• মুর্শিদাবাদের হাজার দুয়ারী (Hazarduari of Murshidabad) কে না চেনেন? কিন্তু ৯৯৯ টি দুয়ার বিশিষ্ট হেতমপুর রাজবাড়ি (Hetampur Rajbari) অনেকেই হয়তো দেখেনি I বর্তমান হেতমপুর রাজবাড়িতে ২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলে। সরকার যদি ঠিক মতো সংরক্ষণ করত দ্বিতীয় হাজারদুয়ারি হিসাবে বেশ ভালোই পর্যটক সমাগম হতো। 

• বাঙালির বেড়াতে যাওয়া বলতেই “দীপুদা”- অর্থ্Iৎ দিঘা, পুরী ও দার্জিলিং । Cultural বাঙালির হলে বছরে একবার শান্তিনিকেতন ।

• বুদ্ধিজীবী হলে কোপাই নদীর তীরে পাঞ্চাবি ও লম্বা চুলের আলুথালু কেশবিন্যাসে বাউলদের সঙ্গে সেলফি কিংবা ‘terra cotta’ র ভাঁড়ে চা খাওয়ার ছবি । জয়দেবের কেন্দুলী এনাদের স্বর্গস্থান এবং ‘ম’ শব্দবিশিষ্ট অনেক কিছুর প্রতি গভীর অনুরাগ ।

• অথচ শান্তিনিকেতন থেকে মাত্র ৩৫ কিমি দূরে পরে হেতমপুর I বোলপুর থেকে গেলে ইলামবাজার হয়ে দুবরাজপুরের ঠিক আগেই হেতমপুর মোড় । মেইন রোড ছেড়ে ২ কিমি গেলেই এই সুবিশাল রাজবাড়ী ।

হেতমপুর রাজবাড়ির প্রবেশ দুয়ার I The Gothic entrance of Hetampur Rajbari. The Rajbari or the Palace was constructed in 1905 by Maharaja Ram Ranjan Chackravati Bahadur. হেতমপুর রাজবাড়ির ।

• ১৯০৫ সালে রাজবাড়িটি নির্মাণ করেন মহারাজা রাম রঞ্জন চক্রবর্তী বাহাদুর (Maharaja Ram Ranjan Chackravarti Bahadur) । রাজবাড়ির কিছু দূরেই চন্দ্রনাথ শিবের মন্দির (Chandranath Shiva temple) যা নির্মাণ করেন উনার পিতা কৃষ্ণ চন্দ্র চক্রবর্তী (Maharaja Krishna Chandra Chackravarti) ১৮৪৭ সালে ।

Second Supplement to Who’s Who of India, 1914, গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে রাম রঞ্জনের জন্ম হয়েছিল ১৮ ই জানুয়ারী ১৮৫১ সালে I ১৮৬২ সালে পিতা কৃষ্ণ চন্দ্র প্রলোকগমন করলে তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে এগারো বৎসর বয়সে জমিদারিত্ব লাভ করেন ।

The gothic entrance of Hetampur Rajbari had a huge clock. হেতমপুর রাজবাড়ি I

• তাঁর পিতামহ (Grandfather of Ram Ranjan Chackravarti) বিপ্রচরণ চক্রবর্তী (Maharaja Bipracharan Chackravarti) ছিলেন এই বংশের সবচেয়ে সফল জমিদার I বিপ্রচরণের পিতা রাধানাথ চক্রবর্তী (Maharaja Radhanath Chackravarti) প্রকৃত অর্থে এই বংশের প্রথম জমিদার I

The entrance gateway from the backside. হেতমপুর রাজবাড়ির I

• ১৮৭৪ সালে বীরভূমে দেখা দেয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ I সেই দুর্ভিক্ষে রাম রঞ্জনের প্রজাহিতৈষী রূপে সন্তুষ্ট হয়ে Lord Northbrook তাঁকে রাজা(Title of ‘Raja’) উপাধিতে ভূষিত করেন ১৮৭৫ সালে I Lord Lytton প্রশাসন ১৮৭৭ সালে তাঁকে বাহাদুর(Title of ‘Bahadur’) উপাধি প্রদান করেন এবং ১৯১২ সালে তাঁকে মহারাজা (Title of ‘Maharaja’) উপাধি তে ভূষিত করা হয় I

Hetampur Rajabari. হেতমপুর রাজবাড়ি I এক সময় হেতমপুর রাজপরিবার ছিল বীরভূমের সবচেয়ে ধনী রাজপরিবার I ঝাড়খন্ড, বর্ধমান বীরভূমের বিস্তীর্ণ এলাকা ছিল এই রাজ পরিবারের অন্তর্গত I

• কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নথি (The University of Calcutta, The Calendar, 1928, Pg 484) থেকে পাওয়া যায় ১৮৯৭ সালে, ২৭শে জুন উনার সহধর্মিনী পদ্মা সুন্দরী দেবী(Padma Sundari Debi, wife of Maharaja Ram Ranjan Chackravarti) হেতমপুরে কৃষ্ণ চন্দ্র কলেজ (Krishna Chandra College) প্রতিষ্ঠা করেন I তিনি কিছু সম্পত্তিও কলেজকে প্রধান করেছিলেন যা থেকে কলেজের উপার্জন হতো বাৎসরিক ৬১০০ টাকা যা আজকের দিনের হিসাবে নেহাত মন্দ নয় I

There are 999 doors, like this in the Hetampur Rajbari. হেতমপুর রাজবাড়ির

 

Inside the Hetampur Rajabari. হেতমপুর রাজবাড়ির Iঅন্দরমহল I

 

• দান ধ্যান থেকে শুরু করে শিক্ষার প্রতি ছিল তাঁর গভীর অনুরাগ I এমন দানবীর রাজার বাল্যকালে কুপথে যাওয়ার কাহিনীও শোনা যায় I

Life of Sir William Wilson Hunter, K.C.S.I, M.A, LL.D, a Vice-President of Asiatic Royal Society by Francis Henry Skrine, 1901, Pg-96-97 নামক গ্রন্থে পাওয়া যায় বালক রাজার উশৃঙ্খলতার কাহিনী :
The wealthiest of the native houses in Birbhum was that of the Hetampur Raja. In 1864 it was represented by a boy who had not made a ward of court. He had thus fallen under Zenana influence, and was deteriorating in mind and body owing to excessive indulgence and the absence of any attempt to fit him for his future responsibilities. Hunter visited Hetampur in order to search the family archives for materials for his “Annals of Rural Bengal”, which he commenced within a few months after arriving at Suri. He at once detected the evil influences which surrounded the young chief, and his innate sense of justice rose in revolt against the apathy of the District Judge, whose duty should have prompted him to interfere.

A Palanquin at Hetampur Rajabari. হেতমপুর রাজবাড়ির I

William Hunter সাহেব এরপর কলিকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ এনে District Judge কে বাধ্য করলেন মহারাজা রাম রঞ্জনের শিক্ষার তদারকি করতে I শিক্ষা গ্রহণের জন্যে তাঁকে বেনারসে পাঠানো হল I

 রাজা রাম রঞ্জনের নাম অনুসারে হেতমপুর রাজবাড়ির আসল নাম “রঞ্জন প্যালেস” I (Ranjan Palace)

রামরঞ্জন যথেষ্ট প্রজা বৎসল ছিলেন । এটা ঠিক সাঁওতাল বিদ্রোহে এঁরা ইংরেজদের সাহায্য করেছেন । শিক্ষার প্রসারে যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল । ১৮৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে ত্রাণ কার্যে রামরঞ্জন ১৪০০০ টাকা ব্যায় করেন, প্রজাদের খাজনা মুকুব করেন ৩১,০৯০ টাকা , লঙ্গরখানা প্রতিষ্ঠা করেন টানা চার মাস ধরে। 

The other side of Hetampur Rajabari. হেতমপুর রাজবাড়ির I