মেহেদী হাসান খান ১৮ বছর বয়সের মেহেদী হাসান খান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হলেন,কিন্তু পড়াশোনায় তার মন নাই! কিন্তু কেন? তিনি নাওয়া- খাওয়া, পড়াশোনা বাদ দিয়ে একটা ছোট্ট কম্পিউটার সম্বল করে বাংলা ভাষায় লেখার জন্য লড়াই শুরু করলেন। একটাই জেদ, বাংলা ভাষাকে সারা পৃথিবীর কাছে পৌঁছে দিতে হবে। সেই সময় কম্পিউটারে বাংলা লিখতে খুব অসুবিধা হতো। তিনি এমন একটা সফটওয়্যার চাচ্ছিলেন, যাতে করে ইংরেজি অক্ষরে টাইপ করেই বাংলা লেখা যাবে। শিক্ষকরা বলেছিলেন, তোমার মেডিকেল কলেজে পড়া ছেড়ে দেওয়া উচিত! ডাক্তারি পড়াটা ঠিকঠাক মতো করার জন্য বন্ধুরাও তাঁকে বুঝাতো, কিন্তু তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়, কম্পিউটারে বাংলা ভাষাকে সহজভাবে লেখার জন্য তিনি সবকিছু ছাড়তে রাজি ছিলেন। বাঙালির নিজের ভাষার প্রতি টান কোন নতুন ঘটনা নয়, অতীতে বাংলা ভাষার জন্য এদেশের ছেলেরা প্রাণ পর্যন্ত দিয়েছেন, তার শরীরেও তো বাঙালির রক্ত! তাহলে তিনি পারবেন না কেন? এই একরোখা ভাব বহাল রেখে তিনি তার কাজ চালিয়ে গেলেন। না…, তিনি হেরে যাননি, হাজার রকমের অসুবিধা সত্ত্বেও তিনি ‘অভ্র’ আবিষ্কারের সাথে সাথে কৃতিত্বের সাথে ডাক্তারিও পাশ করেছেন। বিদেশীরা আজ তাদের ভাষাতেই লিখতে পারছে আমাদের বাংলা ভাষা। যেদিন তিনি তাঁর আবিষ্কার ‘অভ্র’ সফটওয়্যার…, বিশ্বের দরবারে হাজির করলেন…, দিনটি ছিলো ২০০৩ সালের ২৬শে মার্চ। এটি শুধু মেহেদীর জীবনে নয়, এটি লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালির জীবনের একটি বিশেষ দিন। তিনি ইউনোকোড ও এএনএসআই সমর্থিত বাংলা লেখার বিনামূল্যের ও মুক্ত সফটওয়্যার অভ্র কী- বোর্ড তৈরি করলেন। অভ্র সম্পূর্ণভাবে ইউনিকোড উপযোগী, যা ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের সাহায্যে ২০০৩ সালের ১৪ই জুন স্বীকৃত হয়। আজ ভারত ও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি দপ্তরেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘ অভ্র কিপ্যাড’। তিনি তাঁর সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ও ওমিক্রনল্যাব প্রতিষ্ঠা করেন। ওমিক্রমনল্যাব থেকে অভ্র উন্মুক্ত করা হয় ২০০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে অভ্র ব্যবহার করে। এটি আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাঙালীদের সবচেয়ে পছন্দের বাংলা রাইটিং সফটওয়্যার। আজ বাঙ্গালীর কম্পিউটার, ল্যাপটপ খুললেই স্ক্রীনে একটি শ্লোগান ভেসে উঠে, ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত’। এটি ডাক্তার মেহেদী খানের তৈরি করা শ্লোগান। তাঁর স্বপ্ন ছিলো, ভাষাকে উন্মুক্ত করতে হবে সবার জন্য, বেঁধে রাখা যাবে না জটিলতার নাগপাশে। ৩৫ বছর বয়সি এই প্রচার বিমুখ বিনয়ী তরুণটি বাংলা ভাষার জন্য এতো বড় একটা অবদান রাখলেও রয়ে গেলেন প্রচারের বাইরে। ২০১১ সালে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে বেসিস পুরস্কার দেয়া হয়।
মেহেদী হাসান খান
