকা দাপিয়ে বেরিয়েছে অষ্টম শতাব্দী থেকে এগারো শতাব্দী পর্যন্ত। আসলে ভাইকিংরা ছিলো জলদস্যু। যাকে বলে, পাইরেট! ভাইকিংরা ইউরোপের জনবসতিগুলোতে আক্রমণ করে সম্পদ দখল করে নিজেদের দেশে নিয়ে যেতো। দস্যুতার জন্য বড় বড় নৌকা ছিল তাদের প্রধান জলযান। মজার ব্যাপার হলো, ভাইকিংদের নিয়ে অনেক কল্পকথা বা মীথ (myth) আছে। এসবের বেশীর ভাগই ভিত্তিহীন। এ মীথগুলো আসলে গল্প, উপন্যাস, সিনেমা‘র সৃষ্টি। এ লেখাটি কয়েকটি কল্পকথা নিয়ে।
তেমনি একটি কল্পকথা হলো, ভাইকিং পুরুষরা তাদের নারীদের প্রতি দাসের মতো আচরণ করতো। ভাইকিং নারীদের নিয়ে এমনি আরো কত কি প্রচার আছে! আসল সত্য হলো এর ঠিক উল্টো! ভাইকিং নারীদের স্বাধীনতা এবং অধিকার ছিলো অনেক বেশী। একই সময়ে ইউরোপের অন্য কোথাও নারীদের এতো স্বাধীনতা ছিল না! বেশিরভাগ নারীরাই গৃহিণী ছিল, যারা দৃঢ় হাতে তাদের খামার ও সংসার পরিচালনা করতো। ভাইকিং নারীরা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারতো, বিবাহ-বিচ্ছেদের অনুরোধ করতে পারতো এবং তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়ে গেলে তাদের যৌতুকগুলো ফিরিয়ে দেবার দাবী করতে পারতো। ঠিক আজকের মতো, ভাইকিং নারীরা পছন্দমতো স্বামী বেছে নিতে পারতো। সে সময় স্প্যানিশ-আরব ভ্রমণকারী আল-তরতুশি যখন নরওয়েতে ভ্রমণ করেছিলেন তখন তিনি শুনে অবাক হয়েছিলেন যে, ভাইকিং নারীদের বিবাহ-বিচ্ছেদের অধিকার রয়েছে। একটি প্রচলিত নিয়ম ছিলো যে, যদি কোন ভাইকিং পুরুষ তার স্ত্রীকে তিনবার আঘাত করে, তবে সে নারী বিবাহ-বিচ্ছেদের দাবি করতে পারতো। ইন্টারেষ্টিং, তাই না?
অনেকেই মনে করে যে, ভাইকিংরা খুব নোংরা থাকতো, গোসল করার কোনো বালাই থাকতো না মাসের পর মাস। ইতিহাস কিন্তু বলে অন্য কথা। ভাইকিংরা বরং সপ্তাহে কমপক্ষে একবার স্নান করতো। আরো জানা যায়, ঐ সময়ে অন্যান্য ইউরোপীয়ানদের তুলনায় ভাইকিংরা অনেক ঘন ঘন গোসল করতো এবং সময় পেলেই প্রাকৃতিক গরম পানির ঝর্ণায় তারা শরীর ডুবিয়ে রাখতো। প্রত্নতাত্ত্বিক খননকালে প্রাণীর হাড় দিয়ে তৈরি ভাইকিংদের অনেক রেজার, চিরুনি এবং কানের ক্লিনার পাওয়া যায়।
আরেকটি মজার কল্পকথা হলো, ভাইকিংরা ভয়ঙ্কর দেখতে দুই শিংওয়ালা হেলমেট পরতো। এটিরও কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে আমরা জানতে পারি যে, ভাইকিং হেলমেট ছিল শিং–মুক্ত। চিত্রশিল্পীরা সম্ভবত উনিশ শতকের সময়কালে প্রাচীন গ্রীক এবং রোমানদের শিংওয়ালা হেলমেটকে ভাইকিংদের বলে চালিয়ে দেয় তাদের শিল্পকর্মে।
আমাদের অন্য একটি ধারণা আছে যে, ভাইকিং মানেই জলদস্যু। এটিও ভুল। বেশীরভাগ ভাইকিং চাষাবাদ এবং খামারে কাজ করতো। তাদের ছোট খামারগুলিতে গবাদি পশু যেমন, ছাগল, শূকর এবং ভেড়া পালন করতো।
কেমন লাগলো? এখনও গা ছমছম করে? ভাইকিংদের নিয়ে আরো অনেক কৌতূহলপূর্ণ ইতিহাস আছে, যা অন্য এক সময় বলা যাবে।
সূত্র: কোপেনহেগেন ন্যাশনাল মিউজিয়াম