হুমায়ুনকে গঙ্গায় ডুবে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন দুজন। এই দুইজনের মধ্যে একজন হয়েছিল রাজা আর একজনকে হতে হয়েছিল খুন।
  • কারা এই দুই ব্যক্তি ?
  • কি ভাবে এই দুজন দুই আলাদা প্রেক্ষাপটে হুমায়ুনের জীবন রক্ষা করেছিলেন ? সেই নিয়েই আজকের এই গল্প।

নিম্নে প্রথম চিত্রটিতে দেখা যাচ্ছে সম্রাট আকবরের মা হামিদা বানু গঙ্গা বক্ষে নৌকা করে বেনারস থেকে আগ্রা ফিরছেন। ছবিটি ১৫৯২ থেকে ১৫৯৪ সালের মধ্যে আঁকা। এঁকেছিলেন দুর্গা আর তুলসী নামক দুই শিল্পী। ছবিটি আবুল ফজলের লেখা ‘আকবরনামা ‘ গ্রন্থের একটি চিত্রপট। ছবিটিতে গঙ্গার রূপটি খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

হুমায়ুনকে গঙ্গায় ডুবে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন দুজন। এই দুইজনের মধ্যে একজন হয়েছিল রাজা আর একজনকে হতে হয়েছিল খুন। কারা এই দুই ব্যক্তি ? কি ভাবে এই দুজন দুই আলাদা প্রেক্ষাপটে হুমায়ুনের জীবন রক্ষা করেছিলেন ? সেই নিয়েই আজকের এই গল্প।

সম্রাট আকবরের মা হামিদা বানু গঙ্গা বক্ষে নৌকা করে বেনারস থেকে আগ্রা ফিরছেন। ছবিটি ১৫৯২ থেকে ১৫৯৪ সালের মধ্যে আঁকা। এঁকেছিলেন দুর্গা আর তুলসী নামক দুই শিল্পী। ছবিটি আবুল ফজলের লেখা ‘আকবরনামা ‘ গ্রন্থের একটি চিত্রপট। ছবিটিতে গঙ্গার রূপটি খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

হুমায়ুনকে গঙ্গায় ডুবে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন দুজন। এই দুইজনের মধ্যে একজন হয়েছিল রাজা আর একজনকে হতে হয়েছিল খুন। কারা এই দুই ব্যক্তি ? কি ভাবে এই দুজন দুই আলাদা প্রেক্ষাপটে হুমায়ুনের জীবন রক্ষা করেছিলেন ? সেই নিয়েই আজকের এই গল্প।

At a glance chart of the first four Mughal Emperors.

বাবর মুঘল বংশের প্রতিষ্ঠাতা। বাবর তাঁর আত্মজীবনী ‘বাবরনামা’ তে তাঁর নিজের সাঁতারের পারদর্শিতা নিয়ে বেশ গর্বই করেছিলেন । ছেচল্লিশ বছর বয়েসে তিনি মাত্র ৩৩ স্ট্রোকে গঙ্গা পার করতে পারতেন। এই রকম ওস্তাদ সাঁতারুর ছেলে হুমায়ুন কিনা প্রায় দুইবার গঙ্গায় ডুবে মরতে বসেছিলেন ? তিনি যখন গঙ্গায় ডুবে মরতে বসেছিলেন তখন দুইজনের সাহায্যে তিনি প্রাণে বাঁচেন।

বাবরের মৃত্যু হয় ১৫৩০ সালে। এর পর মুঘল বাদশা হন হুমায়ুন। কিন্তু শের শাহের কাছে প্রথমে চৌসার যুদ্ধে (১৫৩৯) ও পরে কনৌজের যুদ্ধে (১৫৪০) সালে তিনি পরাজিত হন। শের শাহ সম্রাট হন। প্রতিষ্ঠিত হয় সুর বংশ I

চৌসার যুদ্ধ (১৫৩৯)

বর্তমানে বিহারের একটি ছোট্ট শহর – নাম, চৌসা। এই শহরের ঠিক পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে গঙ্গা। গঙ্গার ঠিক উল্টো দিকে উত্তর প্রদেশ। গঙ্গা এখানে দুই রাজ্যের সীমানা নির্ধারণ করে। এখানেই গঙ্গার সঙ্গে এসে মিশেছে কর্মনাশা নদী।

এখানেই শের খান পরাজিত করেছিলেন হুমায়ুনকে। সালটা ছিল ১৫৩৯, ২৫শে জুন বুধবার। মধ্য রাতের ঠিক আগেই শের খান ঝাঁপিয়ে পরে মুঘল সৈন্যদের উপর। ঘুমন্ত মুঘল সৈন্যরা সেভাবে প্রতিরোধ করতে পারেনি। হুমায়ূন নিজেই হাতে চোট পান। পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন পথ ছিল না।

অশ্বের পিঠে গঙ্গা পেরোতে যান হুমায়ুন । তার অশ্ব কোথায় যে ভেসে গিয়েছিল তার ঠিক নেই। তিনি ভেসেই যাচ্ছিলেন। ঠিক এই সময় এক ভিস্তি এই দৃশ্য দেখে নদীতে ঝাঁপ দেয়। তার মোষের চামড়ার থলে দিয়ে হুমায়ুনকে প্রাণে বাঁচান। চামড়ার থলিতে বায়ু থাকাতে তা আঁকড়ে ধরে হুমায়ুন সাঁতার কেটে পাড়ে এসে ওঠেন। জীবন রক্ষা পায় মুঘল সম্রাটের। জীবনের এই কঠিন মুহূর্তে প্রাণে বেঁচে হুমায়ুন নিতান্ত আবেগতাড়িত হয়ে নিজামকে বলে বসেন যে তাঁকে তিনি রাজা করবেন। সেই ভিস্তির নাম ছিল নিজাম। পরে আগ্রা গিয়ে হুমায়ুনের সঙ্গে দেখা করলে হুমায়ুন নিজামকে দুদিনের জন্যে মুঘল বাদশা করেন। এই দুদিন পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল তাঁকে । (সূত্র: গুলবদন বেগমের হুমায়ুন নামা )

কনৌজের যুদ্ধে (১৫৪০)

এই ঘটনার ঠিক পরের বছর শের শাহের সঙ্গে হুমায়ুনের আবার যুদ্ধ হয়। দিনটা ছিল ১৭ই মে, সোমবার , ১৫৪০। এবার যুদ্ধ হয়েছিল কনৌজে। এবার শের শাহ দুপুরবেলায় হুমায়ুনের বাহিনীর উপর আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধেও আসে পরাজয়। হুমায়ুনকে পালাতে হয়। হাতির পিঠে এবার তিনি গঙ্গা পেরতে যান। কিন্তু গঙ্গার খাড়া ও পিচ্ছিল উঁচু পাড়ে তিনি উঠতেই পারছিলেন না। বর্ষার স্ফীত গঙ্গায় পড়ে গেলে ভয়ঙ্কর বিপদ হতে পারতো। ঠিক এই সময় সামসুদ্দিন মুহাম্মদ নামক এক জনৈক সাধারণ সৈনিক তাঁকে অতি কষ্টে পাড়ে এনে তোলেন।
কিন্তু কে এই সামসুদ্দিন মুহাম্মদ ? কি ভাবেই বা এই সামসুদ্দিন মুহাম্মদকে খুন হতে হয়েছিল ?
প্রথম জীবনে সামসুদ্দিন মোহাম্মদ ছিল এক সাধারণ চাষী। কুড়ি বছর বয়সে সামসুদ্দিন এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি হাতে চাঁদ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তার এই স্বপ্ন আক্ষরিক অর্থেই পূর্ণ হয় ।

কনৌজের যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর প্রায় পনেরো বছর হুমায়ুন পরিব্রাজক জীবন যাপন করেন । শেরশাহ সম্রাট হন । পালাতে পালাতে এক সময় হুমায়ুন সিন্ধে এসে উপস্থিত হন। এখানে এসেই তাঁর হামিদা বানুর সঙ্গে দেখা হয় । হামিদার তখন মাত্র চোদ্দ বছর বয়স । হুমায়ুন বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি সোজা নাকচ করে দেন। যাই হোক অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাকে রাজি করানো হয়। ১৫৪১ সালে সেপ্টেম্বর মাসে হামিদাকে বিয়ে করেন হুমায়ুন। এরপরে আকবরের জন্ম ১৫ই অক্টোবর , রবিবার ১৫৪২ সালে।আকবরের জন্মের পরে স্তন দাত্রী মা (Foster Mother/ Wet nurse) বা ‘আনাগা’ (Anagah is Persian for foster mother or wet nurse) হিসেবে নিয়োগ করা হয় কিছু মহিলাকে । এরই মধ্যে ছিলেন জিজী আনাগা । এই জিজী আনাগা ছিলেন সামসুদ্দিন মুহাম্মদের পত্নী ।

২৩শে জুলাই , মঙ্গলবার ১৫৫৫সালে হুমায়ুন পুনরায় দিল্লী দখল করেন। হুমায়ুন পুনরায় ক্ষমতায় এলে সামসুদ্দিন মহম্মদকে ‘আতগাহ খাঁ ‘ (Atgah Khan meaning Foster father in Persian) উপাধি প্রদান করেন । এরপর বেশিদিন বাঁচেননি হুমায়ুন। ২৬শে জানুয়ারী ১৫৫৬সালে হুমায়ুন পরলোকগমন করলেন। ১৪ই ফেব্রুয়ারী শুক্রবার ১৫৫৬ সালে আকবর সম্রাট ঘোষিত হলেন ।

আকবর সম্রাট হওয়ার প্রথম দিকে বৈরাম খাঁ ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে দাঁড়ান। একটা সময় আকবর বাধ্য হন বৈরাম খাঁ কে সরিয়ে দিতে। বৈরাম খাঁ সরে গেলে ক্ষমতার অলিন্দে চলে আসেন মহাম আনাগা, আকবরের আরেক ধাত্রী মা । ইতিহাসে এই সময়টাকেই ঐতিহাসিক ভিন্সেন্ট স্মিথ ‘Petticoat Government‘ আখ্যা দিয়েছিলেন যেখানে একজন মহিলার অঙ্গুলি হেলনে সরকার চলছিল। (সূত্র:Akbar, the Great Mogul, 1542–1605. By Vincent A. Smith) ঠিক এই সময়তেই আকবর বিশ্বস্ত আতগাহ খাঁ কে প্রধান মন্ত্রীর (Vakil) দায়িত্ব দেন ।

আর এতেই বেশ অসুবিধায় পরে যান মহাম আনাগা। একদিন দুপুরে মহাম অনাগার উৎশৃঙ্খল পুত্র আদম খান অত্যন্ত নির্দয় ভাবে আতগাহ খাঁ কে হত্যা করেন (১৬ই মে , শনিবার ,১৫৬২) । সম্রাট আকবর তখন বিশ্রাম করছিলেন। আকবরের কাছে খবরটা পৌঁছাতেই আকবর রাগে উন্মত্ত হয়ে এক প্রকান্ড মুষ্টিঘাতে আদম খানকে অজ্ঞান করে ফেলেন। তারই নির্দেশে আগ্রার দুর্গ থেকে নিক্ষেপ করা হয় আদম খানকে। অবশ্য প্রথমবার নিক্ষেপ করার পরও বেঁচে ছিলেন তাই আবার দ্বিতীয়বার নিক্ষেপ করা হয়। (ছবি দেখুন ) আতগাহ খাঁ এর পুত্র মির্জা আজিজ খোকা ( Koka means Foster brother) আকবরের সময় উচ্চ পদে আসীন ছিলেন । আতগাহ খাঁ এর পুত্র আজিজ সম্বন্ধে আকবর বলতেন ,” আজিজের সঙ্গে আমি মাতৃ দুগ্ধের বন্ধনে আবদ্ধ “I

প্রসঙ্গত , আকবর জীবনে দুইবার মস্তক মুণ্ডন করেছিলেন। একবার তাঁর নিজের মা হামিদা বানুর মৃত্যুতে ও আরেকবার আজিজের মা অর্থাৎ তাঁর পালক মা জিজী আনাগাহের মৃত্যুতে। আজিজের এক কন্যার সঙ্গে জাহাঙ্গীরের বড় ছেলে খসরু মির্জার বিবাহ হয় । তাঁদের পুত্রের নাম দাওয়ার বক্স। আজিজ খোকার আরেক কন্যার সঙ্গে আকবরের ছেলে মুরাদের বিবাহ হয়েছিল। কি করে বা কেন দাওয়ার বক্স মারা গিয়েছিলেন সে অবশ্য অন্য গল্প ।

আতগাহ খাঁ এর হত্যাকারী আদম খানকে আকবরের নির্দেশে উপর থেকে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছিল আগ্রার দুর্গে।

 

আতগাহ খাঁ এর হত্যাকারী আদম খানকে আকবরের নির্দেশে উপর থেকে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছিল আগ্রার দুর্গে।

 

সম্রাট আকবরের নির্দেশে আদম খাঁ নিক্ষেপিত হচ্ছেন I Disclaimer: All the photos have been downloaded from Internet. Respective owner’s copyright fully reserved. The photos are used here to propagate knowledge.