কারো কাছে নায়ক, আবার কারো কাছে খলনায়ক হিসেবে জনপ্রিয় বিখ্যাত রাজা দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার। তিনি ক্যালডীয় সাম্রাজ্যের অধিপতি নাবোপোলাসারের বড় ছেলে এবং নব্য ব্যবিলনীয় সভ্যতার প্রতিষ্ঠাতা।
প্রাথমিক জীবনে ব্যবিলনের প্রধান দেবতা মারদুকের মন্দিরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করা দ্বিতীয় নেবুচাদনেজারের মতো রাজা ইতিহাসে খুবই বিরল। তিনি ছিলেন একজন যোদ্ধা রাজা এবং ব্যবিলনের সর্বশ্রেষ্ঠ সামরিক নেতা। রাজ্যাভিষেকের আগেই তিনি অ্যাসিরিয়ার উত্তরে পাহাড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর কমান্ডার হিসেবে কাজ করেছেন। সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ রক্ষাকারী মিশরীয় সেনাবাহিনীকেও পরাজিত করেছিলেন তিনি। ব্যবিলনকে মুক্ত করে নতুন এক ব্যবিলন তৈরীর সম্পূর্ণ কৃতিত্বই তার।
তবে যে কোনো সামরিক শাসকই পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষের কাছে আদর্শ নয়। কারণ তাকে অনেক ধ্বংসের বিনিময়ে নিজের রাজ্য গড়তে হয়। নেবুচাদনেজারও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। ইহুদী জাতির ইতিহাসে তাকে ঘৃণাভরে স্মরণ করা হয়। ইহুদীদের জন্য তিনি ছিলেন পাপিষ্ঠ নগরী ব্যবিলনের পাপিষ্ঠ শাসক এবং একজন অত্যাচারী রাজা। কারণ তিনি জেরুজালেমকে খুব বাজে ভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন এবং অসংখ্য ইহুদীদেরকে বন্দী হিসেবে ব্যবিলনে আটকে রেখেছিলেন।
তবে ব্যবিলন নগরীর জন্য নেবুচাদনেজার ছিলেন দেবতাতুল্য। ব্যবিলনকে তিনি দিয়েছিলেন এক মনোমুগ্ধকর রূপ। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নগরে পরিণত করেছিলেন তিনি ব্যবিলনকে। তার নির্মিত চল্লিশ ফুট লম্বা ও সর্বোচ্চ পুরুত্বের তিন স্তরবিশিষ্ট দেয়াল পুরো ব্যবিলনকে রক্ষাকবজের মতো ঘিরে রেখেছিলো। দুর্ভেদ্য এই দেয়াল ভেদ করে শত্রুর আক্রমণের বিষয়টি এক প্রকার অসম্ভবে পরিণত হয়েছিলো। তা ছাড়া সুউচ্চ টাওয়ার অফ বাবেল এবং লাপিস লাজুলি দিয়ে তৈরী উজ্জ্বল নীল রঙের প্রবেশদ্বার ইশতার গেইট ব্যবিলনের গৌরবকে বাড়িয়ে দিয়েছিলো বহু গুণ। নিজের স্ত্রীর জন্য তৈরী ৮০ ফুট উঁচু ভিতের ওপর তার নির্মিত ঝুলন্ত বাগান তো আজও প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি।
খ্রিস্টপূর্ব ৬০৫ থেকে ৫৬২ সাল পর্যন্ত ব্যবিলনে রাজত্বকারী রাজা দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার ছিলেন ধর্ম ও যাদুবিদ্যায় বিশ্বাসী। তিনি সাধু ড্যানিয়েলকে অনুসরণ করতেন এবং ড্যানিয়েলের ঈশ্বরকে বিশ্বাস করতেন।
ব্যবিলনের এই অধিপতির মৃত্যুর পরই ব্যবিলনের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়া শুরু হয় এবং খুব অল্প সময়ের মাঝেই পারস্যের আক্রোশে বিলীন হয়ে যায় ব্যবিলনীয় সভ্যতা।
রেফারেন্স: